বাঙ্গালী
Friday 27th of December 2024
0
نفر 0

মদীনা সনদ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, বাংলাদেশ চলবে মদীনা সনদের ভিত্তিতে। এর পর থেকে বিভিন্নজন মদীনা সনদ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন।

 

মদীনা সনদ কী : আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় (পূর্বের নাম ইয়াছরিব) হিজরতের পর সেখানে ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। মদীনায় তখন বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের লোকের বসবাস ছিল। তাদের মধ্যে প্রধান দু'টি গোত্র ছিল আউস ও খাযরাজ। বনূ কাইনুকা, বনূ নাজীর ও বনূ কুরাইজা নামের ইহুদী গোত্ররাও তখন মদীনা এলাকায় বসবাসরত ছিল। এ ছাড়া আরো দু'-চারটি উপদলও ছিল। ইসলামপূর্ব সময়ে ইয়াছরিবের প্রধান দুটি গোত্র আউস ও খাযরাজের মাঝে প্রায়ই যুদ্ধ লেগে থাকত। এ দুটি গোত্রের প্রায় সকলেই যখন ইসলামের ছায়াতলে একত্রিত হল, তখন তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মীয় ও গোত্রগত সম্প্রদায়ের জনগণের মাঝে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে সকলকে একটি চুক্তির আওতায় নিয়ে আসলেন। যার মূল কথাগুলো ছিল নিম্নরূপ :

১. এটি ছিল মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকারী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক সম্পাদিত একটি চুক্তি।

ইয়াছরিবে (মদীনা) বসবাসকারী প্রায় সকল ধর্ম-গোত্রের মানুষকে এ চুক্তির অধীনে আনা হয়। ২. এ ভৌগলিক সীমায় বসবাসকারী লোকজন একই দেশে বসবাসকারী নাগরিক বলে গণ্য হবে। ৩. চুক্তির আওতাভুক্ত লোকজন যে, যে ধর্মেরই হোক একে অন্য থেকে জানমালের নিরাপত্তা পাবে (যতক্ষণ না সে চুক্তি ভঙ্গ করে)। ৪. কোন বিষয়ে বিরোধ পরিলক্ষিত হলে তার ফয়সালা করবেন আল্লাহ ও তার রাসূল অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী তা মীমাংসিত হবে। (২৩ ও ৪২ নং দফা দ্রষ্টব্য) ৫. কোন কাফেরকে কোন মুমিনের বিরুদ্ধে সাহায্য করা যাবে না (ধারা ১৪)।

আলকাউসারের পাঠকদের জন্য মদীনা সনদের পূর্ণ বিবরণের বাংলা তরজমা নিম্নে পেশ করা হল। তরজমা করেছেন মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ।-সম্পাদক

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

১. এটি নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পক্ষ হতে সম্পাদিত, কুরাইশের ও ইয়াছরিবের মুমিন ও মুসিলমগণের মাঝে লিখিত। এবং (তাদেরও জন্য) যারা তাদের অনুগামী হয়ে তাদের সাথে মিলিত হয়েছে এবং একসাথে জিহাদ করেছে।

২. এরা এক সম্প্রদায়, অন্য সকল মানুষ তাদের থেকে আলাদা।

৩. কুরাইশের মুহাজিরগণ তাদের পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৪. বনু আউফ তাদের পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৫. বনুল হারিছ (ইবনুল খাযরাজ) পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৬. বনূ সাইদা পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৭. বনূ জুশাম পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৮. বনুন নাজ্জার পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৯. বনূ আমর ইবনে আউফ পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

১০. বনুন নাবীত পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

১১. বনুল আওছ পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

১২. (ক) রক্তপণ ও মুক্তিপণের ক্ষেত্রে মুমিনগণ তাদের কোনো গোত্র ও মিত্রহীন ঋণগ্রস্তের সঙ্গত অর্থ-সহায়তা ত্যাগ করবে না।

১২. (খ) কোন মুমিন অন্য মুমিনের মাওলার সাথে তার মুনিবের অনুমতি ব্যতীত চুক্তিবদ্ধ হবে না।

