বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

সংগীত ও বাদ্য (الموسيقى و الغناء)

সংগীত ও বাদ্য (الموسيقى و الغناء)

আয়াতুল্লাহ্ আল উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর কাছে ইস্তিফতা (জিজ্ঞাসা) সমূহের উত্তর

প্রশ্ন ১ : হারাম বাদ্য ও সংগীত থেকে হালাল বাদ্য ও সংগীত পৃথক করা ও চেনার মাপকাঠি কি? ক্ল্যাসিকাল সংগীত ও বাদ্য কি হালাল? যদি আমাদের এতদসংক্রান্ত একটি নিয়ম বলে দিতেন তাহলে অতি উত্তম হতো।

উত্তর : যে সব সংগীত ও বাদ্য (যন্ত্রসংগীত) প্রচলিত নিয়ম মতে বাতিল (অনৈতিক) আমোদ-প্রমোদের জলসা ও আসরের উপযোগী আনন্দ দানকারী (প্রবৃত্তির তাড়না সৃষ্টিকারী) যন্ত্রসংগীত (Music) ও গানের অন্তর্ভুক্ত হবে তা হারাম গান ও যন্ত্র সংগীত বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে ক্ল্যাসিকাল ও আধুনিক যন্ত্রসংগীত ও গানের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বিষয়বস্তু (অর্থাৎ হারাম ও হালাল গান ও যন্ত্রসংগীত) আলাদাভাবে চিহ্নিতকরণ মুকাল্লাফ অর্থাৎ শরীয়তের বিধিবিধান পালন যার ওপর অপরিহার্য তার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ন্যস্ত। আর এ ক্ষেত্রে মুকাল্লাফের দৃষ্টিভঙ্গি হতে হবে প্রথানুযায়ী ও প্রচলিত নিয়মমাফিক। আর যে বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত হারাম নয় (শরীয়তের দৃষ্টিতে) তাতে কোন আপত্তিও নেই।

প্রশ্ন ২ : যে সব ক্যাসেট ইসলামী প্রচার সংস্থা অথবা অন্য ইসলামী প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষ থেকে অনুমতি ও ছাড়পত্র পেয়েছে সেগুলো মনোযোগসহ শোনার বিধান কি হবে? একতারা,ভায়োলিন,বাঁশী,সানাই ইত্যাদির ন্যায় বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করার বিধান কি হবে?

উত্তর : মনোযোগ দিয়ে গান ও যন্ত্রসংগীতের ক্যাসেট শোনার বৈধতা স্বয়ং মুকাল্লাফ কর্তৃক (স্বতন্ত্রভাবে) চিহ্নিতকরণ ও নির্ধারণ প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল। তাই যদি সে দেখতে পায় ক্যাসেটগুলোতে ‘গিনা’ (غناء),বাতিল অনৈতিক আমোদ-প্রমোদের জলসা ও আসরের উপযোগী প্রবৃত্তির তাড়নাসৃষ্টিকারী যন্ত্রসংগীত নেই অথবা বাতিল বিষয়বস্তু ও বক্তব্য বর্ণিত হয়নি তাহলে এগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু নিছক ইসলামী প্রচার সংস্থা অথবা অন্য যে কোন ইসলামী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন (এ সব ক্যাসেট শোনার) বৈধতার শারয়ী দলিল নয়। অসার অনৈতিক আমোদ-প্রমোদ ও পাপাচারের জলসা ও আসরের উপযোগী আনন্দ ও সুখদানকারী ফালতু যন্ত্রসংগীত ও বাদ্য বাজানোর ক্ষেত্রে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা জায়েয নয়। তবে যুক্তিসংগত (শরীয়ত সম্মত) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ঐ সব বাদ্যযন্ত্রের বৈধ ব্যবহারে কোন বাধা নেই এবং বাস্তব নমুনা (কোন গান,যন্ত্রসংগীত ও বাদ্য হারাম এবং কোনটি হালাল তা) নির্ধারণ করা স্বয়ং মুকাল্লাফের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিরুচির ওপর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন ৩ : অনৈতিক ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারীবাদ্য ও যন্ত্রসংগীত বলতে কি বুঝায়? অসার ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত (الموسيقى المطربة اللهوية) থেকে বৈধ বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত কিভাবে চিহ্নিত করা যাবে?

