বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

সাম্পাঙ্গের শিয়া ও সুন্নিদের মাঝে সন্ধি / আমাদেরকে ক্ষমা করুন : সুন্নি প্রতিনিধিরা ; আমরা প্রতিশোধ চাই না : শিয়ারা

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা আবনার রিপোর্ট : ইন্দোনেশিয়ার সাম্পাঙ্গ অঞ্চলের প্রায় ৫০ জন সুন্নি গত সোমবার (২৩শে সেপ্টেম্বর) ‘সিদওয়ারজা’ শহরে অবস্থিত শিয়াদের শরণার্থী শিবিরে যেয়ে ঘরছাড়া শিয়াদের সাথে সাক্ষাত করেছেন।

সাম্পাঙ্গ অঞ্চল হতে ঘরছাড়া হওয়া শিয়ারা –বর্তমানে সিদওয়ারজা শহরে একটি শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে- সুন্নি ভাইদেরকে স্বাদরে স্বাগত জানায়। এ সাক্ষাত শেষে একটি সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করেছে।

সুন্নি সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ এতে ঘোষণা করেছেন যে, তারা শুধুমাত্র সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে এখানে আসেননি বরং শিয়াদেরকে তাদের গ্রামে ফিরিয়ে নিতে এখানে এসেছেন, যাতে শিয়া-সুন্নি একই সমাজে শান্তিপূর্ণভাবে জীবন-যাপন করতে পারে।

সুন্নি প্রতিনিধি মুজাহিদ শিয়াদের উদ্দেশ্যে বলেন : যদি আপনারা আপনাদের বাড়ীতে ফিরে যেতে চান আমরা সেটাকে মেনে নেব। আমরা পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং আমাদের আকিদাগত ভিন্নতার বিষয়টি মেনে নিতে চাই।

সুন্নি মাযহাবের অপর এক প্রতিনিধি গত মঙ্গলবার (২৪শে সেপ্টেম্বর) দৈনিক ‘জাকার্তা পোস্ট’কে জানিয়েছেন : আমরা শিয়াদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করে পূর্বের ভুলসমূহের ক্ষতিপূরণ করতে চাই। আমরা এ ঝগড়া ও সংঘর্ষ হতে ক্লান্ত। আমাদের পক্ষে এটা অসহনীয় যে, আমাদের ভাইয়ের শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন-যাপন করবে এবং আমরা হাতে হাত রেখে তা চেয়ে চেয়ে দেখবো।

শিয়া বিরোধী সহিংসতার অন্যতম এ উস্কানী দাতা উভয় পক্ষের স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি নামার প্রতি ইশারা করে বলেন : শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের মাঝে যে কোন প্রকার সহিংসতা এড়াতে এ সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে স্বাক্ষরে কোন প্রকার বাধ্যতা ও হুমকি ছিল না।

‘বুলুরান’ গ্রামের এ সুন্নি প্রতিনিধি বলেন : গ্রামের অনেক বাসিন্দাই এ চুক্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ছিল কিন্তু যাতায়াত জনিত অসুবিধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

সানিঙ্গ ওয়ার বলেন : গ্রামের সুন্নি বাসিন্দারা সর্বদাই তাদের শিয়া প্রতিবেশীদের সাথে সন্ধি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পক্ষে ছিল, কিন্তু সরকারী কর্মকর্তাদের কারণে আমাদের মধ্যকার টানাপোড়ন বৃদ্ধি পায়।

তার আরো বলেন : আমরা শিয়াদের নিকট –বিশেষভাবে নারী ও শিশুদের নিকট- তারা যে কষ্টের সম্মুখীন হয়েছে সে জন্য ক্ষমা চাই।

শিয়া ও সুন্নি প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরিত এ সন্ধি চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে : আমরা এ শত্রুতা পোষণে ক্লান্ত হয়ে উঠেছি এবং পরস্পরের পাশে আমরা শান্তিপূর্ণ জীবন চাই। আমরা চাই পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে এবং একে অপরকে ভালবাসতে, যেভাবে স্বয়ং মহানবী (স.) আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।

চুক্তি পত্রে আরো উল্লিখত হয়েছে : যদি ভবিষ্যতে শিয়া ও সুন্নিদের মাঝে কোন সমস্যা দেখা দেয় তবে সহিংসতার পথ নয় বরং শান্তিপূর্ণভাবে তা সমাধান করা হবে।

এ সন্ধি চুক্তির ভিত্তিতে উভয় পক্ষ মাদুরা অঞ্চলের বাসিন্দা হিসেবে পরস্পরের পাশে শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্ব সুলভ জীবন-যাপন করবে।

সাম্পাঙ্গ অঞ্চলের শিয়া সমাজের প্রতিনিধি আকলিল আলমিয়াল এ চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এ আপোস শুধমাত্র সাধারণ জনগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না এবং জ্ঞানী সমাজ, নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় কর্মকর্তারাও এ চুক্তির শর্ত মেনে চলবেন।

শিয়া প্রতিনিধিদের নেতা বলেন : দু’টি মাযহাবের অনুসারীদের মাঝে এ সন্ধি চুক্তিকে আমি স্বাগত জানাই। আমরা পূর্ব হতে এ বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছি এবং বর্তমানে আমরা কোন সংঘর্ষ ও প্রতিশোধ চাই না।

সুন্নি মাযহাবের প্রতিনিধি দলের প্রধান জনাব মুহাজাহারু বলেন : আমরা আশাবাদি যে, সাম্পাঙ্গ অঞ্চলের কর্মকর্তা, উভয় পক্ষের আলেম সমাজ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এ চুক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করবেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে উগ্র ওয়াহাবীরা ইন্দোনেশিয়ার সাম্পাঙ্গ অঞ্চলের শিয়াদের উপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে তাদের বসত-ভিটা ও গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করে। দীর্ঘ এ দুই বছর ঐ অঞ্চলের শিয়ারা গৃহহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপনের পর অবশেষে তারা স্বীয় বাসগৃহে ফিরতে যাচ্ছে।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

পরীক্ষার খাতায় মায়ের গল্প লিখে ...
মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ...
দানবীর হাজি মুহাম্মদ মহসিনের ...
বিশ্ব কুদস দিবস উপলক্ষে ঢাকায় ...
ইসলাম বিদ্বেষীরা শিয়া-সুন্নি ...
প্রাণভিক্ষার আলোচনা করতে ছেলেকে ...
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহযোগিতা ...
ইরানের ইসলামী বিপ্লব মুসলমান ...
ক্যামেরুনে আত্মঘাতী বোমায় নিহত ...
সৃষ্টি জগত নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে ...

 
user comment