১৩. মুত্তাকী মুমিনগণের শক্তি ও ক্ষমতা নিজ জাতির এমন প্রতিটি লোকের বিরুদ্ধে কার্যকর থাকবে, যে জুলুম করে, কিংবা অন্যায় প্রতিরোধ/উপহার (উৎকোচ) প্রার্থনা করে, কিংবা পাপ, জুলুম বা মুমিনদের মাঝে অনাচার-বিশৃঙ্খলা অন্বেষণ করে। (দুষ্কৃতিকারীর) বিরুদ্ধে মুমিনগণের শক্তি-ক্ষমতা ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এমনকি সে তাদের কারো সন্তান হলেও।

১৪. এক মুমিন অন্য মুমিনকে কোনো কাফিরের বদলে হত্যা করবে না এবং কোনো কাফিরকে কোনো মুমিনের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে না।

১৫. আল্লাহর আমান একক, অবিভাজ্য। মুমিনদের কোন সাধারণ ব্যক্তিও সবার পক্ষ হতে আমান দিতে পারে। আর মুমিনগণই একে অপরের মিত্র, অন্য সকল মানুষের পরিবর্তে।

১৬. ইহুদীদের মধ্যে যে আমাদের অনুগামী হবে তার জন্যও সাহায্য ও সমতা। তার উপর জুলুম করা যাবে না, তার বিরুদ্ধে পরস্পর সাহায্যও করা যাবে না।

১৭. মুমিনগণের সন্ধি অবিভাজ্য। আল্লাহর পথের যুদ্ধে এক মুমিন অন্য মুমিনকে ছাড়া (বিচ্ছিন্নভাবে) ও নিজেদের মাঝে ন্যায় ও সমতা ছাড়া সন্ধিতে আবদ্ধ হবে না।

১৮. আমাদের সাথে যুদ্ধযাত্রাকারী যোদ্ধাদলে একে অন্যের স্থলবর্তী হবে। (অর্থাৎ সকল মুসলিম পালাক্রমে অংশ গ্রহণ করবে।)

১৯. আল্লাহর রাস্তায় প্রবাহিত রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণে মুমিনগণ একে অন্যের সাহায্য করবে।

২০. মুত্তাকী মুমিনগণ শুদ্ধতম ও সুন্দরতম আচরণে প্রতিষ্ঠিত।

২১. (ক) যার সম্পর্কে নিরপরাধ মুমিনকে জেনেবুঝে হত্যা করা প্রমাণিত হয়, তাকেও ঐ (নিহতের) কারণে (কিসাসরূপে) হত্যা করা হবে, যদি না নিহতের স্বজনরা (রক্তপণ বা ক্ষমা করতে) রাজি হয়। আর সকল মুমিন হত্যাকারীর বিরুদ্ধে দাড়াবে। অন্যথা তাদের জন্য বৈধ নয়।

২১. (খ) (মদীনার) কোনো মুশরিক কোনো কুরাইশের না সম্পদের নিরাপত্তা দিবে, না প্রাণের। আর না তার বিষয়ে কোনো মুমিনের সামনে প্রতিবন্ধক হবে।

২২. কোনো মুমিন, যে এই লিপির ধারাগুলো স্বীকার করেছে এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান এনেছে তার জন্য বৈধ নয়, কোনো দুষ্কৃতিকারীকে সাহায্য করা বা তাকে আশ্রয় দেওয়া। যে তাকে সাহায্য করবে বা আশ্রয় দিবে তার উপর কিয়ামত দিবসে আল্লাহর গযব ও লা'নত পতিত হবে। তার নিকট থেকে না তাওবা কবুল করা হবে, না ফিদয়া।

২৩. আর যে বিষয়েই তোমাদের মাঝে মতভেদ হবে তা আল্লাহর সমীপে ও মুহাম্মাদের সমীপে উপস্থাপিত হবে।

২৪. মুমিনগণ যে পর্যন্ত যুদ্ধরত থাকে, ইয়াহুদিরা তাদের সাথে খরচ বহন করবে।

২৫. বনু আউফের ইহুদিরা মুমিনদের সাথে এক দলভুক্ত- ইহুদিদের জন্য ইহুদিদের ধর্ম, মুসলিমদের জন্য মুসলিমদের ধর্ম- তারা ও তাদের মিত্ররা (অভিন্ন)। তবে যে জুলুম করে ও পাপ করে সে তো কেবল ধ্বংস করে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে।

২৬. বনুন নাজ্জারের ইহুদিদের জন্য বনু আউফের ইহুদিদের অনুরূপ (অধিকার) সাব্যস্ত হবে।

