বাঙ্গালী
Monday 25th of November 2024
0
نفر 0

পোপ ও ইয়েমেনের মানুষ হত্যাকারীরা

পোপ ও ইয়েমেনের মানুষ হত্যাকারীরা

মুসলিম বিশ্বে বিভেদ সৃষ্টিকারী কোন পরিকল্পনায় ভূমিকা রাখার মত বিষয় ভ্যাটিকান ও পোপের ক্ষেত্রে আদৌ মানানশীল নয়। খ্রিষ্টান সম্প্রদায় এতে যেভাবেই ভূমিকা রাখুক না কেন এর মাধ্যমে তারা নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনবে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): পোপে’র সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে হতভম্ব গোটা মুসলিম বিশ্ব। ইয়েমেনের অসহায় জনগণের বিরুদ্ধে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নির্মম নৃসংশতাকে ঢেকে দিতেই পোপ এ দু’দেশ দেশ সফর করছেন বলে বিশ্লেষণ করছে বিশেষজ্ঞরা। যেখানে তিনি ‘দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।

দৈনিক জমহুরি ইসলামি’র প্রধান শিরোনামে বলা হয়েছে; ক্যাথোলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় কোন ব্যক্তিত্বের পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলীয় এলাকায় এটিই প্রথম সফর। সৌদি আরব ও ইউএই’র বিভিন্ন অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে যদি সামান্যও চিন্তা করতেন তবে তিনি আদৌ ঐ দু’দেশে সফর করতেন না। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে। এ সফরের মাধ্যমে মূলতঃ তিনি ঐ দু’দেশের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করছেন।

বাস্তবতা হল, সৌদি আরব ও ইউএএই’র বিভিন্ন অপরাধজনিত কর্মকাণ্ডের বিষয়টি কারও অজানা নয়। ফলে সাম্প্রতিককালে পোপের ঐ দু’দেশে সফর মূলতঃ তাদের প্রতি সমর্থন বলে বিবেচিত হচ্ছে।

১. বিগত ৭ বছরে লাগামহীন বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি, তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ ও সমৃদ্ধকরণ এবং তাদেরকে সুসংগঠিত করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অরাজকতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সৌদি আরব ও ইউএই। লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, লেবানন এমনকি মিসর ও আফগানিস্তানেও নিজেদের পোষ্যদেরকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সহিংসকর্ম অব্যাহত রেখেছে দেশ দু’টি।

পশ্চিমা-হিব্রু-আরব অক্ষের জঘন্ন কর্মকাণ্ডের বহু গোপন নথি প্রকাশ হওয়ার ফলে স্বয়ং পশ্চিমা বিশ্বের অনেক সনামধন্য রাজনীতিবিদ ও প্রচারমাধ্যমও ঘৃণিত আরব ও সন্ত্রাসীদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং তাদের থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের কার্যক্রম থেকে সম্পূর্ণরূপে নিজেদেরকে পৃথক করে নিয়েছেন। যদিও একসময় তারা তাদের ঘোর সমর্থক ছিলেন।

পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের ও গণমাধ্যমগুলোর সৌদি আরবকে ‘সন্ত্রাসের জনক’ বলা, দূর্নামের অধিকারী ও ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী এ সকল সরকারকে কুখ্যাত বলে আখ্যায়িত করে পশ্চিমা সরকারগুলোকে তাদের থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে দেয়া, ঘটনাচক্রে ঘটা কোন ঘটনা নয়। এটা যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য নয় যে, অন্যান্য আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সাথে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে এ দু’দেশের শত্রুতার চরম পর্যায়ের এমন সময়ে পোপ হঠাৎ এ দু’দেশ সফরের সিদ্ধান্ত নেবেন এবং ধর্মীয় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে শক্তিশালী করার বাহানায় সৌদি ও আমিরাতের মত দেশের অপরাধকর্ম ঢাকার ন্যাক্কারজনক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

ঐ দেশগুলোর সরকার এতটাই লাঞ্ছিত হয়েছে যে, স্বয়ং পোপও নিজের সফর এবং ঐ সরকারগুলোর জালিম, যুদ্ধবাজ ও দূর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করে তাদেরকে রক্ষা, শক্তিশালী করা বা পরিবেশকে তাদের স্বার্থে শান্ত করতে যে সক্ষম হবেন না তা বলার অবকাশ রাখে না।

