মিশরের ‘আল-আযহার’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ‘এসাম আল-এমাদ’ ইরানের হামেদান শহরের প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘কুরআন বিষয়ক চিন্তা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ওয়াহাবীদের চিন্তাধারা ও তাদের আকিদা সম্পর্কে বলেন : ওয়াহাবী ও শিয়াদের মাঝে সবচেয়ে বড় পার্থক্য আমিরুল মু’মিনীন (আ.) এর বিষয়ে। আর এ বিষয়টি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অব্যাহত রয়েছে। আমি হযরত আলী (আ.) এর জীবনী’র উপর অনেক গবেষণার পর নিজের আকিদা পরিবর্তন করে শিয়া হয়েছি।
তিনি ওয়াহাবী মাযহাবের উত্পত্তির কথা উল্লেখ করে বলেন : আমি বিশ্বাস করি যে, যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন ওয়াহাবীদের পৃষ্ঠপোষক, আর ওয়াহাবীদের সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেদের পথ হারিয়ে ফেলেছে।
তিনি বলেন : ওয়াহাবীদের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে তারা কোনভাবেই আহলে বাইত (আ.) কে মানে না এবং যে ব্যক্তি আহলে বাইত (আ.) এর প্রতি ভালবাসা পোষণ করে তাকে ওয়াহাবী মাযহাব হতে প্রত্যাখ্যান করা হয়।
তিনি নিজের ওয়াহাবী চিন্তাধারার অধিকারী পরিবারের বিষয়ে বলেন : ওয়াহাবী মাযহাব সম্পর্কে তাদের ধারণার পরিবর্তন আনার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমি সফল হইনি।
তিনি বলেন : জাগরণের অর্থ হল, জাগ্রত হওয়ার পূর্বে ও পরের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসা। সৌদি আরব, বাহরাইন ও ইয়েমেনে যে জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে তার মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজের মাঝে সংহতির জন্ম নিয়েছে।
ওয়াহাবীদের সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে শব্দের ভুল ব্যাখ্যা করা –একথা উল্লেখ করে জনাব এসাম বলেন : ভুল ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের মূল অর্থকে পরিপূর্ণরূপে উল্টো করে দেওয়া সম্ভব, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের সমস্যাই ছিল এটাই যে, তিনি পবিত্র কুরআনকে আরবি অভিধানের ভিত্তিতে অর্থ করতো, পবিত্র কুরআনের অভিধানের ভিত্তিতে নয়। আর খাওয়ারেজরা পবিত্র কুরআনের তাফসির করতে গিয়ে যে, ভুলের শিকার হয়েছিল, সেও একই ভুলের শিকার।
তিনি বলেন : পবিত্র মাজারসমূহ ও আহলে বাইত (আ.) এর মাজারসমূহকে ওসিলা বানানোর বিষয়টি শিরক –এ শীর্ষক যে আকিদা ওয়াহাবীরা পোষণ করে তা হচ্ছে ওয়াহাবীদের ভুল তাফসিরেরই ফল। কেননা শত্রুরা চাইতো শিয়াদের জন্য বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে। এ বিষয়ে ওয়াহাবীরা বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের গ্রন্থসমূহে আল্লাহ্ পরিচিতির পরিবর্তে কবর পরিচিতিতে পৌঁছেছে। আমি শিয়া হওয়ার পূর্বে এ বিষয়ে অন্যদের সাথে এত বেশী আলোচনা করেছি যে, এক সময় বুঝতে পারলাম মানসিক সমস্যার দিকে অগ্রসর হচ্ছি এবং আমরা ইসলামি আকিদা হতে দূরে সরে কবরের বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছি।
তিনি আরো বলেন : ওয়াহাবী মাযহাবে পবিত্র কুরআনের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়, কিন্তু তার গভীরতা ও বিভিন্ন অর্থের প্রতি আদৌ গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন : শেইখ মুফিদ [রহ.] রচিত আহলে বাইত (আ.) গণের সম্পর্কে একটি বই আমাকে দিয়ে এর বিশ্লেষণ ও সমালোচনা করে একটি লেখা প্রস্তুত করতে বলা হয়। তারা বিশ্বাস করতো যে, এ গ্রন্থের সমালোচনা লেখার মাধ্যমে শিয়া মাযহাব ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু এ গ্রন্থটি পড়ার পর আমি শিয়া হয়েছি।
তিনি বলেন : আমার শিয়া হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, শিয়া মাযহাব ইসলামের সবচেয়ে গভীরতম স্থান হতে উত্সারিত।
source : http://www.abna.ir/