২৭. বনুল হারিছের ইহুদিদের জন্য বনু আউফের ইহুদিদের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

২৮. বনু সায়িদার ইহুদিদের জন্য বনু আউফের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

২৯. বনু জুশামের ইহুদিদের জন্য বনু আউফের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

৩০. বনুল আউসের ইহুদিদের জন্য বনু আউফের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

তবে যে অন্যায় ও অপরাধ করবে সে শুধু তার পরিবার ও নিজেকেই সমস্যায় ফেলবে।

৩১. বনু ছা'লাবার ইহুদিদের জন্য বনু আউফের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

৩২. ছা'লাবার শাখা জাফনাহ ছা'লাবার অনুরূপ।

৩৩. বনুশ শুতাইবার জন্য বনু আউফের ইহুদিদের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

৩৪. ছা'লাবার মাওলাগণ (মিত্র) ছালাবার অনুরূপ।

৩৫. ইহুদিদের শাখা গোত্রগুলোও তাদের (মূল গোত্রের) মতো।

৩৬. (ক) তাদের কেউ মুহাম্মাদের অনুমতি ছাড়া (যুদ্ধার্থে) বের হবে না।

৩৬. (খ) এই লিপি কোনো আঘাতের বদলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে না। আর যে রক্তপাত করে এর দায় তাকে ও তার পরিবারকে বহন করতে হবে। (চুক্তিপত্রে শামিল অন্যরা তা বহন করবে না।)

অবশ্য ঐ ব্যক্তি ব্যতিক্রম, যে জুলুমের শিকার হয়েছে।

৩৭. (ক) ইহুদিরা বহন করবে তাদের নিজেদের ব্যায়ভার ও মুসলিমরা তাদের নিজেদের। তবে কেউ এই লিপির

অন্তর্ভুক্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে (ইহুদি-মুসলিম) একে অপরকে সাহায্য করবে এবং একে অপরের কল্যাণকামী হবে। আর বিশ্বস্ততা রক্ষা করবে, বিশ্বাসভঙ্গ করবে না।

৩৭. (খ) কেউ তার মিত্রের কারণে দায়ী হবে না। আর অত্যাচারিতই হবে সাহায্যের অধিকারী।

৩৮. ইহুদিরা মুমিনদের সাথে যুদ্ধের ব্যায় বহন করবে। যে পর্যন্ত তারা যুদ্ধরত থাকবে।

৩৯. এই লিপির অন্তর্ভুক্তদের জন্য ইয়াছরিবের অভ্যন্তর ‘হারাম' (পবিত্র স্থান) বলে গণ্য।

৪০. আমানপ্রাপ্ত ব্যক্তি লিপিভুক্ত (আমানদাতা)র মতো, যতক্ষণ সে ক্ষতি সাধনকারী ও অপরাধী না হয়।

৪১. কোনো আমানপ্রাপ্ত এলাকায় তথাকার লোকদের অনুমতি ছাড়া কাউকে আমান দিবে না।

৪২. এই লিপির অন্তর্ভুক্ত পক্ষসমূহের মাঝে যদি কোনো সমস্যা বা বিবাদ সৃষ্টি হয়, যা থেকে হানাহানি বেধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তাহলে তার নিষ্পত্তির জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সমীপে পেশ করতে হবে। এই চুক্তিনামায় যা রয়েছে এর প্রতি সর্বাধিক নিষ্ঠা ও

বিশ্বস্ততা পোষণকারীর সাথে আল্লাহ রয়েছেন।

৪৩. আমান দেওয়া যাবে না কুরাইশকে, আর না তাকে যে কুরাইশের সাহায্য করে।

৪৪. (চুক্তির সকল পক্ষ) ইয়াছরিবে অতর্কিতে আক্রমনকারীর বিরুদ্ধে পরস্পর সাহায্য করবে।

৪৫. (ক) যখন তাদেরকে কোনো সন্ধিতে আহবান করা হবে যা মুসলিমরা করছেন ও শামিল হচ্ছেন তখন তারাও তা করবে ও শামিল হবে। তদ্রূপ তারা যখন অনুরূপ বিষয়ে আহবান করবে তো তারাও মুসলিমদের নিকটে এই অধিকারপ্রাপ্ত হবে। ঐ সম্প্রদায় ছাড়া, যারা দীনের বিষয়ে যুদ্ধরত (কুরাইশ)

