আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা –আবনা- : লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রধান প্রতিরোধ আন্দোলনের আহতদের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ দিবসে বৈরুতে প্রদত্ত এক ভাষণে –যা আল-মানার চ্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে- নাকবা (মহাবিপর্যয়) দিবসের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন: মুসলিম উম্মাহ এখনো ঐ নাকবা (বিপর্যয়) থেকে রঞ্জিত। যেভাবে ব্রিটেন ফিলিস্তিনিদের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছিল সেভাবে প্রতিরোধ আন্দোলনের অবশিষ্ট জীবন কেড়ে নিতে মধ্যপ্রাচ্যে এসেছে আমেরিকা ও তার দোসররা।
তিনি বলেন: ১৯৪৮ সালের বিপর্যয় (ফিলিস্তিন দখল) এবং বর্তমানে যে বিপর্যয় আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চায় এ দু’য়ের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ১৯৪৮ সালের বিপর্যয় ও বর্তমান সময়ের বিপর্যয়ের মধ্যে পার্থক্য হল; এখন নারী-পুরুষ, বিভিন্ন সরকার ও সেনাবাহিনী, বিভিন্ন দল ও মুভমেন্ট, জাগ্রত ও শক্তিশালী জনতাসহ সতর্ক ও দৃঢ় সংকল্পের অধিকারী সকলেই আমেরিকা ও তার মিত্রদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে প্রস্তুত।
গত ৪৮ ঘন্টায় বাগদাদে রক্তক্ষয়ী বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়ে সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন: বাগদাদে দায়েশের (আইএসআইএল)বর্বরোচিত হামলার সাক্ষী আমরা। নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়ে দায়েশ গর্বিত হয়। প্রতিরোধ আন্দোলনের মোকাবেলায় পরাজিত হয়ে দায়েশ গ্রাম ও শহরের সাধারণ মানুষ হত্যার মাধ্যমে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়।
আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আলকায়দকে ব্যবহার করেছিল -এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করে হিজবুল্লাহ প্রধান বলেন: আজকের দিনে আমেরিকা, ইহুদিবাদী ইসরাইল ও পাশ্চাত্য একটি মৌলিক সমস্যার সম্মুখীন। আর সমস্যাটি হলো প্রতিরোধের অক্ষ। ইরান, সিরিয়া, লেবানন এবং ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনকে নিয়ে এ অক্ষ গড়ে উঠেছে।
প্রতিরোধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে আমেরিকা ও দায়েশ। ইহুদিবাদী ইসরাইল-বিরোধী প্রতিরোধ চেতনা বিনষ্ট করার লক্ষ্যে আমেরিকা ও তার মিত্ররা মধ্যপ্রাচ্যে তাকফিরি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী দায়েশসহ বর্বর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে লালন করছে। এর মাধ্যমে তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিরোধ আন্দোলনের অক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এবং একে ধ্বংস করা।
নাসরুল্লাহ বলেন: ইসরাইলি আগ্রাসীরা লেবাননের অবকাঠামোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং প্রকৃত ইসলামি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে সোচ্চার ওয়াহাবি চিন্তাধারা। আমেরিকার এক নামধারী জেনারেল সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে, আমেরিকা হিজবুল্লাহ’র সাথে যুদ্ধের জন্য দায়েশকে সৃষ্টি করেছে এবং এর অস্ত্র ও অর্থ যোগানের দায়িত্ব আমেরিকার মিত্রদের কাঁধে। এ সময় মার্কিন ঐ জেনারেল প্রতিরোধ আন্দোলন ও হিজবুল্লাহ’র ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার বাজেট ব্যয় করার কথাও উল্লেখ করেছিলেন।
সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ’র সংযোজন: হে মুসলমানরা! যা কিছু বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ঘটছে তা শিয়া-সুন্নি’র যুদ্ধ নয়। তারা মানুষকে এমনটা বোঝাতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হল প্রতিরোধ আন্দোলনের মোকাবেলায় ও গণজাগরণকে ধ্বংস করতে বিভিন্ন গ্রুপকে এখানে আনা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান যুদ্ধ, নৃশংস বিভিন্ন গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ; আমেরিকা প্রতিরোধ আন্দোলনকে ধ্বংসের নিমিত্তে যাদেরকে এখানে এনেছে।
আমেরিকা ও তাকফিরি গ্রুপগুলোর মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে হিজবুল্লাহ প্রধান বলেন: যদি কেউ মনে করে যে, মধ্যপ্রাচ্যে তাকফিরি ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সাথে আমেরিকার কোন সম্পর্ক নেই, তবে বুঝে নিতে হবে তারা শত্রুকে সঠিকভাবে চিনতে পারেনি। কেউ কেউ বলে এ সকল তাকফিরি গ্রুপ উগ্র চিন্তার অধিকারী কিন্তু আমেরিকার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই এবং তাদেরকে রুখতে অবশ্যই আমেরিকার সাহায্য নেয়া দরকার। তাদের জবাবে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের মন্তব্য উল্লেখ করতে চাই।
আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন ২০০৯ সালে মার্কিন সিনেটের বিশেষ কমিটির সামনে শপথ গ্রহণকালে বলেছিলেন: ‘আমাদের মনে রাখা উচিত যে, যাদের সাথে আমরা আজ যুদ্ধ করছি, ২০ বছর আগে আমরা তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি এবং সত্যিই আমরা এ কাজ করেছি। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুদ্ধে –আফগানিস্তানের উপর হামলার পর- পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগের সাথে আমরা মুসলিম বিশ্ব থেকে মুজাহিদ সংগ্রহের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাই। এরপর সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশ থেকে ওয়াহাবি চিন্তাধারার অধিকারী লোকাদেরকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য আফগানিস্তানে স্থানান্তর করি।
ইয়েমেন ইস্যু’তে সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন: একটি শক্তিতে পরিণত হওয়ার পরই ইয়েমেনের সাথে আমেরিকার সমস্যা বাধে। আমেরিকা দায়েশের অজুহাতে পূনরায় প্রত্যাবর্তন করে। ইরাকের জনগণ মার্কিনীদেরকে বের করে দেয়া সত্ত্বেও পূনরায় দায়েশের অজুহাতে তারা ফিরে আসে। সিরিয়াতে ফিরে আসার জন্যও দায়েশের অজুহাতকে কাজে লাগায় তারা। নিজ মতলব হাসিলের লক্ষ্যে তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করছে আমেরিকা।ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদারিত্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি আধিপত্যের বিরোধিতা করে যেসব মানুষ তাদের সঙ্গেই পাশ্চাত্যের সমস্যা রয়েছে। পাশ্চাত্য কখনই ঐক্যবদ্ধ ইসলামি উম্মাহ দেখতে চায় না।
ঐ সকল খ্রিষ্টানরা যারা এখনো আমেরিকার উপর নির্ভরশীল তাদের উদ্দেশ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী প্রধান বলেন: মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের মাঝে কোন পার্থক্য রাখে না আমেরিকা। নিজেদের স্বার্থে পৌঁছানোই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।#
source : abna24