-রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী
৪ঠা জুন ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর মাযারে দেশ ও বিদেশ থেকে সমবেত হয়েছিল লক্ষাধিক ভক্ত ও অনুরক্ত জনতা। নজিরবিহীন প্রেমভক্তির অসাধারণ শক্তি ও দৃঢ়তার অঙ্গীকারে মেতে উঠেছিল এ বেহেশতে যাহরার প্রতিটি প্রান্ত। ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী (মুদ্দাযিল্লুহুল অলী) স্বয়ং এ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতার উদ্দেশে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন এবং সমবেত জনতার উদ্দেশে তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। রাহবার আায়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তাঁর ভাষণে বিশ্বের জাতিসমূহের মধ্যে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও কৌতুহলের প্রতি ইশারা করেন এবং ‘ইসলামী শরীয়ত' এবং এ শরীয়তের আলোকে ‘প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা'কে হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর আদর্শের দুইটি মূল ভিত্তি হিসাবে অভিহিত করেন। তিনি ইরানী জাতি এবং রাষ্ট্রের কর্ণধারদের প্রতি মরহুম ইমামের এ ‘মডার্ন সিভিল-পলিটিক্যাল' ব্যবস্থাপত্রের প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমেরিকা কর্তৃক বিঘœ সৃষ্টি ও ঢিল নিক্ষেপ এবং মহান ইমামের আন্দোলনের চেতনা ও দিক-দর্শন ফিকে হয়ে যাওয়া- এ বিষয় দুটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জস্বরূপ- যা ইরানী জাতি জেনেবুঝে সফলভাবে উতরে যাওয়ার মাধ্যমে মরহুম ইমামের গৌরবপূর্ণ ও সৌভাগ্যময় পথকে অব্যাহত রাখবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তাঁর ভাষণের প্রথম পর্বে বিভিন্ন জাতির বিশেষ করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মুসলমান সাধারণ চিন্তায় ইমাম খোমেইনী ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতি ক্রমবর্ধমান আকর্ষণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা হিসাবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, আজ ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতার ইন্তেকালের ২৫ বছর পরেও বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিশেষ করে ইসলামী জাহানের যুব ও সুশীল সমাজ ইসলামী বিপ্লবে দ্বীনি প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা, বেলায়াতে ফকীহ মতবাদ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অধিকতর জানবার জন্য আগ্রহ ও কৌতুহল সহকারে ধাবিত হচ্ছে। তিনি দুশমনদের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ওপর অনবরত ও ব্যাপক ‘প্রোপাগান্ডা ও রাজনৈতিক' আক্রমণকে ইসলামী বিপ্লবের প্রতি কৌতুহল তীব্রতর হওয়ার একটি কারণ হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, ইসলামী বিশ্বের সর্বজনীন চিন্তা-চেতনা আজ অতীতের তুলনায় আরো বেশি এ শাসনব্যবস্থার-যা মুহুর্মুহু ও অভূতপূর্ব আক্রমণের শিকার-প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে জানতে এবং এর দৃঢ়তা ও সাফল্যের রহস্যগুলো অনুধাবন করার জন্য উদগ্রীব।
রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী ইসলামী জাগরণ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনার উন্মেষকে ইসলামী বিপ্লবের প্রতি জাতিসমূহের কৌতুহল ও উপলব্ধির একটি ফসল হিসাবে গণ্য করেন। তিনি জোরারোপ করে বলেন, সা¤্রাজ্যবাদী ফ্রন্ট ভ্রান্তির মধ্যে থেকে ধারণা করে যে, ইসলামী জাগরণকে তারা নির্মূল করে দিয়েছে। কিন্তু যে বোধ ও উপলব্ধি থেকে ইসলামী জাগরণের উদ্ভব তা মুছে যাওয়ার নয়। শীঘ্রই হোক আর বিলম্বে হোক তা বিস্তার লাভ করবেই। তিনি ইরানী জাতির অবিচল অবস্থান এবং উত্তরোত্তর এগিয়ে যাওয়াকে বিশ্ববাসীর কাছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র এবং দ্বীনি প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা কৌতুহলের বিষয়ে পরিণত হওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করে বলেন, ইসলামী জগতের যুব প্রজন্ম আজ এ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে চায় যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র কেন এবং কীভাবে দুশমনের নির্মম নিষ্ঠুর সামরিক ও রাজনৈতিক আক্রমণ ও অপপ্রচারণা আর মার্কিনীদের নজিরবিহীন অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে এবং রক্ষণশীলতা নয় বরং দিনের পর দিন সদর্পে ও শক্তিমত্তার সাথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে?