৪৫. (খ) প্রত্যেক (পক্ষ)কে নিজ নিজ এলাকা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।

৪৬. আর আওসের ইহুদিরা-নিজেরা হোক বা তাদের মাওয়ালী হোক-এই চুক্তিতে শরীক পক্ষসমূহের সমান অধিকার লাভ করবে। আর তারাও এই লিপির অন্তর্ভুক্তদের সাথে পূর্ণ বিশ্বস্ততা রক্ষা করবে। এই চুক্তিনামায় যা রয়েছে এর প্রতি সর্বাধিক নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততা পোষণকারীর সাথে আল্লাহ রয়েছেন।

৪৭. আর এই লিপি কোনো অত্যাচারী বা অপরাধীর পক্ষে সহায়ক হবে না। যে যুদ্ধে বের হবে আর যে মদীনায় থাকবে উভয়ই নিরাপত্তার হকদার হবে। অবশ্য অত্যাচারী ও অপরাধী এর ব্যতিক্রম।

* আল্লাহ ঔ ব্যক্তির সাহায্যকারী যে নিষ্ঠার সাথে চুক্তি পালন করে ও আল্লাহকে ভয় করে। এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও তার সাহায্যকারী।

দ্র : মদীনা সনদের ধারাবাহিক এই বিবরণ পাওয়া যায় ইতিহাস ও সীরাতের বিভিন্ন কিতাবে। অবশ্য এর কিছু কিছু ধারা বিভিন্ন হাদীসের কিতাবেও সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। আবার সীরাত ও ইতিহাসের বিভিন্ন বর্ণনায় কিছু কম-বেশিও রয়েছে। এগুলোকে একত্রিত করে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. জিয়া আলউমরী তাঁর ‘আলমুজতামাউল মাদানী' কিতাবে। সেখানে তিনি এ দস্ত্তরের বর্ণনাসূত্র (সনদ) নিয়ে গবেষণার সারমর্মও পেশ করেছেন। মদীনা সনদ ও সংশ্লিষ্ট আলোচনার জন্য দেখুন কিতাবটির ১০৭ থেকে ১৩৬ পৃষ্ঠা।

র্সি ১৫ই খোরদাদ। ১৯৬৩ সালের এই দিনে ইরানে স্বৈরাচারী শাহ সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিলো ঐতিহাসিক ১৫ই খোরদাদ গণ আন্দোলন। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের

প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইমাম খোমেনী (রহঃ) ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের একমাস পর ১৫ই খোরদাদ আন্দোলন সম্পর্কে বলেছিলেন, "ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাসে ১৫ই খোরদাদ

একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। যারা সেদিন শাহী অপশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন, তারাই প্রকৃতপক্ষে ইসলামী

বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন।"
আজ আমরা ১৫ই খোরদাদ বিপ্লব কোন্ প্রেক্ষাপটে কেন হয়েছিলো এবং ‌ইমাম খোমেনী (রহঃ)'র নেতৃত্ব তাতে কতটুকু ভূমিকা পালন করেছিলো, সে সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা

করবো।
১৯৬০ এর দশকে মরহুম ইমাম খোমেনী (রহঃ) ইরানী জনগণের জন্য দু'টি মহান কাজ করেন। তিনি কোমের ধর্মতত্ত্ব কেন্দ্রে স্বৈরাচারি শাহ সরকার এবং তার মার্কিন পৃষ্ঠপোষকের

বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলনের সূচনা করেন এবং রাজনীতি থেকে ধর্ম পৃথকীকরণের শ্লোগান স্তব্ধ করে দিতে সক্ষম হন। পাশাপাশি তিনি ধর্মীয় বিধান অনুসারে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার

আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য আপামর জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন। এরকম এক প্রেক্ষাপটে ১৫ই খোরদাদের বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিলো। ফার্সি বছরের তৃতীয় মাসের নাম খোরদাদ

এবং এই মাসের ১৫ তারিখে বিপ্লবটি সংঘটিত হয়েছিলো বলে এর নাম ১৫ই খোরদাদ আন্দোলন। ইরানের পূর্ববর্তী বিপ্লবগুলোর সাথে এর পার্থক্য ছিলো এই যে, এতে ধর্মীয়