উত্তর : যেহেতু অসার (অনৈতিক) ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী বাদ্য,যন্ত্রসংগীত ও গানের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা অবৈধ আমোদ-প্রমোদ ও পাপাচারের জলসা ও আসরের উপযোগী সেহেতু তা কোন একভাবে মানুষকে তার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বের করে দেয় (অর্থাৎ তার মধ্যে এক ধরনের অস্বাভাবিক অবস্থা,ভাব ও তালের উদ্ভব ঘটায়)। আর বিষয়বস্তু নির্ধারণ ও চি‌হ্নিতকরণের ক্ষেত্রে উরফ (عرف) অর্থাৎ প্রচলিত সাধারণ নিয়মের দিকেই প্রত্যাবর্তন ও রুজু করতে হবে।

প্রশ্ন ৪ : বাদ্য বা যন্ত্রসংগীতের বিধান অর্থাৎ তা বৈধ বা অবৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে বাদ্যযন্ত্রের বাদক,(বাদ্যযন্ত্র বাজানোর) স্থান অথবা (বাদ্যযন্ত্র বাজানো এবং সংগীত পরিবেশনের) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কোন সরাসরি প্রভাব ও ভূমিকা আছে কি?

উত্তর : হারাম যন্ত্রসংগীত হচ্ছে ঐ যন্ত্রসংগীত যা অসার (অনৈতিক) আমোদ-প্রমোদ ও পাপাচারের জলসা ও আসরের উপযোগী ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী। হারাম ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী গান ও বাদ্যের শিরোনামে অথবা অন্য কোন হারাম বিষয়ের শিরোনামে কোন সংগীত ও বাদ্য অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কখনও কখনও বাদ্যযন্ত্রের বাদক,সুরবিশিষ্ট কথা বা বাণী,(সংগীত পরিবেশন ও বাদ্যযন্ত্র বাজানোর) স্থান এবং আরো অন্যান্য অবস্থার সরাসরি প্রভাব ও ভূমিকা থাকতে পারে। যেমন উপরোল্লিখিত বিষয়াদির কারণে যন্ত্রসংগীত ও গানের মাধ্যমে যদি কোন অকল্যাণ সাধিত হয় তাহলে তা অবৈধ গান ও বাদ্য অথবা অন্য কোন হারাম বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

প্রশ্ন ৫ : যন্ত্রসংগীত ও গান হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে মাপকাঠি কি কেবল তা অসার (অনৈতিক) ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী হওয়া অথবা গান ও যন্ত্রসংগীতে যে পরিমাণ উত্তেজনা রয়েছে সেটিও কি বিবেচনা করতে হবে? আর যে সংগীত ও বাদ্য শ্রোতাকে দুঃখ ও ক্রন্দন করতে উদ্বুদ্ধ করে সেটারই বা বিধানকি হবে? যে সব গজল ত্রিমাত্রিক সুর আকারে এবং বাদ্য সহকারে বাজানো হয় তা গাওয়া ও শোনারই বা বিধান কি হবে?

উত্তর : এ ক্ষেত্রে মাপকাঠি হচ্ছে সকল বৈশিষ্ট্য ও গুণসমেত বাদ্য ও যন্ত্রসংগীতের প্রকৃতি অনুযায়ী এর গুণাগুণ ও অবস্থা বিচার করা এবং এ বাদ্য ও সংগীত কি এক ধরনের অসার (অনৈতিক) আমোদ-প্রমোদের জলসা ও আসরের উপযোগী ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী বাদ্য ও সংগীত না অন্য কিছু-এ বিষয়টি বিবেচনায় আনা।

অতএব,যে বাদ্য ও সংগীত স্বভাবতঃই অসার (অনৈতিক) আমোদ-প্রমোদের জলসা ও আসরের উপযোগী হবে তা হারাম বলে গণ্য হবে চাই তাতে উত্তেজনা থাকুক বা না থাকুক অথবা তা শ্রোতাকে শোক ও ক্রন্দন করতে উদ্বুদ্ধ করুক বা না করুক। আর যন্ত্রসংগীত ও বাদ্য সহকারে গজল যদি ‘গিনা’ আকারে অথবা অনৈতিক জলসা ও আসরের উপযোগী করে পরিবেশন করা হয় তাহলে এমতাবস্থায় তা হারাম হবে।

প্রশ্ন ৬ : ‘গিনা’ কি? তা কি মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত শব্দ বা ধ্বনি না বাদ্যযন্ত্রসমূহ থেকে নিঃসৃত সকল ধ্বনি ও শব্দ?

