বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

ইসলামে পারিবারিক বিকাশের কথা

ইসলাম পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রের মতো পারিবারিক ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মানবজাতির প্রাথমিক ভিত্তি হলো তার পরিবার। পরিবার থেকেই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সমাজ, অতঃপর অর্থনৈতিক লেনদেন, সেখান থেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সুত্রপাত। এভাবে মানবজাতির বিকাশ, সমাজ সভ্যতার সৃষ্টি, সংস্কৃতিবোধের উন্মেষ। যে জাতির পারিবারিক বন্ধন যত দৃঢ় সে সমাজ ততই উন্নত ও শক্তিশালী। পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন মুসলিম সমাজে তার সব কিছুই বিদ্যমান রয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর এই পারিবারিক সুদৃঢ় বন্ধনের ওপর ঈর্ষান্বিত হয়ে পাশ্চাত্য সমাজ মুসলিম পারিবারিক বন্ধনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নানা রকম অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো আজকের পাশ্চাত্য সমাজে পারিবারিক বিকাশের পরিবর্তে তাদের পরিবার প্রথা ভেঙে পারিবারিক অশান্তি বিরাজ করছে। পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নিয়ে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত পাশ্চাত্য। তাদের পরিবারে ছোট-ছোট শিশুদের লালনপালন নিয়ে সমস্যা, বয়স্ক লোকদের ভরণ-পোষণ নিয়ে সমস্যা, কর্মহীন লোকদের নিয়ে সমস্যা। কারণ পাশ্চাত্য দর্শনে গঠিত সমাজে বয়স্ক লোকদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় যখন সে কর্মহীন হয়ে পড়ে, তখন তার ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম, আর শিশুদের লালনপালনে সমস্যা, কারণ স্বামী-স্ত্রী ভিন্ন ভিন্ন স্হানে বসবাস করে প্রয়োজনে একত্রে মিলিত হয়। প্রত্যেকেই নিজ চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। এ কারণে কে দায়িত্ব নেবে সন্তানের, অবশেষে সন্তানের ঠিকানা হয় বেবি হোমে। এভাবে বৃদ্ধরা যেমন জীবন সায়াহ্নে এসে বিড়ম্বনার শিকার হন, তেমনি শিশুরা মা-বাবার সান্নিধ্য না পাওয়ার কারণে, তাদের আদর-সোহাগ না পাওয়ার কারণে, তাদের মধ্যে এক প্রকার দয়া-মায়াহীনতা, মা-বাবার প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়। এই শিশুরা বড় হয়ে তাদের মা-বাবার খোঁজ নেয় না। তারা যে কোনো মুল্যে সম্পদ অর্জন কর এবং ভোগ কর নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে।

ইসলামী সমাজে পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব, তাদের পারস্পরিক আচার-আচরণ, সন্তানের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিধৃত হয়েছে। কারো দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ইসলামে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব, স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য, শিশু জন্ম হলে তার প্রতি পিতা-মাতার করণীয় সব কিছু নিখুঁতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সন্তান লালনপালনে কষ্টের কারণে ইসলামে তাদের মর্যাদা এত বেশি দেয়া হয়েছে যে, ইসলামে আল্লাহতায়ালার ইবাদতের পরে পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনকে আবশ্যক করে দিয়েছে। মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত ঘোষণা করা হয়েছে। পিতা-মাতার প্রতি সুন্দর আচরণ করা, তাদের কোনো ধরনের কষ্ট না দেয়া, তাদের সামনে নিজেকে তুচ্ছ করার চাদর বিছিয়ে দেয়া, কোনো কারণে তারা উহ-আহ্ করতে পারে এ ধরনের আচরণকে সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এমনকি তারা যখন বৃদ্ধ হয় তখন তাদের সেবার মাধ্যমে জান্নাত লাভ করতে না পারাকে চরম ব্যর্থতা বলা হয়েছে। রাসুল সা. বলেছেন-যে ব্যক্তি পিতা-মাতার যে কোনো একজনকে অথবা উভয়কে বৃদ্ধ অবস্হায় পেল, অথচ সে জান্নাত লাভ করতে পারল না তাদের নাক ধুলিময় হোক।সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার হক সম্পর্কে রাসুল সা. যে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন তার কোনো তুলনা হয় না। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন-জনৈক সাহাবী রাসুল সা.-কে জিজ্ঞাসা করেন-ইয়া রাসুলাল্লাহ আমার নিকট সুন্দর ব্যবহার পাওয়ার কে বেশি হকদার? তিনি বললেন-তোমার মা, অতঃপর তিন তিন বার একই উত্তর দিলেন, চতুর্থবার বললেন তোমার বাবা।মুহাদ্দিসিনে কেরাম লিখেন মা-বাবার মধ্যে সন্তানের কাছ থেকে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে মা বাবার চেয়ে তিনগুণ বেশি অধিকার রাখেন। কারণ মাই সন্তানকে লালনপালন, ভরণ-পোষণ করার যাবতীয় কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। এখন সন্তান যদি বেবি হোমে বড় হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে মা সন্তানের কাছ থেকে কতটুকু সেবা দাবি করতে পারেন। যেই মা সন্তানের জন্য তার সামান্য সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করতে পারল না, যে মা আদর্শ সন্তান গঠনের চেয়ে নিজের সাময়িক চাহিদা পুরণকেই অগ্রাধিকার দিল, সেই সন্তানের প্রতি কতটুকু অধিকার দাবি করতে পারে? একজন আদর্শ মাই তো পারেন আদর্শ জাতি গঠন করতে, আদর্শ সমাজ গঠন করতে।

