আবনা ডেস্ক: সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আয যুবায়ের সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেছেন। ইরাক ও সিরিয়ায় নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন সৌদি সরকার এসব অভিযোগ তুলছে।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশা টিভি'র সহযোগী আরবি ভাষার নিউজ চ্যানেল 'রুসিয়া আল-ইয়াওম’কে দেয়া সাক্ষাতকারে দাবি করেছেন, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ব্রিগেড মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থন যোগাচ্ছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরাক ও সিরিয়ায় সাধারণ মানুষ হত্যায় নিয়োজিত উগ্র দায়েশ সন্ত্রাসীদের প্রতি সৌদি আরবের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তার বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ইরাক ও সিরিয়ার জনগণের পক্ষে যুদ্ধ করছে এবং বিশ্বের অন্যান্য স্থানে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ইরান সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কে বিশ্বাসী নয় এবং আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। ইরানের এ নীতি মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে না বলে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য সৌদি কর্মকর্তারা প্রায়ই ইরানের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ করে থাকেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, রিয়াদের তেহরান বিরোধী অবস্থান এবং দায়েশ সন্ত্রাসীদের প্রতি সৌদি সমর্থনের কারণেই মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে এবং এ ভাবে তারা ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করছে।
ইরান সবসময়ই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়ে আসছে যাতে মধ্যপ্রাচ্যে ও পূর্ব এশিয়ায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। মূল বিষয় হচ্ছে ইরাক ও সিরিয়া সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই ইরান এ দুই দেশে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার জন্য সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে। ইসলামিক দেশ হিসেবে পাশ্চাত্য ও ইসরাইলের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় ইরাক ও সিরিয়াকে রক্ষা করাকে ইরান তার দায়িত্ব মনে করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব তেল বিক্রি বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয় করে মধ্যপ্রাচ্যে যে সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তুলেছে তার ফলে ইরানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সারা বিশ্বে সৌদি আরবের অর্থ সহায়তায় যেসব মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে সেগুলোর মাধ্যমে উগ্র ওহাবি সালাফি মতবাদের প্রসার ঘটানো হচ্ছে এবং সেখান থেকেই উগ্র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ছড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে আল কায়দা, তালেবান, দায়েশ, আন্ নুসরা ফ্রন্ট প্রভৃতি নানা নামে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নেতারা এসব সৌদি ওহাবি মাদ্রাসাগুলো থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে বেড়ে উঠেছে।
ধর্মের নামে গড়ে ওঠা এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোই তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা চালাচ্ছে। সৌদি সমর্থনপুষ্ট এসব সন্ত্রাসীরা ইসলামের শান্তিকামী চেহারাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। একই সঙ্গে রিয়াদ সারা বিশ্বে জাতিগত বিভেদও ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হচ্ছে ইরাক পরিস্থিতি। সৌদি আরব ইরাকের রাজনৈতিক দলগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়ে দেশটিকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে যা কিনা সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের নীতির বিরোধী। সৌদি আরব জাতিগুলোর স্বার্থ রক্ষার কথা বলছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলছে অথচ তাদের কর্মকাণ্ড ও আচরণে ঠিক এর উল্টো চিত্রই ফুটে উঠেছে। কারণ দখলদার ইসরাইল ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন দিয়ে রিয়াদ মধ্যপ্রাচ্যে ফেতনা ছড়াচ্ছে। সহিংসতা ও বর্ণবাদ ইসরাইল ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অভিন্ন নীতি। এদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সৌদি আরব সমগ্র মুসলিম বিশ্বে জুলুম চাপিয়ে দিয়েছে এবং রিয়াদের এ নীতি মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কোনো ভূমিকা রাখবে না।#