উত্তর : ‘গিনা’ মানুষের ঐ শব্দ বা ধ্বনিকে বলে যদি তা কণ্ঠে সৃষ্ট অনৈতিক আমোদ-প্রমোদের জলসা ও আসরোপযোগী ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী ধ্বনি ও শব্দ হয়ে থাকে। আর এ বৈশিষ্ট্যসমেত ‘গিনা’ গাওয়া এবং তা শোনা হারাম। কিন্তু যে সবধ্বনি ও শব্দ বাদ্যযন্ত্রোদ্ভূত তা ‘গিনা’ নয়। তবে যদি এ সব শব্দ ও ধ্বনি অনৈতিক আমোদ-প্রমোদের আসর ও জলসার উপযোগী বাদ্যযন্ত্রোদ্ভূত হয় অথবা এগুলোর ওপর যদি অনৈতিক আমোদ-প্রমোদ ও ইন্দ্রিয়ানন্দ দানকারী বাদ্য ও যন্ত্রসংগীতের শিরোনাম আরোপ করা যায় তাহলে এ সব শব্দ ও ধ্বনি হারাম হয়ে যাবে।

প্রশ্ন ৭ : বিয়ের অনুষ্ঠান ও উৎসবে যে সব পাত্র ও উপকরণ বাদ্যযন্ত্র নয় সেগুলো পিটিয়ে আওয়াজ ও ধ্বনি তোলা এবং গান গাওয়া কি জায়েয হবে? যদি এ সব শব্দ ও ধ্বনি অনুষ্ঠানের বাইরে পুরুষদের কানে পৌঁছায় তাহলে এ ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কি হবে?

উত্তর : ঐ সব জিনিস ব্যবহারের গুণাগুণ,বৈশিষ্ট্য ও পদ্ধতির ওপর বৈধতা নির্ভরশীল। ঐতিহ্যবাহী বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠান ও মজলিসে প্রচলিত পদ্ধতিতে যদি ঐ সব জিনিস (পাত্র,থালা-বাসন ইত্যাদি) গানের বাদ্য,সুর ও ধ্বনি তোলার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় আর তা অনৈতিক ও অশালীন বলে গণ্য না হয় এবং এতে যদি কোন ক্ষতি ও অমঙ্গল না হয় তাহলে এতে কোন অসুবিধা হবে না।

প্রশ্ন : ৮ : বিয়ের অনুষ্ঠানে মহিলাদের দফ বাজানোর বিধান কি হবে?

উত্তর : অশালীন-অনৈতিক তরল ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি প্রদানকারী বাদ্য বাজানোর জন্য বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা জায়েয হবে না। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে ‘গিনা’ সমেত বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা বৈধ।

প্রশ্ন ৯ : বিয়ের রাতসমূহে আনন্দ-উল্লাস করার উপকরণ ও মাধ্যম (বাদ্যযন্ত্র) ব্যবহার করা কি জায়েয? আর যদি তা জায়েয হয় তাহলে পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে এ সব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের নিয়ম-কানুন ও সীমারেখা কি হবে?

উত্তর : বিশেষ করে বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে মহিলাদের ক্ষেত্রে ‘গিনা’ পরিবেশন করতে ও গাইতে কোন বাধা নেই। ‘গিনা’ পরিবেশনকালে ঐ সব অনুষ্ঠানে যা প্রচলিত ঠিক সেভাবে মহিলাদের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেই। তবে বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠান ব্যতীত সব অনুষ্ঠানে ‘গিনা’ গাওয়া ও পরিবেশন করা কোন অবস্থায় জায়েয হবে না।

প্রশ্ন ১০ : বিয়ের অনুষ্ঠানে রেডিও অথবা টেপরেকর্ডারের (অডিও ক্যাসেট) মাধ্যমে ‘গিনা’ শ্রবণ করা কি বৈধ?