আবেদনের বিষয়টি ছিলো স্পষ্ট।

সে সময় ইরানের অত্যাচারী শাহ সরকার দেশ থেকে ইসলাম উৎখাতের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো। অথচ ইরানের জনগণ ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকেই ছিলো ধর্মপ্রাণ মুসলমান

এবং এ কারণে তারা সরকারের ধর্ম বিদ্বেষী পদক্ষেপগুলোকে ভালোভাবে নিতে পারছিলো না। কিন্তু তাদেরকে সংগঠিত করার জন্য ইমামের আগে আর কোন ধর্মীয়ো নেতা

তেমনভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এগিয়ে আসেন নি। শাহ সরকারের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট জনগণকে আন্দোলনে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে ইমাম তৎকালীন দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র বা সোভিয়েত

ইউনিয়ন- কারো সাহায্যই গ্রহণ করার প্রয়োজন অনুভব করেন নি।

১৯৬৩ সালের জুন মাসে সংঘটিত ১৫ই খোরদাদ আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত ইমামের নেতৃত্বে ইরানী জনগণের শ্লোগান ছিলো - 'না

প্রাচ্য, না পাশ্চাত্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র'। ১৫ই খোরদাদের বিপ্লবের দিন শাহের পেটোয়া বাহিনী কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করে। ইমামকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। শাহ সরকার

ভেবেছিলো, এর মাধ্যমে দেশে তার ইচ্ছা অনুযায়ী শান্তি অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় নি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, বাংলাদেশ চলবে মদীনা সনদের ভিত্তিতে। এর পর থেকে বিভিন্নজন মদীনা সনদ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন।

মদীনা সনদ কী : আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় (পূর্বের নাম ইয়াছরিব) হিজরতের পর সেখানে ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। মদীনায় তখন বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের লোকের বসবাস ছিল। তাদের মধ্যে প্রধান দু'টি গোত্র ছিল আউস ও খাযরাজ। বনূ কাইনুকা, বনূ নাজীর ও বনূ কুরাইজা নামের ইহুদী গোত্ররাও তখন মদীনা এলাকায় বসবাসরত ছিল। এ ছাড়া আরো দু'-চারটি উপদলও ছিল। ইসলামপূর্ব সময়ে ইয়াছরিবের প্রধান দুটি গোত্র আউস ও খাযরাজের মাঝে প্রায়ই যুদ্ধ লেগে থাকত। এ দুটি গোত্রের প্রায় সকলেই যখন ইসলামের ছায়াতলে একত্রিত হল, তখন তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মীয় ও গোত্রগত সম্প্রদায়ের জনগণের মাঝে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে সকলকে একটি চুক্তির আওতায় নিয়ে আসলেন। যার মূল কথাগুলো ছিল নিম্নরূপ :

১. এটি ছিল মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকারী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক সম্পাদিত একটি চুক্তি।

ইয়াছরিবে (মদীনা) বসবাসকারী প্রায় সকল ধর্ম-গোত্রের মানুষকে এ চুক্তির অধীনে আনা হয়। ২. এ ভৌগলিক সীমায় বসবাসকারী লোকজন একই দেশে বসবাসকারী নাগরিক বলে গণ্য হবে। ৩. চুক্তির আওতাভুক্ত লোকজন যে, যে ধর্মেরই হোক একে অন্য থেকে জানমালের নিরাপত্তা পাবে (যতক্ষণ না সে চুক্তি ভঙ্গ করে)। ৪. কোন বিষয়ে বিরোধ পরিলক্ষিত হলে তার ফয়সালা করবেন আল্লাহ ও তার রাসূল অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী তা মীমাংসিত হবে। (২৩ ও ৪২ নং দফা দ্রষ্টব্য) ৫. কোন কাফেরকে কোন মুমিনের বিরুদ্ধে সাহায্য করা যাবে না (ধারা ১৪)।

আলকাউসারের পাঠকদের জন্য মদীনা সনদের পূর্ণ বিবরণের বাংলা তরজমা নিম্নে পেশ করা হল। তরজমা করেছেন মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ।-সম্পাদক

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

১. এটি নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পক্ষ হতে সম্পাদিত, কুরাইশের ও ইয়াছরিবের মুমিন ও মুসিলমগণের মাঝে লিখিত। এবং (তাদেরও জন্য) যারা তাদের অনুগামী হয়ে তাদের সাথে মিলিত হয়েছে এবং একসাথে জিহাদ করেছে।