বর্তমান সমাজে একক পরিবার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মুসলিম দেশগুলোও মায়া-মহব্বত হ্রাস পাচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে। বিশ্বায়ন ও শহরায়নের ফলে মানুষের মধ্যে ছোট পরিবার গঠন আমাদের কিছুটা স্বার্থপর জাতিতে পরিণত করছে। আমাদের মা-বাবারা এখনই বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়া শুরু করেছে। এটা মুসলিম জাতির জন্য চরম অধঃপতন। একবার একটি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে দেখেছি মুরুব্বিদের আহাজারী আর বেদনার চিত্র, তাদের কষ্টের কথা, তাদের অবহেলার কথা। অথচ একদিন তারাই ছিলেন পরিবারের মধ্যমণি। তাদের আয়-রোজগার দিয়েই ছেলেমেয়েরা ফুর্তি-আমোদ করে দিন কাটাতো। পাশ্চাত্যের প্রভাবে আমাদের মুসলিম সমাজের মেয়েরা স্বামীর পিতা-মাতাকে, তাদের ছোট-ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে একসঙ্গে থাকার ব্যাপারে কঠিনভাবে বিরুপ মানসিকতায় গড়ে উঠছে। ফলে পারিবারিক অশান্তি বেড়ে যাচ্ছে। ইসলামী আদর্শকে অবহেলা করার পরিণাম ফল শুভ হয় না। হচ্ছেও তাই। হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রিযিকের প্রসন্নতা কামনা করে এবং দীর্ঘায়ু ও প্রাচুর্য কামনা করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।রাসুল সা. বলেন-সেই ব্যক্তি প্রকৃত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী নয় যে ভালো ব্যবহারকারী আত্মীয়ের খোঁজ-খবর নেয়, বরং প্রকৃত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী ওই ব্যক্তি যে সম্পর্ক ছিন্নকারী আত্মীয়ের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলে।ইসলাম আত্মীয়ের হক আদায়ের ব্যাপারে যে নির্দেশনা দেয় সে ক্ষেত্রে মা-বাবার সঙ্গে কিরুপ সম্পর্ক থাকা উচিত? সবার সঙ্গে সু-সম্পর্ক রাখতে হবে। এভাবে পরিবার বিকাশ লাভ করে, সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়, পারস্পরিক হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। সুখে-দুঃখে মানুষ একে অপরকে সহযোগিতা করে, সহমর্মিতা দেখায়। আমাদের পরিবার প্রথার অন্যতম আকর্ষণীয় দিক ছিল পরিবারে দাদা-দাদি আর নানা-নানি এবং ছোট নাতি, পুতি নিয়ে এক প্রকার আনন্দময় সংসার। যৌথ পরিবারে কিছু অসুবিধা পরিলক্ষিত হলেও সুবিধাই ছিল বেশি। যৌথ পরিবারে ছেলেমেয়েদের লালনপালনে দাদা-দাদিরা খুব গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করেন। শিশুরা তাদের কাছ থেকে গল্পের ছলে অনেক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। অথচ আজকের একক পরিবারে একটি সন্তান পালন করাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

