আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা আবনার রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রস্তুতকৃত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপের তালিকায় জিবহাতুন নুসরা’র নাম থাকলেও সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত সন্ত্রাসী তালিকায় নাম নেই এ গ্রুপের কমান্ডার ‘আবু মুহাম্মাদ আল-জুলানী’র নাম। অথচ ২০১৩ সালে ওয়াশিংটনের সন্ত্রাসী তালিকার শুরুর দিকেই নাম ছিল আল-জুলানী’র এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দেয়ার জন্য ৭০ লাখ ডলার অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র খুঁজছে এমন ৫৪ জন সন্ত্রাসীর তালিকা –যার সর্বাগ্রে রয়েছে আল-কায়েদা নেতা আইমান আল-জাওয়াহেরী’র নাম- থেকে আল-জুলানী’র নাম সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আন-নুসরা’কে আল-কায়েদা থেকে পৃথক করার লক্ষ্যে চেষ্টা বাড়িয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী এ দলের নাম সন্ত্রাসী গ্রুপসমূহের তালিকা থেকে সরিয়ে দিতেই এ উদ্যোগ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক মধ্যপন্থী ইসলামি দল হিসেবে ঘোষিত ‘জিবহাতুল ইসলামি’ ও ‘জাইশুল মুজাহিদীনে’র সাথে সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে জিবহাতুন নুসরা। এ দু’টি গ্রুপ ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সরাসরি সামরিক সহযোগিতা পাবে। এর অর্থ হল, সিরিয়ার সরকার বিরোধীদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহযোগিতা পরোক্ষভাবে জিবহাতুন নুসরা সন্ত্রাসী দলের হাতেও পৌঁছাবে।
অবশ্য সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে আল-জুলানী’র নাম সরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কাতার ও সৌদি আরবের ভূমিকা অনস্বীকারযোগ্য। ‘দ্য ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এ্যান্ড দ্য লেভ্যান্ট’ (আইএসআইএল) এবং জিবহাতুন নুসরা’র মাঝে সংঘর্ষ চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর পর কাতার ও সোদি আরব যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, জিবহাতুন নুসরা একটি ‘মধ্যপন্থী’ ইসলামি দল এবং এ দলটিকে অবশ্যই সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
ইতিপূর্বে আল-জুলানী’র উপাধী এবং আল-কায়েদায় তার পদ আল-জাওয়াহেরী’র পক্ষ থেকে তাকে প্রদান করা হয়েছিল। কয়েকদিন পূর্বে খোদ জাওয়াহেরী আল-কায়েদার যে বিবৃতি পড়েছিলেন তাতে আন-নুসরাকে আল-কায়েদার শাখা সংগঠন হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছিলেন।
যু্ক্তরাষ্ট্র সরকার গতবছর ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ার সরকার বিরোধীদেরকে সামরিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কথিত মধ্যপন্থী ইসলামি আধাসামরিক দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহযোগিতা পাবে। ধারণা করা হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র খুব শিঘ্রি আন-নুসরাকেও মধ্যপন্থী ইসলামি দলগুলোর অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। যাতে যে কোন উপায়ে হোক সিরীয় বাহিনী’র অগ্রগামীতা রোধ করতে পারে।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্রের একটি বৃহত চালান সিরিয়ার উত্তর ও পূর্ব সীমান্ত দিয়ে সিরিয়া সরকার বিরোধীদের হাতে পৌঁছানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। এ অস্ত্রের সাহায্যেই বসন্তকালে সিরিয়ার রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ব্যাপক হামলা চালানোর পরিকল্পনা আটা হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা এ ফলাফলে পৌঁছেছে যে, যদি যে কোন উপায়ে সিরিয়ার সরকার বিরোধী গ্রুপগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব না হয় তবে সিরীয় বাহিনী খুব শিঘ্রিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে সরকার বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে সক্ষম হবে। আর এ উদ্দেশ্যেই সরকার বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার জোর প্রচেষ্টা চলছে। যাতে বড় বড় গ্রুপসহ ছোট ছোট গ্রুপগুলোকেও একটি বিশেষ মানদণ্ডের আওতায় ঐক্যবদ্ধ করা যায়। নিশ্চিতভাবে সিরিয়ার সরকার বিরোধী গ্রুপসমূহের অন্যতম বৃহত গ্রুপ হিসেবে এ প্রকল্পে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে জিবহাতুন নুসরা।