হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও কুরআন
কেউ যদি ধরে নেয় কুরআন কোন মানবীয় চিন্তার ফল তাহলে সে যে মানব এটা বানিয়েছে তার চিন্তাধারার উপর খানিকটা বিশ্লেষণ চালাতে চাইবে। সত্যি বলতে কিছু বিশ্বকোষ এবং অনেকগুলো বইয়ে দাবী করা হয়েছে কুরআন মুহাম্মাদ সা. এর হ্যালুচিনেশন (অলীক কিছু দেখা বা দৃষ্টিভ্রম-hallucinations) এর ফল। এসব দাবী যদি সত্য হতো – কুরআন যদি মুহাম্মাদ সা. এর মানসিক অস্থিরতার ফল হতো তবে কুরআনেই সেটার প্রমাণ দেখা যেত। এমন প্রমাণ আছে কি?আছে কি নেই তা জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে ঐ সময়ে তাঁর (মুহাম্মাদ সা.) এর মনে কেমন চিন্তাধারা চলছিল এরপরে দেখতে হবে কুরআনে সেসব চিন্তার প্রতিফলন আছে কিনা।
সবার জানা, মুহাম্মাদ সা. এর খুব কঠিন জীবন পার করেছেন। একজন ছাড়া তাঁর সকল মেয়েই তাঁর পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর একজন অতিপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্ত্রী ছিলেন যাঁর সাথে তিনি অনেক বছর অতিবাহিত করেছিলেন, সেই স্ত্রী তাঁর আগেই নয় শুধু বরং এক অতি সন্ধিক্ষণে ইনতিকাল করেন (হযরত খাদিজা রা.-অনুবাদক)। তিনি এক অতি-গুণান্বিতা মহিলাই ছিলেন বটে কারণ প্রথম ওহী আসলে মুহাম্মাদ সা. ভীত অবস্থায় তাঁর কাছে ছুটে যান।
নিশ্চিতভাবে, বর্তমান যুগেও কারো পক্ষে এমন একজন আরবকে খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য হবে যিনি বলবেন, “আমি এত ভয় পেলাম যে বাড়িতে আমার স্ত্রীর কাছে ছুটে গেলাম।” আরবদের আচরণ এমন নয়। তবুও মুহাম্মাদ সা. এমনটি করে যথেষ্ট স্বস্তি পেয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী এমনই প্রভাবশালী ও দৃঢ়মনোবলসম্পন্না ছিলেন। যদিও মুহাম্মাদ সা. এর মনে যেসব চিন্তাধারা চলত এগুলো তার উদাহরণ হিসেবে অল্প তবে আমার যুক্তি প্রমাণের জন্যে যথেষ্ট বলিষ্ঠ।
কুরআনে এ ঘটনাবলির একটিও উল্লেখিত হয়নি- তাঁর সন্তানদের মৃত্যু, তাঁর সুপ্রিয় সঙ্গিনী স্ত্রীর মৃত্যু বা ওহী নাজিলের কারণে তাঁর প্রাথমিক আশঙ্কা যা তিনি স্ত্রীল সাথে গভীরভাবে ভাগাভাগি করেছিলেন-এগুলোর কোনটিই নয়। কিন্তু ব্যাপারগুলোতে নিশ্চয়ই তিনি জীবনভর আঘাত পেয়েছিলেন, জ্বালাতন, দুঃখ ও কষ্ট বোধ করেছিলেন। নিশ্চিতভাবেই, কুরআন যদি তাঁরই মানসিক চিন্তায় সৃষ্টি হতো তাহলে কুরআনের পাতায় পাতায় অন্যান্য বিষয়ের সাথে সাথে এগুলোও বর্ণিত বা কমপক্ষে উল্লেখিত হতো।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআন
যদি বৈজ্ঞানকি দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআনকে পরযালোচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে পবিত্র কুরআনে এমন কিছু আছে যা অন্য কোন ধর্মগ্রন্থে নেই । এমনকি অন্য কোন ধর্মে ও নেই। বিজ্ঞানীদের দাবীতো এটাই। মহাবিশ্বের চলনকৌশল ও কার্যকারিতা বিষয়ে বর্তমানে অনেক লোক বিভিন্ন ধারণা ও তত্ব প্রদান করছেন। এ লোকরা সর্বত্রই আছেন। বিজ্ঞানী সম্প্রদায় কিন্তু তাদের কথা শুনতে যাননা। কারণ বিগত শতাব্দীজুড়ে বিজ্ঞানীমহল ‘মিথ্যা প্রমাণের পরীক্ষা’ (test of falsification)র দাবী জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, “আপনার কোন তত্ব থাকলে সেটা দিয়ে আমারেদ বিরক্ত করবার দরকার নেই যদিনা আপনি এমন কোন উপায় বা তত্ব প্রদান করেন যেটা দিয়ে আপনার তত্ব ভুল কি ঠিক তা যাচাই করা যাবে।” এমন একটা টেস্টের কারণেই গত শতকের শুরুতে বিজ্ঞানী মহল আইনস্টাইনের মত মেনেছিলেন। তিনি একটা নতুন তত্ব নিয়ে এসে বললেন, ” আমার মতে মহাবিশ্ব এভাবে কাজ করে আর এই তিন উপায়ে আমি ভুল কিনা তা যাচাই করা যাবে”।
বিজ্ঞানী মহল তাঁর মতবাদকে পরীক্ষাধীন করে রাখলেন। ছয় বছরের মধ্যেই মতবাদটি তিনটি পরীক্ষাই উতরে গেল। এতেই প্রমাণ হয়না তিনি মহান ছিলেন, বরং প্রমাণ হয় তিনি মনোযোগ আকর্ষণের উপযুক্ত ছিলেন কারণ তিনি বলেছিলেন, “এটা হচ্ছে আমার ধারণা, আপনি আমাকে ভুল প্রমাণ করতে চাইলে এটা বা ওটা করুন।”
আর কুরআনেরও ঠিক এটাই আছে- মিথ্যা প্রমাণের পরীক্ষা (falsification tests)। কিছু হচ্ছে পুরানো (এই অর্থে যে সেগুলো ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে) এবং কিছু (পরীক্ষা) এখনো বিদ্যমান রয়েছে। যদি এই বইটা যা দাবী করছে তা না হয় তাহলে একে ভুল প্রমাণ করতে হলে এটা বা ওটা করতে হবে। প্রকৃত ব্যাপার হলো ১৪০০ বছরেও কেউ এটা বা ওটা
করতে পারেনি। ফলে প্রমাণ হয় কুরআন এখনো সত্য এবং নির্ভুল বলে বিবেচিত হয়।
..চলবে..