রাহবার ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতি আকর্ষণের কারণসমূহ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আরো বলেন, মুসলিম বিশ্বের জাতিসমূহ, যুবসমাজ এবং বিদগ্ধজনেরা মহাকাশ গবেষণায় ইরানী জাতির উন্নতিকে প্রত্যক্ষ করে, নব উদ্ভাবিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের অঙ্গনে বিশ্বের প্রথম ১০টি উন্নত দেশের সারিতে ইরানকে দেখতে পায়, বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের দ্রুততায় বিশ্বের গড় অনুপাতের সূচকে ইরানকে ১৩ গুণ বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন দেখতে পায় এবং প্রত্যক্ষ করে যে, আঞ্চলিক রাজনীতিতে ইরানের কথাই শেষ কথা, তাছাড়া জবরদখলকারী যায়নবাদী ইহুদি সরকারের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়ে মজলুমের পক্ষে ও জালিমের বিপক্ষে মোকাবিলা করে যাচ্ছে- এসব বাস্তবতা যে কোন মানুষকেই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ব্যাপারে জানতে আরো কৌতুহলী হতে আহ্বান জানায়।
তিনি বিগত ৩৫ বছরে ৩২টি উৎসবমুখর ও সফল নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং ২২ বাহমান (বিপ্লব বিজয় বার্ষিকী) ও ‘বিশ্ব কুদ্স দিবস' উপলক্ষে লক্ষ-কোটি জনতার উৎসাহ ও উদ্দীপনাময় ঢল নামাকে বিদেশে জনমনে ইরান সম্পর্কে আকর্ষণের আরেকটি বাস্তব কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা [হয়ত] এসব ঘটনায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। যার কারণে এসবের বিশালতা ও গুরুত্ব আমাদের চোখে তেমন ধরা পড়ে না। কিন্তু এসব মোহনীয় সত্য বিষয়গুলো বিশ্ববাসী ও অন্যান্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয় এবং তাদের চোখে জিজ্ঞাসার জন্ম দেয়।
রাহবার এ সমস্ত নান্দনিক ও উদ্দীপনাময় বাস্তবতাসমূহকে বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা হযরত ইমাম খোমেইনীর নিপুণ চিন্তা ও হাতে গড়া অভিনব কীর্তি হিসাবে আখ্যায়িত করেন। তাঁর বক্তব্যের এ পর্বে কেন্দ্রবিন্দু ছিল একটি বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলা। তা হলো অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যেন আমরা পথ হারিয়ে না ফেলি। আর সঠিকভাবে পথ চলার জন্যও সেই মহান দক্ষ ও নিপুণ স্থপতির (ইমাম খোমেইনীর) মূল নকশা ও সুপরিকল্পনা আমাদের প্রয়োজন।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ‘ইসলামী বৃদ্ধিবৃত্তি'র ভিত্তিতে একটি ‘সিভিল-পলিটিক্যাল' ব্যবস্থা প্রবর্তন করাকে ইমাম খোমেইনীর মূল কীর্তি হিসাবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, লেজুড়, দুর্নীতিগ্রস্ত ও একনায়কতান্ত্রিক শাহানশাহী' শাসনব্যবস্থার পতন ঘটানো এবং উক্ত শাসনব্যবস্থার জঞ্জালসমূহ অপসারণ করা ছিল এক মহা পরিকাঠামো গড়ে তোলার বুনিয়াদস্বরূপ, যা হযরত ইমাম খোমেইনী অসম্ভব সাহসিকতা ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন দ্বারা সম্পাদন করেন।
রাহবার হযরত ইমাম খোমেইনীর প্রতিষ্ঠিত এই ‘সিভিল-পলিটিক্যাল' ব্যবস্থায় দুইটি মৌলিক এবং পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একটি হলো ইসলামী শরীয়ত, যা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের রূহ ও প্রাণসম। আর দ্বিতীয়টি হলো কার্যভারকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ন্যস্ত করা এবং প্রজাতন্ত্র কায়েম করা। তিনি বলেন, কেউ যেন মনে না করে যে, ইমাম খোমেইনী নির্বাচন অনুষ্ঠানকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে গ্রহণ করে ইসলামী চিন্তা-দর্শনের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন। কারণ, নিঃসন্দেহে নির্বাচন ও প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি ইসলামী শরীয়ত থেকে নিঃসরণ করা না যেত, তাহলে আমাদের স্পষ্টবাদী ও কঠোর ইমাম এ বিষয়টি ব্যক্ত করতেন।
