বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

হজ সফরের প্রস্তুতি

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান : প্রত্যেক জীবই মরণশীল। এই কথাটি সকল মানুষের জন্যও প্রযোজ্য। পৃথিবীতে কিছু মানুষ রয়েছেন বা থাকেন যারা কখনও মিথ্যা কথা বলেন না বরং যতটুকু সম্ভব অন্য মানুষের উপকার করেন। উঁনারাই পৃথিবীতে অনেক দেশে বা জায়গায় আউলিয়া বা ওলি বলে পরিচিত হন এবং মৃত্যুর পর উঁনারাই বেহেশতবাসী হন বা হবেন। আমাদের ধারণা যারা পরকালে বেহেশতবাসী হতে চান তাঁরা জীবনে অন্তত একবার আল্লাহর তৈরী পৃথিবীর প্রথম ঘর কাবা শরীফে যান। সেখানে গিয়ে তারা কাবা ঘর তোয়াফ, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ, চুমু করে বলেন- ‘‘হে আল্লাহ আপনি একমাত্র ক্ষমাশীল এবং আমার বা আমাদের সকল প্রকার দোষত্রুটি ক্ষমা করুন এবং আমার বা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবন অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ করে নিন। সমস্ত প্রশংসা শুধু আপনারই জন্য। আমার বা আমাদের কোন দোষত্রুটি থাকলে তা আপনি নিজ গুণে ক্ষমা করুন। আমরা সবাই আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থী ও আত্মসমর্পিত। হজব্রত পালনকারী সবাই মদিনাতেও যান এবং হযরত মুহাম্মদ (স.) এর রওযা মোবারক জিয়ারত করেন। সেখানে কয়েক দিন থেকে রসূল (স.) এর সাফায়ত ও মহান আল্লাহর করুণা প্রাপ্তির জন্য প্রাণঢালা প্রার্থনা ও মোনাজাত করেন। আমাদের জীবন সম্বন্ধে আমরা তেমন কিছুই জানিনা, শুধু আল্লাহর কুরআন এবং রসূল (স.) হাদিসের মাধ্যমে কিছু জ্ঞান প্রাপ্ত হই।
এ বছর হজযাত্রীদের নিয়ে ২৭ আগস্ট হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে। এই ফ্লাইট চলবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আর ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ৮ অক্টোবর থেকে। গত ৬ আগস্ট বুধবার সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে ধর্মসচিব চৌধুরী মোঃ বাবুল হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এবার মোট ৯৮ হাজার ৭৬২ জন হজে যাচ্ছেন। এর মধ্যে এক হাজার ৬০০ জন যাবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায়। অন্যরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। সচিব বলেন, ‘এবার সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি নেই। যেসব সমস্যা ছিল, তা সমাধান করা হয়েছে। আশা করছি, সফলভাবেই হজ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।'
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ অনুষ্ঠিত হবে ৪ অক্টোবর। বিমান বা অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট শিডিউলের কারণে গড়ে ১৫ দিন আগে মক্কা গিয়ে হজ পালনের ৭ থেকে ১০ দিন পর দেশে ফিরে আসতে হয়। যেহেতু হজের অনেক দিন আগেই আপনাকে সৌদি আরব যেতে হবে, তাই হজে যাওয়ার আগেই যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে নিতে হবে
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ সম্পাদন : আপনি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে চাইলে নিম্নে বর্ণিত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করুন- ২৯ মের মধ্যে আপনি নিশ্চয় সমুদয় টাকা যে কোনো অনুমোদিত ব্যাংকে একত্রে জমা দিয়েছেন। এবার সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত নির্ধারিত ফরম পূরণ করে তা ঘোষিত তারিখের মধ্যে জমাকৃত টাকার রসিদসহ জেলা প্রশাসকের অফিসে জমা দেবেন। জমা দেয়া টাকার রসিদ ও অন্যান্য কাগজপত্র দেখিয়ে অফিস কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে হজ ক্যাম্প থেকে বিমানের টিকিট সংগ্রহ করবেন। আপনার জমা দেয়া টাকা যেসব খাতে ব্যয় করা হয় তা নিম্নরূপ-১. বিমান ভাড়া। ২. এম্বারকেশন ফি। ৩. ভ্রমণ কর। ৪. ইন্স্যুরেন্স ও সারচার্জ (ব্যাজ কার্ড, পুস্তিকা, কবজি-বেল্ট, আইটি সার্ভিস ইত্যাদি)। ৫. মুয়াল্লিম ফি। ৬. মক্কা ও মদিনা শরিফের বাড়িভাড়া। ৭. সৌদি আরবে অবস্থানকালীন খাওয়া-দাওয়া ও কোরবানির খরচ, যা হাজীদের বাংলাদেশেই দিয়ে দেয়া হয়।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ সম্পাদন : বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী ক্যাটাগরি নির্বাচন করেছেন। সরকার অনুমোদিত যেসব এজেন্সির সুনাম রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কোনো একটি বেছে নিয়েছেন। তাদের নির্ধারিত টাকা চুক্তিমতো পরিশোধ করবেন। টাকা পরিশোধ করে পাকা রসিদ নিয়ে নেবেন। কী কী সুবিধা আপনি তাদের কাছ থেকে পাবেন তা নিশ্চিতভাবে জেনে নিন। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়, এমন এজেন্সিকে কখনও টাকা দেবেন না। এজেন্সিটি সরকার অনুমোদিত কিনা জেনে নিন। সৌদি সরকারের অনুমোদন আছে কিনা তা জানতে পারবেন িি.িযধললরহভড়ৎসধঃরড়হ.পড়স- সাইটের মাধ্যমে।
