বার্তা সংস্থা আবনা : আজ থেকে প্রায় প্রায় ৩০০ বছর আগে ওয়াহাবি মতবাদের প্রবক্তা আবদুল ওয়াহহাব নজদি সৌদ বংশের সহায়তা নিয়ে ইবনে তাইমিয়ার বিভ্রান্ত চিন্তাধারা প্রচার করতে থাকে। তার ভুল দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নজদি অলি-আওলিয়ার উসিলা দিয়ে দোয়া করা, তাদের মাজারে মানত করা ও শ্রদ্ধা জানানোসহ অলি-আওলিয়ার মাজার ও কবর জিয়ারতের মত ইসলামের মৌলিক কিছু ইবাদত এবং আচার-অনুষ্ঠানকে হারাম ও শির্ক বলে ঘোষণা করেছিল। ফলে ওয়াহাবিরা মাজার ও পবিত্র স্থানগুলো ধ্বংস করে আসছে। শুধু তাই নয় নজদি তার চিন্তাধারার বিরোধীদেরকে কাফির ও তাদেরকে হত্যা করা ওয়াজিব বলে উল্লেখ করত।
অথচ বিশ্বনবী (সা.) নিজে কবর জিয়ারত করতেন এবং বিশেষ করে তাঁর মাতা হযরত আমিনা (সালামুল্লাহি আলাইহা)’র কবর জিয়ারত করতে ছুটে যেতেন। তিনি নিজের মায়ের কবরের পাশে কাঁদতেন। (আল মুস্তাদরাক, খণ্ড-১, পৃ.৩৫৭, মদিনার ইতিহাস, ইবনে শাব্বাহ, খণ্ড-১, পৃ.১১৮) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবী (সা.) বলেছেন, “তোমরা কবর জিয়ারত কর। এই জিয়ারত তোমাদেরকে পরকালের স্মরণে মগ্ন করবে।”
ওয়াহাবিরা আলে সৌদের বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের ওপর নৃশংসভাবে গণহত্যা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করত এবং জনগণকে ওয়াহাবি মতবাদ মেনে নিতে বাধ্য করত। প্রাথমিক পর্যায়ে যখন তাদের কেন্দ্রীয় শাসন ছিল না সে সময় ওয়াহাবিরা লুটপাট ও ডাকাতির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। শহরগুলোতে লুটপাটের পর সেইসব অঞ্চলের ওপর দখলদারিত্ব ধরে রাখার ক্ষমতা তখনও তাদের ছিল না। ওয়াহাবিরা বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র মাজারে এবং কারবালায় হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) মাজারে হামলা চালিয়ে মূল্যবান অনেক সম্পদ, উপহার ও নিদর্শন লুট করেছিল।
ইসলামের পবিত্র ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ধ্বংস করে ওয়াহাবিরা শুধু মুসলিম উম্মাহর হৃদয়কেই ক্ষত-বিক্ষত করেনি, একইসঙ্গে মানব সভ্যতার অবমাননার মত জঘন্য কলঙ্কও সৃষ্টি করেছে। কারণ, প্রত্যেক জাতি ও সভ্যতাই নিজের পুরনো ঐতিহাসিক চিহ্ন ও নিদর্শনগুলোকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সংরক্ষণ করে। এ জন্য বিপুল অংকের অর্থ খরচ করে থাকে জাতিগুলো। অথচ ওয়াহাবিরা ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলোও ধ্বংস করে দিচ্ছে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মগুলো এইসব নিদর্শন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। এটা ইসলাম ও মানব সভ্যতার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
ওয়াহাবিরা অতীতেও জান্নাতুল বাকিতে হামলা চালিয়ে নিষ্পাপ ইমামদের মাজার ধ্বংস করেছিল। প্রথমবার তারা হামলা চালিয়েছিল হিজরি ১২২১ সালে (১৮০০ খ্রিস্টাব্দে)। (এ সময় হিজাজে সৌদি ওয়াহাবিদের গঠিত প্রথম বিদ্রোহী ও অবৈধ সরকারটি নির্মূল হয়েছিল তুরস্কের ওসমানিয় খেলাফতের মাধ্যমে। ) সে সময় ওয়াহাবিরা দেড় বছর ধরে মদীনাকে অবরুদ্ধ করে শহরটি দখল করতে সক্ষম হয় এবং বিশ্বনবী (সা.) পবিত্র মাজারের দামী পাথর ও সোনা-রূপাসহ মূল্যবান জিনিষগুলো লুট করে এবং জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাট চালায়। তারা পবিত্র মক্কায়ও হামলা চালিয়েছিল।
তারা ওই একই বছর কেবল বিশ্বনবী (সা.)’র মাজার ছাড়া মক্কা ও মদীনায় সব মাজার ধ্বংস করে। শ্রদ্ধার জন্য নয়, বরং জনগণের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে ও ভয়াবহ পরিণামের ভয়ে বিশ্বনবী (সা.)’র মাজার ধ্বংস করার সাহস তারা করেনি। ওয়াহাবিরা মক্কা ও মদিনার কাজি বা বিচারকদের অপসারণ করে সেখানে নিজেদের কাজি নিয়োগ করে। নবনিযুক্ত ওয়াহাবি কাজি বিশ্বনবী (সা.)’র মাজার বা কবর জিয়ারত থেকে জনগণকে বিরত রাখার চেষ্টা করতেন। মক্কা ও মদিনার জনগণকে জোর করে ওয়াহাবি মতবাদ মেনে নিতে বাধ্য করেছিল ওয়াহাবিরা।
ধর্মপ্রাণ সুন্নি ও শিয়া মুসলমানরা অর্থ ব্যয় করে আবারও জান্নাতুল বাকির মাজারগুলো পুনর্নির্মাণ করেন। কিন্তু ওয়াহাবিরা দ্বিতীয়বার মক্কা দখলের পর পর ১৩৪৪ বা ১৩৪৫ হিজরিতে তথা ১৯২৫ সালে মদীনা অবরোধ করে এবং প্রতিরোধাকামীদের পরাজিত করে এই পবিত্র শহর দখল করে। ওসমানিয় পুলিশদের শহরের বাইরে হটিয়ে দিয়ে এবারও তারা জান্নাতুল বাকিতে অবস্থিত নবী (সা.)- পরিবারের নিষ্পাপ ইমামদের মাজারসহ সব মাজার ধ্বংস করে এবং লুটপাট চালায়। মুসলমানরা এই দিনটিকে ইয়াওমুল আলহাদাম বা ধ্বংসের দিন বলে অভিহিত করেছেন।
ওয়াহাবিরা এখানে বিশ্বনবী (সা.)’র পিতা হযরত আবদুল্লাহ (আ.), পুত্র ইব্রাহিম (আ.), মুমিনদের নেতা আলী (আ.)’র স্ত্রী উম্মুল বানিন প্রমুখের মাজারও ধ্বংস করে। এ ছাড়াও তারা মদীনায় ওহুদ পাহাড়ের মসজিদসহ এখানে বিশ্বনবী (সা.)’