পরিবার গঠনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য প্রবৃত্তির চাহিদা নিবারণ হলেও এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বংশধারা সংরক্ষণ, স্হিতিশীল সমাজ গঠন, মানবজাতির বিকাশ এবং পুর্ণ শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা। অন্যায়-অশ্লীলতা পরিহার করা। ইসলামী সমাজ রক্ষায় আমাদের পারিবারিক বিকাশকে সঠিক আদর্শের ওপর গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শিশুকাল থেকে সন্তানদের সঠিক শিক্ষা নিয়ে গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের যেমন বেঁচে থাকতে হবে, তেমনি আমাদের বৃদ্ধদের, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার সুন্দর পথ বেছে নিতে হবে। পাশ্চাত্য যে ভুলের খেসারত দিচ্ছে আমাদের ইচ্ছে করে সে ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে। তাহলেই প্রকৃত সুন্দর পরিবার গঠন সম্ভব। সার্থপরতা আমাদের কারো জন্যই সুখকর নয়। সাময়িক সুখ লাভের আশায় দীর্ঘদিনের অশান্তি টেনে আনা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমার দেশ, ৬ জুন ২০০০৮

সুস্থ পরিবার ও সমাজ গঠনে ইসলাম

সমাজের প্রাণকেন্দ্র হল পরিবার। ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার শুধু একটি উত্তম সামাজিক প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং একটি পবিত্র সংস্থা। পরিবারের সুখ, শান্তি এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ছাড়াও রয়েছে একটি আইনগত ও সামাজিক দিক। নৈতিক চরিত্র গঠনের প্রকৃষ্ট ক্ষেত্র হল পরিবার। সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি ও বৃদ্ধি হয় পরিবারকে কেন্দ্র করে। পবিত্র আল কোরআনে পারিবারিক সদস্যদের মুহসিনীন বা প্রাচীর ঘেরা দুর্গে অবস্থানকারী সুরক্ষিত লোকজনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ইসলামে পরিবার শুধু স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পরিবারের পরিসর আরও ব্যাপক। নিকটাত্মীয়স্বজনও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, দয়া, করুণা এবং সহানুভূতি তো আছেই, বাড়তি দায়িত্বশীলতার প্রশ্নও জড়িত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা ও স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনের ওপর নির্ভর করে পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তি ও সর্বাঙ্গীণ উন্নতি; স্বামী-স্ত্রী নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে চললে পারিবারিক পরিবেশ অনেকাংশে সুখ ও শান্তিতে ভরে ওঠে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারই হল মানুষ গড়ার মূল কেন্দ্র এবং সমাজ গঠনের প্রধান ভিত্তি। এ জন্য পরিবার গড়ার ব্যাপারে ইসলাম বিশেষভাবে যত্নবান হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
আল্লাহতায়ালাদাম্পত্য জীবন গঠনের পূর্বশর্ত হিসেবে স্বামীর জন্য বিবাহের আগে স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণের জোগান দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করার কথা বলেছেন। পারিবারিক জীবনে প্রবেশ করার আগেই একজন পুরুষের উচিত তার স্ত্রীর ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভরণপোষণ করার মতো আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করা। মহান আল্লাহপাক বলেন- আর সন্তানের পিতার দায়িত্ব যথাবিধি তাদের (মা ও শিশুর) ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৩৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ·) বলেন, এ আয়াত দ্বারা এ কথা বোঝানো হয়েছে, শিশুকে স্তন্যদান মাতার দায়িত্ব, আর মাতার ভরণপোষণ ও জীবন-ধারণের অন্যান্য দায়িত্ব বহন করবে পিতা। সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, ‘মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুবছর দুধ পান করাবে।মাতা-পিতার ওপর সন্তানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট বয়সে তার জন্য আলাদা শয়নের ব্যবস্থা করা। মহানবী (সা·) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হয়, তখন তোমরা তাদের নামাজের জন্য আদেশ কর।আর দশ বছর বয়স হলে তাদের নামাজের জন্য তাগিদ দেবে এবং তাদের বিছানা আলাদা করতে দেবে।
