তিন কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত সুদানের জনগণ গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর থেকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ করে আসছে।
আবনা ডেস্কঃ সুদানের পদত্যাগকারী প্রেসিডেন্ট ওমর আল বাশির ১৯৮৯ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সাদেক আল মাহদিকে হটিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। গত তিন দশক ধরে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই তারও ক্ষমতার অবসান ঘটবে বলে মনে করা হত।
তিন কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত সুদানের জনগণ গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর থেকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ করে আসছে। পদত্যাগকারী প্রেসিডেন্ট ওমর আল বাশির ব্যাপক চেষ্টা করেও বিক্ষোভের আগুন নেভাতে পারেননি। তিনি ১৯৮৯ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকে সুদানে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট চলে আসছে এবং শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। বিশেষ করে প্রধান খাদ্য রুটিসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, দেশ পরিচালনায় অযোগ্যতা, দুর্নীতি প্রভৃতি কারণে জনমনে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছিল। সুদানে খাদ্যের মূল্য ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে সরকারের এক হিসাব অনুযায়ী ৬৯ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে। এ অবস্থায় বিক্ষোভকারী জনতা 'ক্ষুধা নয়' 'মূল্য বৃদ্ধি নয়' শ্লোগান দিয়েছে। এটা গেল অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ওমর আল বাশির ভুল নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছিলেন যা ছিল জনগণের ক্ষোভের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া, গত তিন দশকে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকা এবং রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর তৎপরতা বন্ধ করে দেয়ার কারণেও ওমর আল বাশিরের প্রতি জনগণ ক্ষুব্ধ ছিল।
কয়েক মাস ধরে চলা প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগকারী ওমর আল-বাশির আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনগণের দাবি দাওয়ার প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে উল্টো ২০১৫ সালে ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবরে সঙ্গে যোগ দেন। তিনি ভেবেছিলেন ইয়েমেন যুদ্ধে অংশ নিয়ে সৌদি আরবের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে কিছুটা হলেও জনগণের অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান করতে পারবেন। কিন্তু তার চিন্তা ছিল সম্পূর্ণ ভুল। কারণ সৌদি আরবের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে তিনি যেমন জনগণের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেননি তেমনি ইয়েমেনে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ায় জনগণ সৌদি আরবের প্রতি অসন্তুষ্ট। সব মিলিয়ে ওমর আল বাশিরের বিরুদ্ধে জনগণ ফুসে ওঠে।
এ বিক্ষোভের প্রতি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আমেরিকা ও দখলদার ইসরাইলের সমর্থন ছিল। কারণ ওমর আল বাশির সৌদি অর্থসহায়তার ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছিল এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি দেরিতে হলেও কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার এবং সিরিয়ার সঙ্গে ফের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, আমেরিকা ও ইসরাইল ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন দিয়েছিল যা কিনা পরিবর্তীতে সুদানের অর্থনৈতিক সংকটে ভূমিকা রেখেছিল। কারণ সুদানের তেলের খনির ৭৫ শতাংশই ছিল খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ সুদানে। দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়ে যাওয়ায় তেল থেকে অর্জিত আয় থেকে বঞ্চিত হয় খার্তুম।
যাইহোক, সুদানের ক্ষমতা বর্তমানে সেনাবাহিনীর হাতে এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শ চলছে। অন্যদিকে জনগণ যত দ্রুত সম্ভব বেসামরিক প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছে।#