বাঙ্গালী
Sunday 1st of September 2024
0
نفر 0

মুসলিম সমাজে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ১৩ তম পর্ব

পরিবার হলো সমাজ-সংগঠনের একক। অর্থাৎ এই পরিবারের সমষ্টিই সমাজ । ফলে সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তির মূল উৎসভূমিই হলো পরিবার। সেই পরিবারটি যদি সুশৃঙ্খল না থাকে, তাহলে সমাজও শৃঙ্খলাহীনতায় ভোগে। তাই সবার আগে প্রয়োজন নিজ নিজ পরিবারে সুস্থ ও শান্তিময় পরিবেশ গড়ে তোলা। এই পরিবেশ সৃষ্টির প্রধান দায়িত্ব যাদের, তারা হলেন বাবা-মা। তো বাবা-মায়ের পারস্পরিক সুসম্পর্কের অন্তরায়গুলোকে অপসারণের জন্যে আমরা অনেক আলোচনা করেছি। স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যকার সুসম্পর্কের মূল ভিত্তিই হলো পরস্পরের প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। ফলে বিশ্বাস বা আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়, এমন কোন কাজই করা ঠিক নয়। মানুষ মাত্রই কৌতুহলী, তবে স্ত্রীদেরকে স্বামীদের ব্যাপারে কৌতুহলী হতে একটু বেশী দেখা যায়। স্ত্রীদের অনেকেই তাদের স্বামীর পেশা, বেতন, অফিসের প্রাত্যহিকতা ইত্যাদি ব্যাপারে জানতে চায়। কোন কোন স্বামী যে বলেন না-তা কিন্তু নয়। আসলে স্বামীরা সাধারণত স্ত্রীদের সাথে তাদের যে কোন গোপনীয় ব্যাপারে আলাপ করতে দ্বিধা করেন না। কিন্তু সমস্যা হলো অনেকেই মনে করেন যে, স্ত্রীদের কাছে কোন কথাই গোপন থাকে না। অন্যদের সাথে গল্পচ্ছলে তারা সবই প্রকাশ করে দেন। কথাটা অবশ্য পুরোপুরি যে মিথ্যে, তাও নয়। বরং এর সত্যতা ভয়াবহ। ভয়াবহ এ জন্যে যে, স্বামীর গোপনীয় বিষয় ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেরই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ ধরণের পরিণতির কারণে যে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আস্থাশীলতার অমর্যাদা, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এমনকি অনেক স্ত্রী আবার স্বামীর এই সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ব্ল্যাকমেইল পর্যন্ত করে বসে। স্ত্রীরা যে এ ধরনের কাজ ইচ্ছাকৃতই করেন, তা কিন্তু নয়। বরং স্ত্রী জাতির স্বভাবটাই হলো আবেগপ্রবণ। তাই এই আবেগপ্রবণতার কারণে নিজেকে সবসময় ধরে রাখতে পারেন না। নারী মাত্রই অনিয়ন্ত্রিত আবেগের অধিকারী। কিন্তু ব্যতিক্রম যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। আবার কোন কোন স্ত্রী ইচ্ছাকৃতই যেন স্বামীর গোপনীয় বিষয়গুলোকে তার বিরুদ্ধে সময় মতো কাজে লাগান। অবশ্য এর পরিণতি যে আত্মবিধ্বংসী, তা ঘটনা ঘটানোর সময় আবেগের কারণে বুঝে উঠতে পারেন না। অথচ ঘটে যাওয়ার পর অনুশোচনা করেও লাভ নেই। কারণ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কোন পথ আর তখন অবশিষ্ট থাকে না। এই বক্তব্য কতোটা বাস্তব, তা যারা এরই মধ্যে এ ধরনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। এই সব অভিজ্ঞতার নিরিখে কেউ যদি মনে করেন যে, বিপদ বা সমস্যার আশঙ্কায় আত্মসংযমী হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত তাহলে কি ভুল হবে? এখানে আত্মসংযমী বলতে বোঝানো হচ্ছে, স্ত্রীর সাথে গোপনীয় সকল বিষয়ে একটু ভেবে-চিন্তে আলাপ-আলোচনা বা গল্প-গুজব করা। তবে হ্যাঁ! যদি স্ত্রী যথেষ্ট বিচক্ষণ হন, দূরদর্শী হন এবং স্বামী-সংসারের মঙ্গল-অমঙ্গল চিন্তায় ইতিবাচক হন, তাহলে ভিন্ন কথা। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, বুদ্ধিমতীরা কখনো তাদের গোপনীয় কথা দ্বিতীয় কাউকে জানতে দেয় না। ইমাম আলী (আঃ) যেমনটি বলেছেন, বুদ্ধিমান ব্যক্তির মধ্যেই তার গোপনীয় বিষয় সবচেয়ে নিরাপদে রক্ষিত থাকে।
এতক্ষণ পর্যন্ত যে কথাগুলো উল্লেখ করা হলো, তার মূল উদ্দেশ্য হলো একথা বোঝানো যে, স্বামীরা যদি তাদের স্ত্রীদেরকে কোন গোপনীয় বিষয় জানাতে না চান, তাহলে তা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই ভালো। এখানে আস্থা বা বিশ্বাসহীনতার কোন প্রসঙ্গ নেই। সমাজ বলুন, রাষ্ট্র বলুন আর কল-কারখানা বলুন একটু মনযোগ দিলেই দেখবেন যে সেখানে রয়েছে নেতৃত্ব ও আনুগত্যের একটা অমোঘ শৃঙ্খলা। এই শৃঙ্খলা না থাকলে কোন প্রতিষ্ঠানই সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। একটু আগেই আমরা বলেছি যে, পরিবার হচ্ছে সমাজ সংগঠনের একক। ফলে এই পরিবারেও থাকা চাই নেতৃত্ব এবং আনুগত্যের ভারসাম্যপূর্ণ একটি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় সংসারের নেতৃত্বের ভার স্বামী অথবা স্ত্রী যে কোন একজনের ওপর ন্যস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে ইসলাম স্বামীকেই এই নেতৃত্বের দায়িত্ব অর্পন করেছে। এই বিধান যে যথার্থ তা নিরপে মানসিকতা নিয়ে ভাবলেই পরিস্কার হয়ে যাবে। বলাবাহুল্য এর ব্যতিক্রম যেসব সংসারে রয়েছে অর্থাৎ যেখানে স্বামীর পরিবর্তে স্ত্রীই সংসারের কর্ত্রী, সেখানে শৃঙ্খলার নেপথ্যে কতো যে বিশৃঙ্খলা রয়েছে তা ভুক্তভোগী মাত্রই বুঝতে পারেন। সকল সত্য সবসময় প্রকাশিত হয় না। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘বাতির নীচে অন্ধকার'-এই প্রবাদটি এ ধরণের পরিস্থিতিতে বাস্তব হয়ে দাঁড়ায়।