হজরতলোকমান (·) নিজপুত্রকে যে মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে তার উল্লেখ হয়েছে এভাবে- হে বৎস নামাজ কায়েম কর, সৎ কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবুর কর। নিশ্চয়ই এটি দৃঢ়তার কাজ। (সূরা লোকমান, আয়াত-১৭)। শিশুরা নরম মাটির মতো শৈশবে যে মূল্যবোধ ও আদব আখলাকের পরিবেশে বেড়ে উঠবে, তাই পরবর্তী জীবনে স্থায়ী হয়ে যায়। এ কারণে পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। এ সময় মাতা-পিতা নিজেদের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব দিয়ে এবং ধর্মীয় নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের প্রতিপালন করবেন। হজরত দয়াল নবী (দ·) বলেছেন, পিতা-মাতার ওপর সন্তানের অন্যতম অধিকার হচ্ছে, তাকে উত্তম শিক্ষা দেয়া এবং সুন্দর একটি নাম রাখা। (বায়হাকি শরিফ)। ছোটবেলা থেকেই শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এটি মাতা-পিতার ওপর ফরজ। এই কর্তব্য পালন না করলে গুনাহগার হতে হবে এবং আখেরাতে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। হজরত মহানবী (সা·) বলেছেন, দোলনা থেকে শিক্ষা শুরু করো। তিনি মুসলিম শিশুকে দোলনায় দেখতে চেয়েছেন। অযত্ন-অবহেলায় ধুলাবালিতে নয়। আর তাকে এ বয়স থেকেই আনন্দপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে বলেছেন। শিশুকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে লালন-পালনের সঙ্গে তার মননশীলতার বিকাশও প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে অভিভাবককে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে মিথ্যা বলা, নাপাক থাকা, নামাজ না পড়া ইত্যাদি বিষয়গুলো না থাকে। এ জন্য চাই সহায়ক পরিবেশ। প্রিয়নবী (সা·) শিশুদের জ্ঞানদানের কথা বলেই ক্ষান্ত হননি, বরং তাদের সাঁতার কাটা, এমনকি তীর চালানো পর্যন্ত শিক্ষা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলাম বলেছে, তুমিআয় বুঝে ব্যয় কর। দারিদ্র্য যেমন ইসলাম কামনা করে না, অনুরূপভাবে ইসলামে বাহুল্য বর্জনের নির্দেশও রয়েছে। কারণ সীমাহীন দারিদ্র্য অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে কুফরির পথে ধাবিত করে, আবার সীমাহীন প্রাচুর্য আর অপরিকল্পিত সন্তান-সন্ততি ও পারিবারিক সদস্য বৃদ্ধি পরিবারে অশান্তি ডেকে আনে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিপথগামী করে। হজরত নূরনবী (দ·) বলেছেন- তোমাদের প্রত্যেককেই এক একজন দায়িত্বশীল এবং সবাই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। পুরুষ তার গৃহে দায়িত্বশীল, এ জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। অনুরূপভাবে নারী তার স্বামীগৃহে একজন দায়িত্বশীল এবং দায়িত্বের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)। তাই ইসলামী ঐতিহ্য রক্ষা ও বরকতময় পারিবারিক পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আমাদের কতিপয় বিষয়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে; · স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য ও পারিবারিক জ্ঞান ২· এক্ষেত্রে তাদের বয়সের সমতা ৩· আর্থিক সামর্থ ৪· পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি সবার পরিচ্ছন্নতা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ ৫· ইসলাম প্রবর্তিত উন্নততর ধারণা প্রয়োগ করা ইত্যাদি।


source : www.islamshia-w.com/
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মার্কিন মিত্ররাই সিরিয়ায় ...
তুরস্কে ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি খুন
নিউ ইয়র্কে এবার ছুরিকাঘাতে ...
যশোরে ইমাম বাকির (আ.) এর ...
ফিলিস্তিন ও যায়নবাদ প্রসঙ্গ : ...
‘মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা.)’ মুভি ...
শিশু নীরব হত্যা মামলার প্রধান ...
স্কুলে হিজাব পরায় মার্কিন মুসলিম ...
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ...
আয়াতুল্লাহ জাকজাকি বেঁচে আছেন ...

 
user comment