২. এরা এক সম্প্রদায়, অন্য সকল মানুষ তাদের থেকে আলাদা।

৩. কুরাইশের মুহাজিরগণ তাদের পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৪. বনু আউফ তাদের পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৫. বনুল হারিছ (ইবনুল খাযরাজ) পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৬. বনূ সাইদা পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৭. বনূ জুশাম পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৮. বনুন নাজ্জার পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

৯. বনূ আমর ইবনে আউফ পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

১০. বনুন নাবীত পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

১১. বনুল আওছ পূর্বের অবস্থায় থাকবে। নিজেদের মাঝে পূর্বের রীতিতে রক্তপণ লেনদেন করবে এবং নিজেদের বন্দীর মুক্তিপণ বহন করবে। আর তা করবে মুমিনদের মাঝে স্বীকৃত নীতি ও ইনসাফ অনুসারে।

১২. (ক) রক্তপণ ও মুক্তিপণের ক্ষেত্রে মুমিনগণ তাদের কোনো গোত্র ও মিত্রহীন ঋণগ্রস্তের সঙ্গত অর্থ-সহায়তা ত্যাগ করবে না।

১২. (খ) কোন মুমিন অন্য মুমিনের মাওলার সাথে তার মুনিবের অনুমতি ব্যতীত চুক্তিবদ্ধ হবে না।

১৩. মুত্তাকী মুমিনগণের শক্তি ও ক্ষমতা নিজ জাতির এমন প্রতিটি লোকের বিরুদ্ধে কার্যকর থাকবে, যে জুলুম করে, কিংবা অন্যায় প্রতিরোধ/উপহার (উৎকোচ) প্রার্থনা করে, কিংবা পাপ, জুলুম বা মুমিনদের মাঝে অনাচার-বিশৃঙ্খলা অন্বেষণ করে। (দুষ্কৃতিকারীর) বিরুদ্ধে মুমিনগণের শক্তি-ক্ষমতা ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এমনকি সে তাদের কারো সন্তান হলেও।

১৪. এক মুমিন অন্য মুমিনকে কোনো কাফিরের বদলে হত্যা করবে না এবং কোনো কাফিরকে কোনো মুমিনের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে না।

১৫. আল্লাহর আমান একক, অবিভাজ্য। মুমিনদের কোন সাধারণ ব্যক্তিও সবার পক্ষ হতে আমান দিতে পারে। আর মুমিনগণই একে অপরের মিত্র, অন্য সকল মানুষের পরিবর্তে।

১৬. ইহুদীদের মধ্যে যে আমাদের অনুগামী হবে তার জন্যও সাহায্য ও সমতা। তার উপর জুলুম করা যাবে না, তার বিরুদ্ধে পরস্পর সাহায্যও করা যাবে না।

১৭. মুমিনগণের সন্ধি অবিভাজ্য। আল্লাহর পথের যুদ্ধে এক মুমিন অন্য মুমিনকে ছাড়া (বিচ্ছিন্নভাবে) ও নিজেদের মাঝে ন্যায় ও সমতা ছাড়া সন্ধিতে আবদ্ধ হবে না।

১৮. আমাদের সাথে যুদ্ধযাত্রাকারী যোদ্ধাদলে একে অন্যের স্থলবর্তী হবে। (অর্থাৎ সকল মুসলিম পালাক্রমে অংশ গ্রহণ করবে।)

১৯. আল্লাহর রাস্তায় প্রবাহিত রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণে মুমিনগণ একে অন্যের সাহায্য করবে।

২০. মুত্তাকী মুমিনগণ শুদ্ধতম ও সুন্দরতম আচরণে প্রতিষ্ঠিত।

২১. (ক) যার সম্পর্কে নিরপরাধ মুমিনকে জেনেবুঝে হত্যা করা প্রমাণিত হয়, তাকেও ঐ (নিহতের) কারণে (কিসাসরূপে) হত্যা করা হবে, যদি না নিহতের স্বজনরা (রক্তপণ বা ক্ষমা করতে) রাজি হয়। আর সকল মুমিন হত্যাকারীর বিরুদ্ধে দাড়াবে। অন্যথা তাদের জন্য বৈধ নয়।

