নামাজ : খোদা প্রেমের সুন্দরতম প্রকাশ
সম্প্রতি ইরানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশতম জাতীয় ‘নামাজ' সম্মেলন। এ উপলক্ষ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গুরুত্বপূর্ণ বাণী দিয়েছেন । এ ছাড়াও বক্তব্য রেখেছেন সম্মেলনে উপস্থিত বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদরা। এ আলোচনায় নামাজ সম্পর্কে তাঁদের চিন্তাভাবনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরার হল।
"মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই মহান আল্লাহর এবাদত বা তাঁর দাসত্বের মুখাপেক্ষী। নিজেকে বিনম্র চিত্তে সব সৌন্দর্য ও কল্যাণের উৎস মহান আল্লাহর কাছে নিবেদিত করাও মানুষের সহজাত স্বভাব। ঐশী বা খোদায়ি ধর্মগুলো নামাজের বিধান চালু করে মানুষের খোদাদত্ত বা সহজাত তৃষ্ণা নিবারণের ব্যবস্থা করেছে। তা না হলে মানুষ তাদের সহজাত এই তৃষ্ণা মেটানোর জন্যে বিচ্যুতি বা বিভ্রান্তির অতলে হারিয়ে যেত। নামাজ মানুষকে সচেতন মন নিয়ে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হওয়া এবং আত্মাকে মার্জিত বা শুদ্ধ করার সুযোগ দেয় যাতে আত্মা পায় ঔজ্জ্বল্য। মহান আল্লাহর স্মরণ, নামাজ ও প্রার্থনা যখন মানুষের সামাজিক জীবনের প্রশান্তির সাথে একাকার হয় তখন ইসলামের অলৌকিকত্ব এর ধর্মীয় বিধিবিধানের সুশৃঙ্খল বিন্যাসে সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। " এ বক্তব্যগুলো ছিল ইরানের বিশতম জাতীয় নামাজ সম্মেলনে পাঠানো ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বাণীর অংশ বিশেষ। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বুশেহরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৬০০'রও বেশি বিশেষজ্ঞ ও চিন্তাবিদ।
মানুষ অপরিপূর্ণ সত্তা হিসেবে উন্নতি ও পূর্ণতাকামী। ইসলামের সুন্দরতম এবাদত নামাজ মানুষকে এই মহান লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়। তাই নামাজ মানুষের পূর্ণতাকামী সহজাত আকর্ষণের প্রকাশ। নামাজের ছায়ায় মানুষ নতুন নতুন উচ্চতর দিগন্ত পানে এগিয়ে যায়। এভাবে তারা এমন এক বাস্তবতার সাথে যুক্ত হয় যেখানে নেই কোনো সীমাবদ্ধতা, অন্ধকার, পংকিলতা ও ত্রুটি, বরং রয়েছে আলোর বন্যা। আল্লামা ইকবাল লাহোরি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, "এবাদত ও নামাজ অতি গুরত্বপূর্ণ এবং স্বাভাবিক একটি কাজ যার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিত্বের ক্ষুদ্র দ্বীপ তার অবস্থানকে জীবনের বৃহত্তর পরিবেশে আবিষ্কার করে। "
নানা ধর্মে এবাদত ও প্রার্থনার নানা রূপ দেখা যায়। যেমন, কেউ ভাষা বা কথার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা ও এবাদত করে । আবার অনেকেই নামাজ ও রোজার মাধ্যমে আল্লাহর এবাদত ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ইরানের নামাজ কায়েম সমিতির প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম মুহসেন কারায়াতি এবাদতকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করে বলেছেন, "কোনো কোনো এবাদত গোপনে সম্পন্ন করা ভাল। যেমন, "তাহাজ্জতের নামাজ গোপনে আদায় করা ভাল ও তৃপ্তিদায়ক। কোনো কোনো এবাদত গোপনে হোক্ বা প্রকাশ্যেই হোক্ত - উভয়ই উত্তম। যেমন, দরিদ্রদের সহায়তা করা ও নামাজ কায়েম করা। কোনো কোনো এবাদত অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনাময় এবং জাঁকজমকপূর্ণ। যেমন, আজান ও বারায়াত বা কাফের-মুশরিক বা অবিশ্বাসী ও অংশীবাদীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা। ইসলাম নামাজকে তুলে ধরতে আগ্রহী। নামাজ ইসলামের প্রতীক ও স্তম্ভ। নামাজের রহস্যগুলো আমাদের কাছে স্পষ্ট হলে আমরা বুঝতাম কেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নামাজকে তাঁর "চোখের আলো" বলে উল্লেখ করেছেন এবং কেন হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) বলেছেন যে, তিনি নামাজের আশেক বা প্রেমিক।"
ানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশতম জাতীয় ‘নামাজ' সম্মেলন। এ উপলক্ষ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গুরুত্বপূর্ণ বাণী দিয়েছেন । এ ছাড়াও বক্তব্য রেখেছেন সম্মেলনে উপস্থিত বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদরা। এ আলোচনায় নামাজ সম্পর্কে তাঁদের চিন্তাভাবনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরার হল।
"মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই মহান আল্লাহর এবাদত বা তাঁর দাসত্বের মুখাপেক্ষী। নিজেকে বিনম্র চিত্তে সব সৌন্দর্য ও কল্যাণের উৎস মহান আল্লাহর কাছে নিবেদিত করাও মানুষের সহজাত স্বভাব। ঐশী বা খোদায়ি ধর্মগুলো নামাজের বিধান চালু করে মানুষের খোদাদত্ত বা সহজাত তৃষ্ণা নিবারণের ব্যবস্থা করেছে। তা না হলে মানুষ তাদের সহজাত এই তৃষ্ণা মেটানোর জন্যে বিচ্যুতি বা বিভ্রান্তির অতলে হারিয়ে যেত। নামাজ মানুষকে সচেতন মন নিয়ে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হওয়া এবং আত্মাকে মার্জিত বা শুদ্ধ করার সুযোগ দেয় যাতে আত্মা পায় ঔজ্জ্বল্য। মহান আল্লাহর স্মরণ, নামাজ ও প্রার্থনা যখন মানুষের সামাজিক জীবনের প্রশান্তির সাথে একাকার হয় তখন ইসলামের অলৌকিকত্ব এর ধর্মীয় বিধিবিধানের সুশৃঙ্খল বিন্যাসে সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। "
এ বক্তব্যগুলো ছিল ইরানের বিশতম জাতীয় নামাজ সম্মেলনে পাঠানো ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বাণীর অংশ বিশেষ। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বুশেহরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৬০০'রও বেশি বিশেষজ্ঞ ও চিন্তাবিদ।
মানুষ অপরিপূর্ণ সত্তা হিসেবে উন্নতি ও পূর্ণতাকামী। ইসলামের সুন্দরতম এবাদত নামাজ মানুষকে এই মহান লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়। তাই নামাজ মানুষের পূর্ণতাকামী সহজাত আকর্ষণের প্রকাশ। নামাজের ছায়ায় মানুষ নতুন নতুন উচ্চতর দিগন্ত পানে এগিয়ে যায়। এভাবে তারা এমন এক বাস্তবতার সাথে যুক্ত হয় যেখানে নেই কোনো সীমাবদ্ধতা, অন্ধকার, পংকিলতা ও ত্রুটি, বরং রয়েছে আলোর বন্যা। আল্লামা ইকবাল লাহোরি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, "এবাদত ও নামাজ অতি গুরত্বপূর্ণ এবং স্বাভাবিক একটি কাজ যার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিত্বের ক্ষুদ্র দ্বীপ তার অবস্থানকে জীবনের বৃহত্তর পরিবেশে আবিষ্কার করে। "
নানা ধর্মে এবাদত ও প্রার্থনার নানা রূপ দেখা যায়। যেমন, কেউ ভাষা বা কথার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা ও এবাদত করে । আবার অনেকেই নামাজ ও রোজার মাধ্যমে আল্লাহর এবাদত ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ইরানের নামাজ কায়েম সমিতির প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম মুহসেন কারায়াতি এবাদতকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করে বলেছেন, "কোনো কোনো এবাদত গোপনে সম্পন্ন করা ভাল। যেমন, "তাহাজ্জতের নামাজ গোপনে আদায় করা ভাল ও তৃপ্তিদায়ক। কোনো কোনো এবাদত গোপনে হোক্ বা প্রকাশ্যেই হোক্ত - উভয়ই উত্তম। যেমন, দরিদ্রদের সহায়তা করা ও নামাজ কায়েম করা। কোনো কোনো এবাদত অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনাময় এবং জাঁকজমকপূর্ণ। যেমন, আজান ও বারায়াত বা কাফের-মুশরিক বা অবিশ্বাসী ও অংশীবাদীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা। ইসলাম নামাজকে তুলে ধরতে আগ্রহী। নামাজ ইসলামের প্রতীক ও স্তম্ভ। নামাজের রহস্যগুলো আমাদের কাছে স্পষ্ট হলে আমরা বুঝতাম কেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নামাজকে তাঁর "চোখের আলো" বলে উল্লেখ করেছেন এবং কেন হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) বলেছেন যে, তিনি নামাজের আশেক বা প্রেমিক।"
নামাজ মানুষের আত্মাকে প্রশান্ত ও গতিশীল করার এবং মনকে প্রফুল্ল করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন ও কর্মসূচি। মহান আল্লাহর প্রেরিত পুরুষরা এই গঠনমূলক মহান এবাদতের মাধ্যমে সৃষ্ট আত্মিক প্রশান্তি ও আত্মিক যোগাযোগের ছায়াতলেই বিশ্বকে একত্ববাদ এবং আল্লাহর স্মরণের মিষ্টি মধুর সৌরভে ভরিয়ে দিয়েছেন। নামাজ ছিল তাঁদের আহ্বান বা দাওয়াতের প্রাণকেন্দ্র। নবী হিসেবে মনোনয়ন লাভের পর হযরত মূসা (আঃ)কে আল্লাহর স্মরণের জন্য নামাজ কায়েমের নির্দেশ দেয়া হয়। হযরত ইব্রাহীম (আঃ)ও তাঁর দোয়ায় বলেছেন,
"হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা কবুল করুন আমাদের দোয়া"।
হযরত ঈসা (আঃ)কেও দোলনায় থাকা অবস্থায় নামাজ কায়েমের কথা বলা হয়েছিল। সুরা মরিয়মের ৩১ নম্বর আয়াতে হযরত ঈসা (আঃ)'র বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন , "আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে।"
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, "সব কিছুরই একটা চেহারা রয়েছে। ইসলামের চেহারা হল নামাজ। এই চেহারার পূর্ণতা ও সৌন্দর্য ধরে রাখার চেষ্টা কর।"
বুশেহরের জুমা'র ইমাম আয়াতুল্লাহ সাফায়ি বুশেহরি বলেছেন," নামাজ সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও পূর্ণতম এবাদত এবং ধর্মের স্তম্ভ। নামাজ ইসলামের বাস্তবতার ঐশী রূপ এবং মানুষের বিভিন্ন কাজের খোদায়ি অনুমোদনের মাধ্যম। এ ছাড়াও নামাজ পাপের চোরাবালি থেকে মানুষের মুক্তির পথ এবং মহান আল্লাহর দয়া, প্রেম ও অনুগ্রহের সীমানায় উপস্থিত থাকার সমতুল্য।"
মানুষ নামাজ পড়ার মাধ্যমে সব ধরণের কল্যাণ ও সৌন্দর্যের প্রেমিকে পরিণত হয়। নামাজ মানুষকে বিভিন্ন ধরণের নৈতিক গুণ ও শিষ্টাচার শেখায়। যেমন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সময়-সচেতনতা, অন্যদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো, পবিত্রতাকামী ও মানবদরদী হওয়া। এসব বিষয় মানুষের মনকে প্রশান্ত করে।
হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (সাঃ) বেহশত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর দীর্ঘকাল পৃথিবীতে চিন্তিত, অনুতপ্ত ও ক্রন্দনরত অবস্থায় ছিলেন। আল্লাহর দরবারে তওবা করার পর একদিন জিবরাইল (আঃ) তাঁদের কাছে আসলেন। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে দিন ও রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ উপহার হিসেবে নিয়ে আসার কথা তাঁদের জানালেন। পরদিন সূর্যোদয়ের আগেই আদম ও হাওয়া নামাজ আদায় করেন এবং নামাজের মাধ্যমে তারা মহান আল্লাহর সাথে আন্তরিক চিত্তে কথা বললেন। এ নামাজ শেষে তাঁরা পেলেন অসাধারণ প্রশান্তি।
সত্যিই নামাজ মানুষের জন্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার ও সবচেয়ে দামী উত্তরাধিকার।
ইরানের বিশতম জাতীয় নামাজ সম্মেলনের প্রধান শ্লোগান ছিল, "নামাজ, মসজিদ ও ইসলামের মানদণ্ড বা পাল্লা"। তাই বক্তারা নামাজ ও মসজিদের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করেছেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী মসজিদের বিষয়ে দায়িত্বশীল ও দূরদর্শী পরিচালনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং এ বিষয়টিকে মসজিদের প্রতি যুব সমাজকে আকৃষ্ট করার মাধ্যম বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, "নামাজের বরকতে মসজিদ হয় আলোকোজ্জ্বল, সুবাসিত এবং এখানে সত্যের বাণী, ধর্মের শিক্ষা, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রনীতি অন্য যে কোনো স্থানের চেয়ে মন-প্রাণকে বেশি আকৃষ্ট করে। এভাবে নামাজ মানুষের জীবনকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে খোদামুখী করে।"
ফরাসি জীব বিজ্ঞানী এ্যালেক্সিস ক্যারেল মানুষের মন ছাড়াও শরীর এবং রোগ-ব্যাধির ওপর প্রার্থনার বিস্ময়কর সুফল বা প্রভাবের কথা তুলে ধরেছেন। লর্ডসের চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রার্থনার মাধ্যমে ২০০টিরও বেশি অসুখ বা রোগের উপশম হওয়ার ঘটনা রেকর্ড করেছে বলে ক্যারেল জানিয়েছেন।
নামাজ সর্বশক্তিমান আল্লাহর তথা অশেষ শক্তি ও সব কল্যাণের উৎসের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে মানুষকে যোগায় অফুরন্ত শক্তি আর উদ্দীপনা। নামাজ প্রজ্ঞাময় বা বুদ্ধিবৃত্তিক আনন্দের অশেষ সাগরে অমূল্য রত্ন আহরণের আধ্যাত্মিক অভিযান। #