বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যাকাত
নজরুল ইসলাম
॥ শেষ কিস্তি ॥
বাংলাদেশে তো কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা আছেই। তাহলে যাকাতের হিসেবে-নিকেশ করে তা পরিশোধ করা সভাবতই কঠিন। অন্যদিকে খোমস তো আহলে সুন্নতের অনুসারীরা প্রদান করতে বরাবরই অস্বীকার করে আসে।
এখন যদি কাউকে যাকাত হিসেব প্রদান করতে হয়: (২২,০০,০০০-এর ২.৫%) = ৫৫,০০০ টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে যদি আয়করের পাশাপাশি যাকাতের (আয়কর অথবা যাকাত যে একটি গ্রহণের) অপশন চালু থাকত তাহলে ধার্মিক মুসলিমগণ সবাই ফরজ ইবাদত হিসেবে অকুণ্ঠ মনে যাকাত আদায় করতেন এবং সরকারেরও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও দারিদ্র্য বিমোচনে অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি হত। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা প্রয়োজন।
দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাত
নামাজের ন্যায় যাকাতও একটি সামষ্টিক ইবাদত। মুসলিম সমাজের কেন্দ্র হল মসজিদ, যেখানে সবাই জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করেন। মনে করুন! ঐ সমজিদকে কেন্দ্র করে মহল্লার মাঝে যারা যাকাতদাতা রয়েছেন তাদের যাকাতগুলো হিসাবে করে একত্রিত করা হল, যার পরিমাণ হল এক লাখ টাকা। এরপর ঐ মহল্লা থেকে অভাবীদের একটি তালিকা তৈরি করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশটি পরিবারকে বাছাই করে প্রত্যেক পরিবারকে ৫,০০০ টাকার মধ্যে উপার্জনযোগ্য কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হল, যাতে ভবিষতে আর কারো কাছে হাত পাততে না হয়। যেমন- যে পরিবারের কর্তা একজন শক্তিমান পুরুষ তাকে একটি ভ্যান বা মাঝারি নৌকা কিনে দেয়া হল, যে পরিবারের কর্তা একজন বয়োবৃদ্ধ পুরুষ তাকে একটি ছোট পান-চায়ের দোকান করে দেয়া হল আর যে পরিবারের প্রধান একজন বিধবা মহিলা তাকে একটা ভাল সেলাই মেশিন কিনে দেয়া হল যাতে এগুলো ব্যবহার করে তারা দৈনন্দিন রোজগার করে সংসার চালাতে পারে। এভাবে প্রতি বছর যদি বিশটি পরিবারকে স্বাবলম্বী করা যায় তাহলে মদিনায় যেমন খেলাফতে রাশেদীনের শেষ দিকে যাকাত নেয়ার মত লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি তেমনি ২০ বছর পর হয়ত ঐ মহল্লায়ও যাকাত নেয়ার মত কোন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। মহল্লার লোকজন সুদি মহাজন, সুদি এনজিও ও সুদি ব্যাংকসমূহের সুদের ছোবল থেকে মুক্তি পাবে, মহল্লায় তাকওয়া, শান্তি ও সমৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এজন্য প্রয়োজন হল সম্মিলিত সামাজিক অঙ্গীকার।
যাকাত আদায় করার উপকারিতা : যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন : যারা আল্লাহর রাস্তায় ধনসম্পদ খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে ঐ শস্য দানার মত যার থেকে সাতটি শিষ বের হয় এবং প্রত্যেকটি শিষে শতাধিক দানা হয় আর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা তাকে আরও বাড়িয়ে দেন। (সূরা বাকারাহ : ২৬১) যাকাতের মাধ্যমে আল্লাহর খাস রহমত লাভ করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন : আমার রহমত সবকিছুর ঊর্ধ্বে আর আমি লিখব ঐসব মানুষের জন্য যারা আল্লাহকে ভয় করে ও যাকাত আদায় করে। (সূরা আরাফ : ১৫৬)।
যাকাতের মাধ্যমে আল্লাহ তরফ থেকে উত্তম বিনিময় ও হেফাজতি লাভ করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন : যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদের কঠিন আজাবের সুসংবাদ দাও। কিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত ধাতুকে জাহান্নামের আগুনে গরম করে সেটা দিয়ে তাদের কপালে, শরীরের পার্শ্বে ও পিঠে ছেক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা হচ্ছে ঐ সম্পদ জমাদানের শাস্তি যা তোমরা জমা করে রেখেছিলে নিজেদের জন্য আর ঐ জমা রাখার শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা তওবা : ৩৪-৩৫)
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যদি সোনা বা রূপার অধিকারী কোন ব্যক্তি এর হক (যাকাত) ঠিকমত আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত ধাতুকে পাত বানানো হবে আর তাকে জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তার কপালে, শরীরের পার্শ্বদেশে ও পিঠে ছেক দেয়া হবে। যতবারই তা ঠান্ডা হয়ে আসবে ততবারই আবার গরম করে দেয়া হবে, এমন এক দিনে যা হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। (সহীহ মুসলিম) আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার মাহবুব বান্দাহ ও রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম-এর মাহবুব উম্মতগণের অন্তর্ভুক্ত করুন! খাঁটি মসলিম হিসেবে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার তৌফিক দিন! রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর আহলে বাইত ও উৎকৃষ্ট সাহাবীগণের (রা.) সাথে আমাদের হাশর করুন!
আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
-সম্পাদানায়: ড. সামিউল হক।