হজযাত্রীদের করণীয় : স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মেনিনজাইটিস-ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধক টিকা বাধ্যতামূলক। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা নিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। জেলা পর্যায়েও হাজী ক্যাম্পের সুষ্ঠু ব্যবস্থা রয়েছে। মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ হজে যেতে পারবেন না। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনেচ্ছুদের জন্য প্রথম পর্যায়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়গুলোতে সুবিধামতো সময়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে হজ যাত্রার তিন দিন আগে হজ ক্যাম্পে অবস্থানকালে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর কোনো কোনোটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সৌদি আরব গমনের আগেই এক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এসব প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে মনোযোগের সঙ্গে অংশগ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও কোনো কোনো বিজ্ঞ আলেম অথবা মসজিদ কর্তৃপক্ষ হজ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। সেখানেও অংশগ্রহণ করা উচিত।
সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা হজ অফিস থেকে পাঠানো অনুমতিপত্রে নির্ধারিত যে তারিখ থাকবে সেদিন পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে হজ ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করবেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। হজ ক্যাম্পে রিপোর্ট করার সময় সরকারি ব্যবস্থাপনার হাজীরা পাসপোর্ট, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার ডুপ্লিকেট রসিদগুলো, মেডিকেল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী সঙ্গে আনবেন। হজ ক্যাম্প ডরমেটরিতে শুধু হজযাত্রীদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। তাই আত্মীয়স্বজন সঙ্গে আনা উচিত নয়। তবে নিচতলায় আত্মীয়স্বজন তাদের হজযাত্রীকে নানাবিধ দাফতরিক কাজে সহায়তা দিতে পারেন। হজ ক্যাম্পে পান খাওয়া বা ধূমপান করা নিষিদ্ধ। প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের জন্য রয়েছে তিনটি ক্যান্টিন, যা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। তাই বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। টিকিট, পাসপোর্ট, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য কাগজপত্র খুবই যতেœর সঙ্গে সংরক্ষণ করবেন। এগুলো হারিয়ে গেলে হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। মালামাল বহনের জন্য যে লাগেজ নেবেন তার গায়ে নাম, পাসপোর্ট নং ও ঠিকানা লিখে নেবেন। কমপক্ষে ২ সেট ইহরামের কাপড়, ২ সেট পায়জামা-পাঞ্জাবি, ২টি লুঙ্গি, ২টি টুপি, ২টি গেঞ্জি, একটি তোয়ালে, ২টি গামছা সঙ্গে নেবেন। শীত মৌসুম হলে দু-একটি গরম কাপড় বিশেষ করে চাদর সঙ্গে নেবেন। মহিলা হজযাত্রীদের জন্য উত্তম হচ্ছে সালোয়ার-কামিজ নেয়া। ছুরি, কাঁচি, সুই ইত্যাদি ধারালো জিনিস হাতব্যাগে বা সঙ্গে নেয়া নিষেধ। তবে লাগেজে নেয়া যাবে। আপনার কোনো অসুখ থেকে থাকলে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পর্যাপ্ত ওষুধ সঙ্গে নেবেন। তবে ব্যবস্থাপত্র অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন। অন্যথায় জেদ্দা এয়ারপোর্টে সমস্যায় পড়তে পারেন। মনে রাখবেন, বাংলাদেশ হজ মিশন জটিল কোনো রোগের চিকিৎসা দেয় না। সৌদি আরবে ওষুধের দাম প্রচুর।
তাই এ ব্যাপারে বিশেষভাবে যত্নবান হবেন। অন্যদিকে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বহন সে দেশে দ-নীয় অপরাধ। অন্যের দেয়া ওষুধও নিজের ব্যাগে নেবেন না। আপনি যদি প্রথমে মক্কা প্রবেশের ইচ্ছা করেন তাহলে বিমানের শিডিউলের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বিমানে ওঠার আগেই ইহরাম বাঁধার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নেবেন। ইহরামের কাপড় ব্যাগের ভেতর না দিয়ে তা পরে নেবেন। শুধু ইহরামের নিয়তটা বাকি রাখবেন। বিমানে ওঠার আগেও ইহরামের নিয়ত করা যায়, তবে তা সুন্নতের বরখেলাফ। সুন্নত হচ্ছে মিকাতে পৌঁছে ইহরাম বাঁধা বা ইহরামের নিয়ত করা। বিমান মিকাত অতিক্রম করার সময় বলে দেয়া হয়, তখন নিয়ত করে নেবেন। আপনি যদি প্রথমে মসজিদে নববী জিয়ারতের নিয়ত করে থাকেন এবং নিশ্চিত হন, প্রথমেই আপনি মদিনায় যেতে পারবেন, তাহলে এ সময় ইহরাম বাঁধবেন না। কেননা মদিনা থেকে মক্কায় আসার পথে মদিনাবাসীর যে মিকাত পড়বে, সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবেন।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

বায়তুল্লাহ জিয়ারত ও হজ
প্রকৃত রোজা ও সংযমের কিছু ...
গীবত ও চুগলখোরীর ভয়াবহ পরিণাম
সফরে কসর ওয়াজিব
হজ্বঃ মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ ...
হজ্ব: বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের সোপ
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক
হাজিদের উদ্দেশ্যে ইরানের ...
মিরাজুন্নবীর (সা.) তাৎপর্য ও ...
দাসত্ব-উবুদিয়্যাহ

 
user comment