উত্তর : বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে ‘গিনা’ শ্রবণ করতে কোন বাধা নেই।

প্রশ্ন ১১ : ঘরে ‘গিনা’ শ্রবণ করা কি জায়েয? শ্রবণকারী যদি ‘গিনা’ দ্বারা প্রভাবিত না হয় তাহলে এ ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কি হবে?

উত্তর : নিরঙ্কুশভাবে গিনা শ্রবণ করা হারাম চাই তা শ্রবণকারী একাকী ঘরে বসেই শুনুক অথবা অন্যের উপস্থিতিতে শুনুক;চাই সে ‘গিনা’ শোনার কারণে প্রভাবিত হোক বা না হোক।

প্রশ্ন ১২ : যারা সম্প্রতি বালেগ হয়েছে তারা যদি,যিনি নিরঙ্কুশভাবে বাদ্য অর্থাৎ যন্ত্রসংগীত এমনকি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রেডিও-টেলিভিশন কর্তৃক সম্প্রচারকৃত বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত হারাম হওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া দেন তাঁর অনুসরণ করে তাহলে এ ক্ষেত্রে বিধান কি হবে? যা শ্রবণ করা জায়েয তা শ্রবণ বৈধ হওয়া সংক্রন্ত ওয়ালী-ই ফকীহর ফতোয়া কি সরকারী বিধি-বিধান হিসেবে জায়েয হওয়ার জন্য যথেষ্ট,নাকি এ ক্ষেত্রে মারজা-ই তাকলীদের ফতোয়া অনুযায়ী আমল করা তাদের জন্য ওয়াজিব হবে?

উত্তর : বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত শোনা জায়েয বা না-জায়েয হওয়া সংক্রান্ত ফতোয়া সরকারী হুকুম-আহকামের অন্তর্ভুক্ত নয়;বরং এটি হচ্ছে একটি ফিক্হী শারয়ী মাসআলা। প্রত্যেক বয়োঃপ্রাপ্ত ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব হচ্ছে এ ক্ষেত্রে নিজ মারজা-ই তাকলীদের ফতোয়া অনুসরণ করা। তবে যে বাদ্য ও যন্ত্র-সংগীত অশালীন-অনৈতিক স্ফূর্তি,আমোদ-প্রমোদ ও পাপের জলসার উপযোগী ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি প্রদানকারী বাদ্য-ও যন্ত্রসংগীতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যদি উক্ত বাদ্য ও যন্ত্র-সংগীতের অন্য কোন ক্ষতিকারক প্রভাব না থেকে থাকে তাহলে তা হারাম হওয়ার কোন কারণই থাকতে পারে না।

প্রশ্ন ১৩ : যন্ত্রসংগীত এবং গিনার অর্থ কি?

উত্তর : গিনা হচ্ছে অশালীন-অনৈতিক আমোদ-প্রমোদ ও স্ফূর্তির আসর ও জলসার উপযোগী করে কণ্ঠস্বর ও ধ্বনি সৃষ্টি করা। তাই ‘গিনা’ পাপ কার্যসমূহের অন্তর্ভুক্ত এবং তা গায়ক-গায়িকা এবং শ্রোতার জন্য হারাম হবে। অতএব,তা যদি অশালীন-অনৈতিক স্ফূর্তি ও আমোদ-প্রমোদের আসরোপযোগী করে পরিবেশন করা হয় তাহলে তা বাদক ও শ্রোতা উভয়ের জন্যই হারাম হবে। কিন্তু যদি তা অশালীন-অনৈতিক স্ফূর্তি ও আমোদ-প্রমোদের আসরোপযোগী না হয় তাহলে তা জায়েয হবে এবং এতে কোন অসুবিধা হবে না।

প্রশ্ন ১৪ : আমি এমন এক স্থানে কাজ করি যার মালিক সর্বদা গিনার ক্যাসেট শোনে। তাই এ কারণে অনেক সময় আমি তা শুনতে বাধ্য হই। তাই তা শোনা আমার জন্য জায়েয হবে কি?