২১. (খ) (মদীনার) কোনো মুশরিক কোনো কুরাইশের না সম্পদের নিরাপত্তা দিবে, না প্রাণের। আর না তার বিষয়ে কোনো মুমিনের সামনে প্রতিবন্ধক হবে।

২২. কোনো মুমিন, যে এই লিপির ধারাগুলো স্বীকার করেছে এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান এনেছে তার জন্য বৈধ নয়, কোনো দুষ্কৃতিকারীকে সাহায্য করা বা তাকে আশ্রয় দেওয়া। যে তাকে সাহায্য করবে বা আশ্রয় দিবে তার উপর কিয়ামত দিবসে আল্লাহর গযব ও লা'নত পতিত হবে। তার নিকট থেকে না তাওবা কবুল করা হবে, না ফিদয়া।

২৩. আর যে বিষয়েই তোমাদের মাঝে মতভেদ হবে তা আল্লাহর সমীপে ও মুহাম্মাদের সমীপে উপস্থাপিত হবে।

২৪. মুমিনগণ যে পর্যন্ত যুদ্ধরত থাকে, ইয়াহুদিরা তাদের সাথে খরচ বহন করবে।

২৫. বনু আউফের ইহুদিরা মুমিনদের সাথে এক দলভুক্ত- ইহুদিদের জন্য ইহুদিদের ধর্ম, মুসলিমদের জন্য মুসলিমদের ধর্ম- তারা ও তাদের মিত্ররা (অভিন্ন)। তবে যে জুলুম করে ও পাপ করে সে তো কেবল ধ্বংস করে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে।

২৬. বনুন নাজ্জারের ইহুদিদের জন্য বনু আউফের ইহুদিদের অনুরূপ (অধিকার) সাব্যস্ত হবে।

২৭. বনুল হারিছের ইহুদিদের জন্য বনু আউফের ইহুদিদের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

২৮. বনু সায়িদার ইহুদিদের জন্য বনু আউফের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

২৯. বনু জুশামের ইহুদিদের জন্য বনু আউফের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

৩০. বনুল আউসের ইহুদিদের জন্য বনু আউফের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

তবে যে অন্যায় ও অপরাধ করবে সে শুধু তার পরিবার ও নিজেকেই সমস্যায় ফেলবে।

৩১. বনু ছা'লাবার ইহুদিদের জন্য বনু আউফের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

৩২. ছা'লাবার শাখা জাফনাহ ছা'লাবার অনুরূপ।

৩৩. বনুশ শুতাইবার জন্য বনু আউফের ইহুদিদের অনুরূপ সাব্যস্ত হবে।

৩৪. ছা'লাবার মাওলাগণ (মিত্র) ছালাবার অনুরূপ।

৩৫. ইহুদিদের শাখা গোত্রগুলোও তাদের (মূল গোত্রের) মতো।

৩৬. (ক) তাদের কেউ মুহাম্মাদের অনুমতি ছাড়া (যুদ্ধার্থে) বের হবে না।

৩৬. (খ) এই লিপি কোনো আঘাতের বদলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে না। আর যে রক্তপাত করে এর দায় তাকে ও তার পরিবারকে বহন করতে হবে। (চুক্তিপত্রে শামিল অন্যরা তা বহন করবে না।)

অবশ্য ঐ ব্যক্তি ব্যতিক্রম, যে জুলুমের শিকার হয়েছে।

৩৭. (ক) ইহুদিরা বহন করবে তাদের নিজেদের ব্যায়ভার ও মুসলিমরা তাদের নিজেদের। তবে কেউ এই লিপির

অন্তর্ভুক্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে (ইহুদি-মুসলিম) একে অপরকে সাহায্য করবে এবং একে অপরের কল্যাণকামী হবে। আর বিশ্বস্ততা রক্ষা করবে, বিশ্বাসভঙ্গ করবে না।

৩৭. (খ) কেউ তার মিত্রের কারণে দায়ী হবে না। আর অত্যাচারিতই হবে সাহায্যের অধিকারী।

৩৮. ইহুদিরা মুমিনদের সাথে যুদ্ধের ব্যায় বহন করবে। যে পর্যন্ত তারা যুদ্ধরত থাকবে।

৩৯. এই লিপির অন্তর্ভুক্তদের জন্য ইয়াছরিবের অভ্যন্তর ‘হারাম' (পবিত্র স্থান) বলে গণ্য।