রাহবার বলেন, ইসলামী শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য চারটি মূল উপাদান অত্যাবশ্যক। যথা : স্বাধীনতা, মুক্তি, ন্যায়পরায়ণতা ও আধ্যাত্মিকতা। তিনি আরো বলেন, ইসলামের সৌভাগ্যময় শরীয়তের প্রতি পয়বন্দ থাকার ফলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক মুক্তি ছাড়াও সাম্রাজ্যবাদের নাগপাশ থেকে জাতির মুক্তি তথা স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়, ন্যায়বিচার বাস্তবায়িত হয় এবং আধ্যাত্মিকতা উপহার পাওয়া যায়।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এরপর ইমাম খোমেইনীর আদর্শের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ইমামের আদর্শে পেশীশক্তি ও অস্ত্রের জোরে অর্জিত কোন ক্ষমতাই গ্রহণীয় নয়। অবশ্য জনগণের রায়ে নির্বাচিত ক্ষমতা ও শক্তি সম্মানের পাত্র ও গ্রহণীয় বটে। এর বিপরীতে কেউ আড় হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। আর যদি দাঁড়ায়, তবে তার এ কাজ হবে একটি ফিতনা।
রাহবার উপস্থিত জনসমষ্টি ও গোটা জাতির দৃষ্টিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে বলেন, ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর পথ অব্যাহত রাখা এবং তাঁর লক্ষ্যসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন অন্য যে কোন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বাস্তবায়নের মতোই চ্যালেঞ্জপূর্ণ ও নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। আমরা যদি সেগুলো চিহ্নিত করতে ও অপসারিত করতে না পারি তাহলে এ পথ অব্যাহত রাখা কঠিন কিংবা অসম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ ও বাইরের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখপূর্বক জোরারোপ করেন যেন যুবক ও বিশিষ্টজনরা এবং বিশেষজ্ঞ বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাবিদরা তা নিয়ে পর্যালোচনা করেন। তিনি বাইরের চ্যালেঞ্জের ব্যাখ্যায় বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনবরত ঢিল নিক্ষেপের প্রতি ইশারা করেন এবং বলেন, অবশ্য কিছু কিছু পশ্চিমা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ অভিমত দিয়েছেন যে, এসব বিঘœ সৃষ্টি করে কোন ফায়দা হবে না। কিন্তু আমেরিকা পূর্ববৎ তার এসব নীল-নকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাহবার ভাষণের আরেক পর্বে বিশ্বের রাজনৈতিক ধারাসমূহ এবং ব্যক্তিত্বসমূহের ব্যাপারে আমেরিকার মূল্যায়নের একটি চিত্র তুলে ধরে বলেন, মার্কিনীরা এসব ধারা ও ব্যক্তিত্বসমূহকে মোট তিন শ্রেণিতে ভাগ করে থাকে। ১. যারা আজ্ঞাবাহী, ২. যারা আজ্ঞাবাহী নয় এবং ৩. যারা মার্কিনী আধিপত্যকে সহ্য করে না। আজ্ঞাবাহীদের প্রতি মার্কিন নীতি হলো সর্বাত্মক সমর্থন ও সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাওয়া। বিশ্বের স্বৈারাচারী একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো- যেখানে নির্বাচন ও জনগণের রায়ের কোন সুযোগ নেই তারাই মার্কিনীদের আজ্ঞাবাহী হিসাবে পূর্ণ সমর্থন ভোগ করে থাকে। আর দ্বিতীয় শ্রেণি সম্পর্কে তিনি বলেন, মার্কিনীরা অভিন্ন স্বার্থের খাতিরে আপাতত এদের সাথে তাল মিলিয়ে চলে। কিন্তু সুযোগ পেলেই পিঠে ছুরি বসিয়ে দিতে কুণ্ঠা করে না। অধিকাংশ ইউরোপীয় রাষ্ট্রকে তিনি এ শ্রেণির উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করেন। আর তৃতীয় শ্রেণিটি অর্থাৎ যারা মার্কিনী আধিপত্যকে বরদাশ্ত করে না তাদের সম্পর্কে রাহবার বলেন, এ শ্রেণির বিরুদ্ধে মার্কিনীদের নীতি হলো সম্ভাব্য সকল সুযোগ সীমাহীনভাবে ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে আঘাত হানা এবং তাদেরকে উৎখাত করা। অবশ্য ইরাক ও আফগানিস্তানে আক্রমণ চালিয়ে প্রভূত ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পর থেকে বর্তমানে সামরিক আক্রমণ মার্কিন নীতিতে অগ্রাধিকারে নেই।