উত্তর : ক্যাসেটে যদি গিনা অথবা অশালীন-অনৈতিক স্ফূর্তি ও আমোদ-প্রমোদের আসরোপযোগী ইন্দ্রিয় সুখানুভূতি দানকারী বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত থাকে তাহলে তা মনোযোগ দিয়ে শোনা জায়েয হবে না। তবে আপনি যদি উপরোক্ত কর্মস্থলে উপস্থিত হতে বাধ্য হন তাহলে সেখানে যাওয়া এবং কাজে মশগুল হওয়ায় কোন অসুবিধা নেই। আর ঐ সব গিনা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ না করা আপনার ওপর ওয়াজিব হবে যদিও তা আপনার কর্ণে এসে পৌঁছায় এবং আপনি তা শুনেও থাকেন।

প্রশ্ন ১৫ : যে সব বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রেডিও ও টেলিভিশন কর্তৃক সম্প্রচারিত হয় সেগুলোর শারয়ী বিধান কি? আর এটি কি ঠিক যে,হযরত ইমাম খোমেইনী নিরঙ্কুশভাবে সব ধরনের বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত বৈধ বলে ফতোয়া দিয়েছেন?

উত্তর : নিরঙ্কুশভাবে সব ধরনের বাদ্য ও যন্ত্রসংগীতের জায়েয হওয়া সংক্রান্ত ফতোয়া ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর সাথে সম্পর্কিত করা আসলে তাঁর প্রতি স্পষ্ট মিথ্যাচার ও অপবাদ আরোপ। কারণ তিনি অশালীন-অনৈতিক স্ফূর্তি ও আমোদ-প্রমোদের আসরোপযোগী ইন্দ্রিয় সুখানুভূতি দানকারী বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত হারাম বলে গণ্য করতেন আর আমাদের দৃষ্টিতেও তা হারাম। তবে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যকার পার্থক্য ও ভিন্নতা বিষয়বস্তু (কোন্ বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত হারাম ও কোনটি হালাল তা) নির্ধারণ ও চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া হতে উদ্ভূত। কারণ বিষয়বস্তু চিহ্নিতকরণ ও নির্ধারণ প্রক্রিয়া মুকাল্লাফ ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিমতের ওপর ন্যস্ত। তাই ক্ষেত্রবিশেষে বাদ্যযন্ত্র বাদক ও শ্রোতার দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিমতের মধ্যে পার্থক্য হতে পারে। মুকাল্লাফ যে বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত অশালীন স্ফূর্তি আমোদ-প্রমোদ ও পাপাচারের আসরের উপযোগী ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী বাদ্য ও যন্ত্রসংগীতের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করবে তা তার জন্য মনোযোগ ও একাগ্রতা সহকারে শ্রবণ করা হারাম হবে। কিন্তু যে সব সুর ও ধ্বনি হালাল না হারাম-এ ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে সেগুলো হালাল বলে গণ্য। আর নিছক ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রেডিও ও টেলিভিশন কর্তৃক সম্প্রচার হালাল হওয়ার শারয়ী দলিল নয়।

প্রশ্ন ১৬ : আমার কাছে কখনো কখনো ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রেডিও ও টেলিভিশন কর্তৃক সম্প্রচারিত যন্ত্রসংগীতের কিছু কিছু সুর অশালীন আমোদ-প্রমোদ ও পাপাচারের আসরোপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই এমতাবস্থায় তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ থেকে আমার নিজের বিরত থাকা এবং অন্যদেরও তা শ্রবণ করা থেকে বিরত রাখা কি ওয়াজিব?

উত্তর : যদি আপনি দেখতে পান,ঐ সব যন্ত্রসংগীত এক ধরনের অশালীন আমোদ-প্রমোদের আসরোপযোগী ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত তাহলে তা মনোযোগ ও একাগ্রতা সহকারে শ্রবণ করা জায়েয হবে না। তবে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ হিসেবে অন্যদের তা মনোযোগ সহকারে শুনতে নিষেধ করা একটি বিষয় প্রমাণিত হওয়ার ওপর নির্ভরশীল;আর তা হলো যে,এ সব বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত যে একধরনের হারাম বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত-এতৎসংক্রান্ত আপনার অভিমতের সাথে তারাও অভিন্ন ও একই অভিমত পোষণ করবে।

প্রশ্ন ১৭ : পাশ্চাত্যের দেশসমূহে তৈরিকৃত অশালীন গিনা ও যন্ত্রসংগীত মনোযোগ ও একাগ্রতা সহকারে শ্রবণ,বিতরণ ও বাজারজাতকরণের শারয়ী বিধান কি হবে?

