আহলে বাইত বার্তা সংস্থা (আবনা) : গত ১৮ই জানুয়ারি রোববার, জায়নবাদী ইসরাইলী সৈন্যরা কেনিত্রা অঞ্চলে হিজবুল্লাহ'র সদস্যদেরকে বহনকারী একটি গাড়ীতে হামলা চালালে ৬ জন শহীদ হয়। হামলার জবাবে গত বুধবার শেবা খামার এলাকায় জায়নবাদী ইসরাইলের একটি গাড়ী বহরে হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। এতে জায়নবাদী ইসরাইলের অন্তত ১৭ জন সেনা নিহত এবং বহু সৈন্য আহত হয়। লেবানিজ দৈনিক আল-আখবারে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে হিজবুল্লাহ'র এ অভিযানের কৌশলগত বিভিন্ন বার্তা তুলে ধরা হয়েছে।
(১) হামলার মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ইসরাইলকে এ বিষয়টি স্মরণ করে দিতে চেয়েছে যে, ‘জবাবহীন হামলার দিন শেষ'। (অর্থাত আগে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরাইলের অনেক হামলা ছিল জবাবহীন; সেদিন শেষ হয়ে এসেছে।)
(২) হিজবুল্লাহ তার দাপট প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য তার বিরুদ্ধে পরিচালিত যে কোন অভিযানের জবাব সমপরিমাণে অথবা বাড়িয়ে প্রদান করবে। আর এ বিষয়টির প্রতিই ‘সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ' ইঙ্গিত করেছেন।
(৩) গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ের প্রতি হিজবুল্লাহ গুরুত্বারোপ করতে চায় যে, ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ তাদের দূর্বল হওয়ার কারণ তো হবেই না বরং এর বিপরীতে তাদের শক্তি ও সামর্থ আরো বৃদ্ধি পাবে।
(৪) হিজবুল্লাহ ইসরাইলকে বোঝাতে চায় যে, প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রস্তুতি ইসরাইলের ধারণার উর্ধ্বে ব্যাপক এবং অধিক গতিসম্পন্ন। ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ অভিযান, প্রতিরোধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে চালানো ইসরাইলি অভিযানের জবাবে মাত্র দু' সপ্তাহের মধ্যে চালানো হল।
(৫) হয়তবা এ বার্তাটি হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন; এটি সিরিয়া ও লেবাননের পারস্পারিক সহযোগিতার প্রতি গুরুত্বারোপ করছে। অবশ্য এভাবেও বলা যায় যে, ফিলিস্তিন থেকে লেবানন ও সিরিয়া পরিশেষে ইরান পর্যন্ত এরা সকলেই পরস্পরের সহযোগী। পাশাপাশি ইসরাইলের সামনে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা যে, এ অভিযানে শুধুমাত্র কিনেত্রা'র শহীদদের -ইরানের বপ্লবী রক্ষী বাহিনী'র সদস্য জেনারেল মুহাম্মাদ আলী আল্লাহদাদীও যাদের মাঝে ছিলেন- প্রতিশোধ নয় বরং এরচেয়ে বড় কোন টার্গেট ফলো করা হয়েছে। আর ইসরাইলের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, ইরান ইসরাইল সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
(৬) সফল এ অভিযানটি ইসরাইলের নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে পরিচালিত হল। ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন এর মাধ্যমে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, তারা ইসরাইলের অভ্যন্তরিন রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে সক্ষম। নিঃসন্দেহে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বর্তমান প্রধান এবং আগত যে কোন প্রধানের মাঝে পার্থক্য করে না। লেবানন ও সিরিয়ার শত্রুতার বিষয়ে তারা সকলেই একই রেখায় দণ্ডায়মান, শুধুমাত্র পার্থক্য হচ্ছে তাদের শত্রুতার পরিমাণে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এ অভিযান ইসরাইলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ‘বেনিয়ামিন নাতানেয়াহু'র পতনের কারণ হবে।
(৭) এ অভিযান ছিল তাদের জন্য একটি জবাব; যারা মনে করতো যে, চলমান ইরানের পরমাণু বিষয়ক সংলাপের কারণে হিজবুল্লাহ এখন কিনেত্রা হামলার প্রতিশোধকে এড়িয়ে যাবে। মজার বিষয় হল দ্রুত ও সূক্ষ্ম পরিকল্পনা মাফিক প্রদত্ত এ জবাব ইরানের পক্ষে সংলাপে অংশগ্রহণকারীর হাতে একটি ইতিবাচক পয়েন্ট হিসেবে জমা হয়েছে; আর তা হল, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব এখন তেহরানের দিকে ঝুঁকবে।
(৮) এ অভিযানের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে, সিরিয়া হচ্ছে রেড লাইন। আর সন্ত্রাসী দলগুলোকে সমর্থন ও সহযোগিতা এবং সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি জবাবহীন থাকবে না। প্রেক্ষাপট বদলেছে।
(৯) হিজবুল্লাহ, ইরান ও সিরিয়ার সাথে হামাস ও জিহাদসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন ইসলামি মুভমেন্টের একাত্মতা ঘোষণা এবং কিনেত্রা হামলার পর এ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অতএব, অভিযানটি মূলতঃ মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের আওতায় ঘটেছে অর্থাত আরব-ইসরাইল যুদ্ধ।
(১০) এর মাধ্যমে হিজবুল্লাহ লেবাননের অভ্যন্তরিন বিভিন্ন দলকে বোঝাতে চেয়েছে যে, ইসরাইলের সাথে সংঘর্ষ লেবাননের বিষয় থেকে আলাদা। তারা যখন চাইবে তখন এ ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তাই যদি সেটা ১৭০১ নম্বর ইশতেহার পরিপন্থীও হয়।
২০০৬ সালে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যকার যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১৭০১ নম্বর ইশতেহার অনুমোদন লাভ করে।
নিঃসন্দেহে মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হিজবুল্লাহ'র শক্তি পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষতঃ সিরিয়ায় ৪ বছরের কঠিন যুদ্ধে হিজবুল্লাহ নতুন শক্তি লাভ করেছে।#
source : www.abna.ir