এবারে একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক। মধ্যযুগীয় একটি কবিতার লাইন হলো' "কপালের লিখন, না যায় খন্ডন"। অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন, তা ফলতে বাধ্য। আর কার তকদীরে যে কী লেখা আছে, তা তো কারো জানা নেই। আজ যে রাজা কালই সে প্রজা, আজ যে ধনী কালই যে সে ফকীরে পরিণত হবে না-তার কী নিশ্চয়তা আছে! অতএব মানব জীবনটাই হলো উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখময়। এখন কারো স্বামীর যদি হঠাৎ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে যায়, ধনী থেকে নিঃস্বতে পরিণত হয়ে যায়-তখন স্ত্রী কি তাকে ভৎর্সনা করে চলে যাবে ? না, তা হবে অমানবিক এবং হীন স্বার্থপরতা। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বন্ধন হওয়া চায় এতো বেশী দৃঢ়, যেন স্বচ্ছলতায়, সুস্থতায়-অসুস্থতায়, সুসময়-দুঃসময়-সর্বাবস্থাতেই সমানভাবে অটুট থাকে। স্বামী যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে স্ত্রীর কর্তব্য হলো তার সেবা-যত্ন করা, তার সুস্থতার জন্যে সব ধরণের চেষ্টা চালানো। স্ত্রীর হাতে যদি নিজস্ব কিছু অর্থ থাকে তাহলে প্রয়োজনে তা স্বামীর চিকিৎসায় ব্যয় করা উচিত। স্বামীরও উচিত ঠিক তেমনি আচরণ স্ত্রীর সাথে করা। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "নারীর জন্যে জিহাদ হলো তার স্বামীর সেবা-যত্ন করা।"

স্বামীর সেবাকে আল্লাহর রাসূল জিহাদরূপে আখ্যায়িত করেছেন। অতএব আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে, আপনার নিজস্ব সম্মান ও মর্যাদার জন্যে,সন্তানদের জন্যে নিজেকে বিলিয়ে দিন, আত্মত্যাগ করুন, ধৈর্য্য ধরুন, সন্তানদেরকেও ধৈর্য্য, ত্যাগ এবং ভালোবাসার শিক্ষা দিন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে ইহলোক-পরলোক উভয়লোকেই পুরস্কৃত করবেন।


source : http://bangla.irib.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

আমাকে এ নারীর হাত হতে মুক্তি দাও!: ...
ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রত্যাশা’ ...
বাস্তবতার দর্পনে ওহাবি মতবাদ (১১ - ...
চাকরিতে বাধা হিজাব ; নিরাপত্তা ...
ইরান মুসলিম জাতিগুলোর জন্য আদর্শ ...
সূরা আ'রাফ;(২৬তম পর্ব)
ভারতে যে দাঙ্গা মুসলিম নারীদের ...
সুফীবাদ প্রসঙ্গে
মিয়ানমারে ইমাম হুসাইন (আ.) এর ...
পোপ ও ইয়েমেনের মানুষ হত্যাকারীরা

 
user comment