আবনা ডেস্ক : রাজধানীর বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআই) বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নাজমুস সাকিব। ক্ষুদে এই বিজ্ঞানীর তৈরি চশমা পরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা শুধু দেখতেই পাবেন না তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরার কিছুটা স্বাদ পাবেন। একা একাই চলতে-ফিরতে পারবেন। সাদাছড়ি লাগবে না, রাস্তা পার হতে লাগবে না সাহায্যের হাত। জরুরি প্রয়োজনে অসহায় হয়ে বসেও থাকতে হবে না দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের।
সাকিবের চশমাটির নাম স্মার্ট কন্ট্রোলার গ্লাস। এটি তৈরির জন্য সে গতবছরের ২ নভেম্বর জিতে নিয়েছে সৌদি আরবের প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাংলাদেশের নাজমুস সাকিব এই শ্রেষ্ঠ শিশু উদ্যোক্তার পুরস্কার পেয়েছে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এ পুরস্কার হস্তান্তর করা হয় তাকে।
নামে স্মার্ট কন্ট্রোলার গ্লাস হলেও এই চশমায় আদতে কাচ নেই। এর বদলে আছে আলট্রাসনিক ও ইনফ্রারেড সেন্সর। এ দুটিকে অন্যান্য ছোট ছোট যন্ত্রাংশের সঙ্গে এমনভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা আশপাশের ১ থেকে ১০ মিটার এলাকার মধ্যে থাকা যেকোনো বাধার সংকেত পাবেন। ঘরের মধ্যে ৩ মিটার আর রাস্তায় নামলে ১০ মিটারের মধ্যে বাধাহীন এলাকার কথা জানিয়ে দেবে এই চশমা। এর সঙ্গে থাকা সেন্সর ১৮০ ডিগ্রি অর্থাৎ সামনের দিকের নাক বরাবর এবং ডানে ও বাঁয়ে থাকা যেকোনো বস্তু, গাড়ি বা কাঠামো সম্পর্কে চশমা ব্যবহারকারীকে সংকেত দেবে।
ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক এই বিশেষ চশমার জন্য সাকিবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তারা বলেন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রকল্প হিসেবে এটা অবশ্যই ভালো কাজ, প্রথম সারির কাজ। আইডিয়া হিসেবে এবং বাণিজ্যিক কার্যকারিতার দিক থেকেও এটা দারুণ। তবে মৌলিকত্বের স্বীকৃতির জন্য এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করতে হবে। সেখানে দেখাতে হবে এটা কী প্রক্রিয়ায় কাজ করে এবং অন্যদের সঙ্গে এর মৌলিক পার্থক্যটি কোথায়।
সাকিব অবশ্য এরইমধ্যে ‘স্মার্ট কনট্রোলার গ্লাস’ জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট নিয়ে রেখেছে। চশমা তৈরি কাজটির শুরু তার ১৩ বছর বয়সে। তাকে প্রেরণা জোগায় একটি ঘটনা: ‘আমার একজন অন্ধ প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি একাই লিফটে হাতড়ে হাতড়ে উঠতে ও নামতে পারতেন। সাদাছড়ি ব্যবহার করে কষ্ট করে চলাফেরা করতে দেখেছি তাঁকে। তখনই ভাবলাম, ওনার মতো মানুষদের জন্য কিছু একটা করা উচিত।’ এই ভাবনা থেকেই কাজে নেমে পড়ে সাকিব। দরকারি তথ্য পেতে ভরসা কেবল ইন্টারনেট। ওর বন্ধুরাও সবাই খুদে বিজ্ঞানী। এর আগে একক ও দলগতভাবে জাতীয় স্তরের বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রকল্পের পুরস্কারও জুটেছিল তার ঝুলিতে। অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হয়। চশমাটির সঙ্গে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সাকিব ইতিমধ্যে স্মার্টফোনের উপযোগী অ্যাপস তৈরি করেছে। এই পদ্ধতিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি একাই তাঁর গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। শুধু চশমাই নয়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যাতে একা একা মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারেন, সে জন্যও অ্যাপস বানিয়েছে সাকিব। এটাকে আরোও সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিঙ্গ সাকিব আর তাই চায় শুধু সবার মঙ্গল কামনা।#
রাজধানীর বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআই) বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নাজমুস সাকিব।
রাজধানীর বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআই) বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নাজমুস সাকিব।
source : abna24