৪০. আমানপ্রাপ্ত ব্যক্তি লিপিভুক্ত (আমানদাতা)র মতো, যতক্ষণ সে ক্ষতি সাধনকারী ও অপরাধী না হয়।

৪১. কোনো আমানপ্রাপ্ত এলাকায় তথাকার লোকদের অনুমতি ছাড়া কাউকে আমান দিবে না।

৪২. এই লিপির অন্তর্ভুক্ত পক্ষসমূহের মাঝে যদি কোনো সমস্যা বা বিবাদ সৃষ্টি হয়, যা থেকে হানাহানি বেধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তাহলে তার নিষ্পত্তির জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সমীপে পেশ করতে হবে। এই চুক্তিনামায় যা রয়েছে এর প্রতি সর্বাধিক নিষ্ঠা ও

বিশ্বস্ততা পোষণকারীর সাথে আল্লাহ রয়েছেন।

৪৩. আমান দেওয়া যাবে না কুরাইশকে, আর না তাকে যে কুরাইশের সাহায্য করে।

৪৪. (চুক্তির সকল পক্ষ) ইয়াছরিবে অতর্কিতে আক্রমনকারীর বিরুদ্ধে পরস্পর সাহায্য করবে।

৪৫. (ক) যখন তাদেরকে কোনো সন্ধিতে আহবান করা হবে যা মুসলিমরা করছেন ও শামিল হচ্ছেন তখন তারাও তা করবে ও শামিল হবে। তদ্রূপ তারা যখন অনুরূপ বিষয়ে আহবান করবে তো তারাও মুসলিমদের নিকটে এই অধিকারপ্রাপ্ত হবে। ঐ সম্প্রদায় ছাড়া, যারা দীনের বিষয়ে যুদ্ধরত (কুরাইশ)

৪৫. (খ) প্রত্যেক (পক্ষ)কে নিজ নিজ এলাকা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।

৪৬. আর আওসের ইহুদিরা-নিজেরা হোক বা তাদের মাওয়ালী হোক-এই চুক্তিতে শরীক পক্ষসমূহের সমান অধিকার লাভ করবে। আর তারাও এই লিপির অন্তর্ভুক্তদের সাথে পূর্ণ বিশ্বস্ততা রক্ষা করবে। এই চুক্তিনামায় যা রয়েছে এর প্রতি সর্বাধিক নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততা পোষণকারীর সাথে আল্লাহ রয়েছেন।

৪৭. আর এই লিপি কোনো অত্যাচারী বা অপরাধীর পক্ষে সহায়ক হবে না। যে যুদ্ধে বের হবে আর যে মদীনায় থাকবে উভয়ই নিরাপত্তার হকদার হবে। অবশ্য অত্যাচারী ও অপরাধী এর ব্যতিক্রম।

* আল্লাহ ঔ ব্যক্তির সাহায্যকারী যে নিষ্ঠার সাথে চুক্তি পালন করে ও আল্লাহকে ভয় করে। এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও তার সাহায্যকারী।

দ্র : মদীনা সনদের ধারাবাহিক এই বিবরণ পাওয়া যায় ইতিহাস ও সীরাতের বিভিন্ন কিতাবে। অবশ্য এর কিছু কিছু ধারা বিভিন্ন হাদীসের কিতাবেও সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। আবার সীরাত ও ইতিহাসের বিভিন্ন বর্ণনায় কিছু কম-বেশিও রয়েছে। এগুলোকে একত্রিত করে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. জিয়া আলউমরী তাঁর ‘আলমুজতামাউল মাদানী' কিতাবে। সেখানে তিনি এ দস্ত্তরের বর্ণনাসূত্র (সনদ) নিয়ে গবেষণার সারমর্মও পেশ করেছেন। মদীনা সনদ ও সংশ্লিষ্ট আলোচনার জন্য দেখুন কিতাবটির ১০৭ থেকে ১৩৬ পৃষ্ঠা।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

সফরে কসর ওয়াজিব
গীবত ও চুগলখোরীর ভয়াবহ পরিণাম
নামাযে সন্দেহসমূহ
মদীনা সনদ
রোজার গুরুত্ব ও উপকারিতা
বায়তুল্লাহ জিয়ারত ও হজ
প্রকৃত রোজা ও সংযমের কিছু ...
হজ্বঃ মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ ...
হজ্ব: বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের সোপ
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক

 
user comment