২. পোপ তার এ সফরের প্রাক্কালে ইয়েমেন যুদ্ধের পরিণতি এবং বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি ইয়েমেনের মজলুম জনতাকে এ শোচণীয় অবস্থা থেকে বের করে আনার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি সাহায্যের আহবান জানিয়েছেন।

পোপের মন্তব্য থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তিনি ইয়েমেনে বিদ্যমান শোচণীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত।

তিনি জানেন যে, ইয়েমেনের অসহায় জনগণের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ৪ বছরের আগ্রাসন দেশটির সাধারণ মানুষকে কি পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। স্থল, জল ও আকাশ পথে তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ এবং দেশটির দূর্ভিক্ষ কবলিত জনগণের কাছে খাদ্য ও ঔষধ প্রেরণে বাধা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতি নিয়ত অমানবিক আগ্রাসনের কারণে দেশটির নিরাপরাধ মানুষগুলো কি কষ্টের মাঝে দিনাতিপাত করছে। আর তাই যুদ্ধাপরাধী এ সকল দেশের প্রতি পোপের সমর্থন প্রকাশের কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না বিশ্লেষকরা।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ইয়েমেনের প্রায় ২০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকট ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এর পাশাপাশি কলেরা, টাইফয়েড ও ডিপথেরিয়ার মত সংক্রামক রোগ তাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত গতিতে এবং প্রতিনিয়ত এ সকল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে কেউ না কেউ।

এখানে প্রশ্ন হল, পোপের এ সফর, মার্কিন সহযোগিতায় সৌদি জোটের এ অমনাবিক আগ্রাসনের উপর কি পর্দা দিতে সক্ষম হবে?

৩. ট্রাম্পের আমেরিকা উস্কানি এবং জায়নবাদীদেরকে ব্যবহার করে ইরানভীতি প্রসার এবং আরব দেশগুলোকে ইরানের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে সোচ্চার। ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরের সময় আরব ও ইসলামি ৫৪টি দেশ নিয়ে ইরান বিরোধী জোট গঠনের ঘোষণার মাধ্যমে প্রথম পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ঐ জোটের স্থায়িত্ব কয়েক ঘন্টাও ছিল না। কাতারের ফাঁস করে দেয়া তথ্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, গুরুত্বপূর্ণ কোন দেশই এ জোট গঠনের নেপথ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত ছিল না।

আমেরিকা, জায়নবাদ ও জোর করে জনগণের মাথার উপরে চেপে থাকা আরব সরকারগুলোর ত্রিমুখি জোট, ভেস্তে যাওয়া ঐ পরিকল্পনাকে পূনরায় বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছে পোল্যান্ডে সম্মেলনের আয়োজনের মাধ্যমে এবং বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ স্বৈরাচারী সরকার প্রধানদের বক্তব্যের মাধ্যমে ইরান বিরোধী বিষবাস্প ছড়িয়ে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তারা।

এমন ঘোলাটে পরিবেশের মধ্যে পোপের এ সফর অর্থবহ এবং অবাক করার মত। মুসলিম বিশ্বে বিভেদ সৃষ্টিকারী কোন পরিকল্পনায় ভূমিকা রাখার মত বিষয় ভ্যাটিকান ও পোপের ক্ষেত্রে আদৌ মানানশীল নয়। খ্রিষ্টান সম্প্রদায় এতে যেভাবেই ভূমিকা রাখুক না কেন সেটা হবে তাদের নিজেদের ক্ষতি। কারণ আজ না হোক কাল এ সকল নাটের গুরুদের পরিবর্তন হবে, এমনকি অত্যাচারী এ সকল সরকারের পরিবর্তন ঘটবে। তখন পোপের এ পদক্ষেপ ভ্যাটিকান, পোপ এবং খ্রিষ্টান ধর্ম সম্পর্কে যে তিক্ত স্মৃতি মুসলমানদের মনে অঙ্কন করবে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে নিঃসন্দেহে; যা ভ্যাটিকানের বিপক্ষেই যাবে।#

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মার্কিন মিত্ররাই সিরিয়ায় ...
তুরস্কে ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি খুন
নিউ ইয়র্কে এবার ছুরিকাঘাতে ...
যশোরে ইমাম বাকির (আ.) এর ...
ফিলিস্তিন ও যায়নবাদ প্রসঙ্গ : ...
‘মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা.)’ মুভি ...
শিশু নীরব হত্যা মামলার প্রধান ...
স্কুলে হিজাব পরায় মার্কিন মুসলিম ...
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ...
আয়াতুল্লাহ জাকজাকি বেঁচে আছেন ...

 
user comment