তেহরান ইসলামি জাগরণ বিষয়ক দু'দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন এক বিবৃতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের ৭০টি দেশের পাঁচশ'র বেশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক ও বিশেষজ্ঞ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা মুসলিম বিশ্বের সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশেষ করে ফিলিস্তিন সমস্যা, চলমান ইসলামী গণজাগরণের নানা দিক এবং এর সামনে বিরাজমান চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
এই সম্মেলনে ইসলামী জাগরণ, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগানো প্রভৃতি বিষয়ে পাঁচটি আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইসলামি জাগরণ বিষয়ক দু'দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিদেশি বিশেষজ্ঞ,চিন্তাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির সঙ্গে দেখা করতে যান।
বিশেষজ্ঞদের এ সমাবেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, বিশ্বে চলমান ইসলামী গণজাগরণ এবং এ জাগরণের বিস্তার ঘটায় শত্রুরা ব্যাপক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তিনি ইসলামী আন্দোলনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, বিশ্বের যেখানেই ইসলাম এবং ইসলামি আন্দোলন থাকবে সেখানেই তা নির্মূল করার চেষ্টা করবে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা। তাই আন্দোলনকারীদেরকে আমেরিকার প্রতারণার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তেহরানে ইসলামি জাগরণ বিষয়ক দু'দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিবৃতিতে মুসলিম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ওপর গুরত্বারোপ করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর আধিপত্যকে বিশ্বে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, কেবল মাত্র ঐশি মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনা এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলনের প্রতি সম্মান জানানোর মাধ্যমেই কেবল বিশ্বে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বিবৃতিতে মুসলিম শিক্ষাকেন্দ্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মুসলিম শিক্ষকদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য নিজেদের মধ্যে ইউনিয়ন গঠন এবং যোগাযোগ নেট ওয়ার্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
তেহরান সম্মেলনে উপস্থিতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম শিক্ষকরা মুসলিম বিশ্বের জন্য আলাদা গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ ছাড়া, তারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী ইউরোপ ও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সহযোগিতা বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তেহরানে অনুষ্ঠিত ইসলামি জাগরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষে প্রকাশিত বিবৃতির অন্য একটি ধারায় বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যে ইসলামী গণজাগরণ শুরু হয়েছে তা মুসলিম মনিষিদের ব্যাপক প্রচেষ্টা বিশেষ করে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইমাম খোমেনি (র.)এর চিন্তাধারার ফসল ।
তেহরান সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা বলেছেন, মুসলমানদের মধ্যে যত বেশি ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠিত হবে ইসলামের শত্রু সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তত বেশি দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষমতার ভারসাম্য মুসলিম উম্মার পক্ষে চলে আসবে। তারা ফিলিস্তিন সমস্যাকে মুসলিম বিশ্বের বড় সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের নিন্দা জানান এবং গাজার নির্যাতিত মুসলমানদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য সব মুসলমান বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
source : http://bangla.irib.ir