লায়াল্লাক্বুম তাত্তাকুন' (২: বাকারা-১৮৩) ...যেন তোমরা সচেতন বা নিরাপদ থাকতে পার। অর্থাৎ উপবাস পালনে দৈহিক মানষিক সমস্যা মুক্ত হয়ে নিরাপদ থাকা যায়। সুতরাং রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। উহা প্রকৃতির সাথে ওৎপ্রতভাবে জড়িত।
গাছপালা নির্দিষ্ট একটি মওসুমে পাতা ছেড়ে দিয়ে অথবা মালিকের নিয়ন্ত্রণে শাখা-প্রশাখা কেটে দিয়ে কিছুদিন উপোষ থেকে আবার নতুন যৌবন-জীবন লাভ করে পর্যাপ্ত ফল দান করে; মাটি নির্দিষ্ট একটি মওসুমে ঠন্ ঠনে শুষ্ক জীবনের পরে আবার পানি পেয়ে নতুন উর্বরা শক্তি ধারণ করে; নির্দিষ্ট একটি কালে পানি শুষ্ক হয়ে যায়। চন্দ্র-সূর্য নির্দিষ্ট একটি সময় আলো দান বন্ধ রাখে (গ্রহনকালে)। যাবতীয় সৃষ্টির ধারাবাহিক প্রবাহের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য উহাদের চিরাচরিত নিয়ম বন্ধ রাখে বা উল্টে যায়। এমন কি মেশিন পত্রও বছরে একবার ডাউন করলে পরবর্তী বছরের জন্য সাম্ভাব্য বিপর্যয় ও ঝুঁকি থেকে কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকা যায়।
অবচেতন হৃদয়-মনকে চেতনায় আনা এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উত্তম পন্থা উপবাস ধারণ। উপবাসে জীবনের উপলব্ধি, নিজকে চেনা-বোঝার অনুভূতি দেহের কাছাকাছি চলে আসে।
জেনে রাখা ভালো যে, প্রধানত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে আমরা কেহই উপোস থাকি না; শুধুমাত্র পানাহারের সাধারণ নিয়মটি উল্টে দেয়া হয়; যেমন:
ক. সচরাচর: ১. ভোরের নাস্তা ২. দুপুরের খাবার ৩. রাতের খাবারসহ দিনে যে কোন সময় খাবার গ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং রাতে ঘুমিয়ে থাকার দরুণ উপোস থাকা হয়।
খ. উপবাসকালে: ১. সন্ধ্যায় ইফতার ২. রাতের খাবার ৩. ভোর রাতের খাবারসহ রাতে যে কোন সময় খাবার খেতে পারে এবং দিনে মাত্র উপোস থাকা হয়।
অতএব ধরা যাক সাধারণত একটি মানুষ ২৪ ঘণ্টায় খাদ্যের মাধ্যমে ১০০০ ক্যালোরি গ্রহণ করে থাকে; রোজার সময়ও অনুরূপ এমনকি বিশেষ খাবার ব্যবস্থায় ততোধিক ক্যালোরিই গ্রহণ করা হয়। সুতরাং উপবাস বলতে প্রধানত খাবার সময়টি উল্টিয়ে দেয়া মাত্র। একজন রোজদারের উচিত শুধু খাদ্যই নয় বরং দৈনন্দিন কাজ কর্ম, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্রাম বা নিয়মিত রাতের ঘুমও উল্টিয়ে দেয়া। অর্থাৎ রোজদার সারা রাত অফিস-আদালত ইত্যাদি কাজকর্ম করে সূর্য উদয়ের আগেই পানাহার সমাপ্ত করে ঘুমিয়ে পরা এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পুনঃ পানাহার ও কাজকর্ম শুরু করা। অর্থাৎ উপবাসকালে সূর্যের আলো, বাতাসের সাথে দেহের চিরাচরিত সম্পর্কও ছিন্ন করতে হবে। এভাবে একটি মানুষ সারা জীবন এই নিয়ম মেনে চললে ৯০ থেকে ৯৯ ভাগ দৈহিক রোগ-শোক ইত্যাদি থেকে নিরাপদ এবং অকল্পনীয় দীর্ঘ জীবন ভোগ করতে পারে। কোন কোন সাধকদের ধারণা যে, যে লোক রাতে খাদ্য গ্রহণ না করে আজীবন কাল সূর্য ডোবার পূর্বেই পানাহার সেরে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে যায় এবং সূর্য উঠার পরে পানাহার শুরু করে এবং বছরে স্ব স্ব কল্যাণকর মাসটিতে রোজা পালন করে, সে সারা জীবন রোগ-শোক মুক্ত থেকে এমনকি শত শত বছরও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বর্তমান ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থায় সে রকম সুযোগ নেই। বয়স্কদের তেমন সময় সুযোগ না থাকলেও বাকি জীবনে চর্চা করা উচিত এবং পরবর্তী বংশধরদের বর্ণিত নিয়ম অবশ্যই অনুশীলন করানো উচিত। এতে সুস্থ জীবন ও দীর্ঘ আয়ুষ্কাল প্রত্যক্ষ করে শিশু-বৃদ্ধ, ধার্মিক-অধার্মিক, জাতিধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই স্বতঃর্ফূতভাবে এবং স্ব স্ব স্বার্থে উপবাস পালনে আগ্রহশীল হবে। ধর্ম-কর্মের ছোয়াব বা ফলাফল প্রধানত ইহ জীবনের শান্তির জন্যই; রাছুল ইহজীবনেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিন্তু শরিয়ত যাবতীয় ধর্ম-কর্মের ফল মৃত্যুর পরে পাবে বলে সমাজকে বিভ্রান্ত/প্রতারিত করেছে:
অ মান কানা ফি হাজেহী আম্মা, ফাহুয়া ফিল আখেরাতে আম্মা, অ আদাল্লু ছাবিলা (১৭: বনি-ইস্রাইল-৭২) অর্থ ইহকালে যে অন্ধ, পরকালেও সে অন্ধ বরং অধিকতর পথভ্রষ্ট।
‘...তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালরেখা থেকে ঊষার শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত উপবাস পূরণ কর...'। (২: বাকারা- ১৮৭)।
আয়াতে সুস্পষ্ট যে:
১. উপবাসকালে রাতের বেলা অবাধ পানাহার বলতে চিরাচরিত ঘুম অনুপস্থিত।
২. ফজরের আজানের পরেও সূর্য উঠার আগে অর্থাৎ দিন না হওয়া পর্যন্ত ছেহেরী খাওয়ার প্রচুর সময় থাকে।
৩. মাগরিবের নামাজের পরে সূর্য ডুবে অন্ধকার হলে ইফতার করার বিধান সুস্পষ্ট। কিন্তু প্রচলিত নিয়মে উভয় দিক থেকেই হাদিছের দোহাই দিয়ে তাড়াহুড়া করে কোরান বর্ণিত সীমা লঙ্ঘন করা হয়; এও বলা হয় যে, দেরিতে ইফতার করলে রোজা মাকরূহ হয়ে যায়।
প্রসঙ্গক্রমে এখানেই বলা উচিত যে, মহিলাদের মাসিকের সময় নামাজ, রোজা বা কোরান পড়া থেকে বিরত থাকা সঙ্গত নয়। কারণ কোরানে এমন কোন বিধান নেই এবং মহানবী কোরানের উপর হস্তক্ষেপ করত নতুন আইন তৈরী করেননি। উপরন্তু উহা সাধারণ আক্বল-জ্ঞানের বিষয় যে, নাপাকের উছিলায় ঐ সময় রোজা নামাজ নিষিদ্ধ হলে রান্না-বান্নাসহ যাবতীয় সাংসারিক কাজকর্মও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত এবং রোজাকালীন সময় পায়খানা প্রশ্রাবও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত; কারণ উহা মাসিকের চেয়েও নাপাক!
শরিয়তে রোজা ভঙ্গের প্রায় অর্ধশত বিধি বিধান থাকলেও আল্লাহর ছুন্নত কোরানের আলোতে শুধুমাত্র সহবাস ও পানাহার ব্যতীত রোজা ভাঙ্গার তৃতীয় কোন কারণ নেই।
তারাবী:
অর্থ বিরতি। রোজা বা দিনে খাদ্যের বিরতি মানেই তারাবী; প্রচলিত তারাবীর নামাজ সম্বন্ধে সমগ্র কোরানে তিলপরিমাণও আকার-ইঙ্গীত নেই। রাছুল কোরানের উপর হস্তক্ষেপ করত উহার বাহিরে, বিপরীত বা বিরুদ্ধ নিজস্ব কোন আইন তৈরি করেননি! করলে তার জীবন ধমনী কেটে ফেলা হতো বলে কোরানে ঘোষণা আছে (দ্র; ৬৯: হাক্বা- ৪৪-৪৭); সুতরাং প্রচলিত তারাবীর মতবিরোধী ৮/ ১০/১২ বা ২০ রাকাত সম্বলিত তারাবীর নামাজ শিয়া, ছুন্নীদের দল উপ-দলীয় রচিত ও আরোপিত বিদাতী সংযোজন। সারাদিন উপোশ থেকে ২০ রাকাতী নামাজী বোঝা মুছলিম জাতিকে কর্মহীন পঙ্গু করার সুদুর পরিকল্পনা মাত্র।
জ্ঞানীদের ভাবা উচিত যে, কখন, কোন্ সময়, কোন্ মুহুর্তে রোজা রাখবে, ভাঙবে, কিসে রোজা ভঙ্গ হয় তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কোরানে বর্ণিত আছে; পক্ষান্তরে ৮ থেকে ২০ রাকাতী বিশাল নামাজের বোঝা অহি করতে আল্লাহ কি ভুলে ছিলেন! না লজ্জা/ভয় পাচ্ছিলেন! শরিয়ত পরে যা রাছুলের নাম দিয়ে সংযোজন করেছে!!