উত্তর : যে সকল গীত অশালীন (অনৈতিক) স্ফূর্তি ও আমোদ-প্রমোদের আসরোপযোগী ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত সেগুলো একাগ্রতা ও মনোযোগসহ শ্রবণ এবং ব্যবহার করা অবৈধ আর এগুলোর ভাষা ও উৎপাদনকারী দেশসমূহের মধ্যে কোন পার্থক্য ও ভিন্নতা নেই। তাই এ ধরনের ক্যাসেটসমূহে যদি ‘গিনা’ এবং অবৈধ-অশালীন বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত থাকে তাহলে এগুলো কেনা-বেচা,বিতরণ এবং একাগ্রতা ও মনোযোগসহ শ্রবণ করা জায়েয হবে না।

প্রশ্ন ১৮ : পুরুষ ও মহিলা কণ্ঠে গাওয়া ‘গিনা’র হুকুম কি হবে,চাই তা ক্যাসেটে বা রেডিও কর্তৃক বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত সহ বা বাদ্য ও যন্ত্রসংগীতবিহীন পরিবেশিত হোক না কেন?

উত্তর : গিনা শরীয়তের বিধানুযায়ী নিরঙ্কুশভাবে হারাম। তাই তা গাওয়া এবং মনোযোগ ও একাগ্রতাসহ শ্রবণ করা জায়েয হবে না চাই তা পুরুষ কণ্ঠে অথবা নারী কণ্ঠে,সরাসরি অথবা ক্যাসেটে এবং অনৈতিক জলসা ও আসরের উপযোগী বাদ্যযন্ত্রসহ পরিবেশিত হোক অথবা তা বাদ্যযন্ত্রবিহীন পরিবেশিত হোক না কেন।

প্রশ্ন ১৯ : মসজিদের মত পবিত্র স্থানে বৈধ যুক্তিসংগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত বাজানোর বিধান কি?

উত্তর : এমন কি মসজিদ ছাড়া অন্য স্থানেও অনৈতিক আমোদ-প্রমোদ,খেল-তামাসা ক্রীড়া-কৌতুক,পাপাচারের জলসা ও আসরোপযোগী ইন্দ্রিয়ানন্দ ও সুখানুভূতি দানকারী বাদ্য বাজানো নিরঙ্কুশভাবে জায়েয নয়। আর বৈধ যুক্তিসংগত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে যদি বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত বাজানো হয় তবে যে সব উপলক্ষে বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত সহকারে বিপ্লবী ও এতসদৃশ সংগীত (রণসংগীত,দেশাত্মবোধক গান ও ধর্মীয় সংগীত) পরিবেশন করা হয় সে সব উপলক্ষে ঐ সব বিপ্লবী ও এতদসদৃশ সংগীত কোন পবিত্র স্থানে পরিবেশন করতে কোন বাধা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত আছে;আর তা হচ্ছে ঐ সংগীতগুলো উক্ত পবিত্র স্থানের সম্মান ও মর্যাদার পরিপন্থী (না হওয়া) এবং মসজিদের মত জায়গায় (সংগীত পরিবেশনের কারণে) মুসল্লীদের জন্য অসুবিধা ও বিঘ্ন সৃষ্টি না হওয়া ।

প্রশ্ন ২০ : যন্ত্রসংগীত এবং বিশেষ করে সেতার শেখা কি জায়েয? আর অন্যদের যন্ত্রসংগীত ও বিশেষ করে সেতার শেখার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদানের বিধানই বা কি হবে?

উত্তর : শালীন বৈধ বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত বাজানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারে কোন বাধা নেই যদি তা বিপ্লবী বা ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন অথবা উপকারী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং এর মত আরো বেশ কিছু অনুষ্ঠান পরিচালনা করার জন্যই হয়ে থাকে যেগুলোর বৈধ যৌক্তিক লক্ষ্য আছে। তবে এ সব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোন ক্ষতি,অনিষ্ট ও অকল্যাণ সাধিত না হওয়াই হচ্ছে এ ক্ষেত্রে শর্তস্বরূপ। আর এ কারণেই বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে ও তা শিখাতে কোন আপত্তি ও বাধা নেই। তবে বাদ্য ও যন্ত্রসংগীতের প্রসার এবং বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত নিয়ে শিল্পীদের ব্যস্ত থাকা ও মত্ত হওয়া ইসলামী সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং যুবকদের মধ্যে গান-বাদ্যের প্রসার ও প্রচলন অনুচিত এবং অশোভনীয়। কারণ এতে কোন মঙ্গল নেই।

প্রশ্ন ২১ : সুরেলা ও সুমিষ্ট কণ্ঠে কবিতা ও অন্য কিছু পাঠের ক্ষেত্রে মহিলার কণ্ঠস্বর মনোযোগসহ শ্রবণ করার বিধান কি হবে চাই শ্রবণকারী যুবক বা বৃদ্ধ অথবা পুরুষ বা মহিলা হোক না কেন? আর আবৃত্তিকারী/গায়িকা মহিলা যদি মাহরাম্ হয় তাহলে এ ক্ষেত্রে শারয়ী বিধান কি হবে?

উত্তর : মহিলা কণ্ঠস্বর যদি গিনার বৈশিষ্ট্যসম্বলিত না হয়,যৌন সুখানুভূতি লাভ ও ভোগের লিপ্সায় (قصد التلذذ و الريبة) তা শ্রবণ করা না হয় এবং এতে করে অন্য কোন অকল্যাণ,ক্ষতি ও অপকার সাধিত না হয় তাহলে এ ক্ষেত্রে (মহিলা কণ্ঠস্বর শোনার ক্ষেত্রে) নিরঙ্কুশভাবে আপত্তি ও অসুবিধা নেই।

প্রশ্ন ২২ : ঐতিহ্যবাহী জাতীয় ইরানী বাদ্য ও যন্ত্রসংগীত কি হারাম?

উত্তর : যে বাদ্য ও সংগীত অনৈতিক আমোদ-প্রমোদ ও পাপাচারের আসরোপযোগী অসার (অশোভন) বাদ্য ও সংগীত বলে গণ্য হবে তা সর্বতোভাবে হারাম। আর এ ক্ষেত্রে ইরানী অ-ইরানী,ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক বাদ্য ও সংগীতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

প্রশ্ন ২৩ : বাদ্য ও সংগীতের উৎসমূল ও শিকড় ইসলাম ধর্মের গভীরে সুপ্রোথিত রয়েছে এবং বাদ্য ও সংগীতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছানো যায় (ইরফানী বা অধ্যাত্মবাদী মরমী বাদ্য ও সংগীত)-এ কথা বলা কি ঠিক?

উত্তর : বাদ্য ও সংগীত মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে উপনীত হওয়া,অস্তিত্বজগতের বিরাটত্ব ও মহিমা এবং মহান স্রষ্টার পরিচিতি ও জ্ঞান লাভ করার কোন মাধ্যম ও পদ্ধতি হতে পারে না। আর উপরোল্লিখিত বিষয়াদি বাদ্য ও সংগীতের মাধ্যমে অর্জিতও হয় না। আর এ ছাড়াও গান-বাজনার প্রসার ও প্রচলন এবং এ ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান ও ব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি ইসলামী সরকারের সুমহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের সাথে মোটেও খাপ খায় না।

চলবে....

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

কোরআনের ঐতিহাসিক অলৌকিকতা
শিয়া-সূন্নীর মধ্যে পার্থক্য কি?
ইসলামের দৃষ্টিতে কর্ম ও শ্রম (২য় ...
মানুষ তার কর্মের ব্যাপারে ...
শীয়া মাযহাবের উৎপত্তি ও ...
ঈদুল ফিতর: ইসলামী ঐক্য ও ...
আল কোরআনের অলৌকিকতাঃ পৃথিবী
Apakah manusia dalam perbuatannya memiliki pilihan? Bila benar, sejauh manakah batas ...
শিয়া-সুন্নি বিরোধ কেন? শিয়ারা কি ...
ধর্মে কোন জোর-জুলুম নেই

 
user comment