রাহবার মার্কিন আধিপত্য অস্বীকারকারী রাষ্ট্রসমূহের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদেরকে সক্রিয় করে তোলা মার্কিনীদের আরেকটি নীতি হিসাবে চিহ্নিত করেন বলেন, আজ ইরাক, আফগানিস্তান, কতিপয় আরব রাষ্ট্র এবং আমাদের প্রিয় ইরান তাদের এ নীতির প্রধানতম বলির শিকার।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এসব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মার্কিনীদের আরেকটি নীতি হিসাবে ‘শাসনক্ষমতা নিয়ে মতপার্থক্য ও দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি' এবং ‘জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিমূলে স্খলন ঘটানো' বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে আমেরিকানরা ইরানী জাতির বিরুদ্ধে এই সবগুলো অঙ্গনে পরাস্ত হয়েছে এবং এ জাতির দৃঢ় ঈমান ও সজাগ অবস্থানের কারণে সামরিক অভ্যুত্থান, বিশৃঙ্খলাকারীদের মদদ যোগানো, জনগণের একাংশকে রাস্তায় নামানো এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টিসহ তাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বাইরের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ব্যাখ্যা উপস্থাপনের পর এবার রাষ্ট্রের সামনে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, এ চ্যালেঞ্জ এবং মহা হুমকি তখনই দেখা দেবে যখন জাতি এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাবৃন্দ হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর আন্দোলনের ‘চেতনা ও দিক-দর্শন'কে দৃষ্টি থেকে সরিয়ে রাখবে এবং ভুলে যাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি শত্রু-মিত্র নির্ণয়ে ভুল করা এবং প্রধান ও গৌণ শত্রু চিনতে অক্ষম থাকার প্রতি ইশারা করে বলেন, প্রত্যেকেরই সাবধান থাকতে হবে এবং বিভিন্ন ঘটনায় মূল শত্রু থেকে উদাসীন থাকলে চলবে না। শত্রুকে মূল ও গৌণ হিসাবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ টেনে রাহবার শিয়াদের বিরুদ্ধে নাদান তাকফিরি, ওয়াহাবি ও সালাফি গ্রুপগুলোর জঘন্য কার্যক্রমের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে যে, মূল শত্রু হচ্ছে বিজাতীয়দের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং তারাই যারা এ সকল জঙ্গি গ্রুপকে উস্কানি দেয় এবং বিপুল অর্থকড়ি ও সমরাস্ত্র দিয়ে মাঠে নামায়। তিনি আরো বলেন, অবশ্য কেউ যদি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ওপর আক্রমণের খেয়াল পোষণ করে তবে নিশ্চিতভাবে এ জাতির বজ্রকঠিন মুষ্ঠাঘাত খাবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বাস করি, দুশমনের কালো হাত যা মুসলমানদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লেলিয়ে দিয়েছে তারাই হচ্ছে আমাদের মূল শত্রু। এসব ধোঁকা খাওয়া দলগুলো নয়।
ইসলামী বিপ্লবের নেতা জাতীয় ঐক্য ও সংহতিকে হারানো, আলস্য ভর করা ও চেতনা বিবর্জিত হওয়া, পরিশ্রমে অনীহা, হতাশা ও নিরাশায় আচ্ছন্ন হওয়া এবং ‘আমরা পারি না' বা ‘আমরা পারি নি'- এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণা চেপে বসাকে ইসলামী শাসনব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের আরো কয়েকটি দৃষ্টান্ত হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন, যেমনটা প্রিয় ইমাম বলে গেছেন, ‘আমরা পারি'। আর জাতির ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় এবং প্রচেষ্টাশীল ব্যবস্থাপনাই সমস্যার জট খুলে ফেলতে ও সমাধান দিতে সক্ষম হবে।
ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তাঁর ভাষণের শেষ পর্বে গুরুত্বারোপ করে বলেন, মরহুম ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর বরকতপূর্ণ নাম এবং এ মহান স্থপতির প্রণীত নকশাই আল্লাহর অশেষ কৃপায় ইরানী জাতিকে সকল পর্যায়ে সহায়তা করবে এবং আশা, উদ্দীপনা ও চেতনা জাগানোর মাধ্যমে প্রিয় ইরানের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে।