বাঙ্গালী
Thursday 26th of December 2024
0
نفر 0

ধর্ম নিয়ে তসলিমার আবারো কটাক্ষ

ধর্ম নিয়ে আবারো কটাক্ষ করেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ‘নেই, কিছু নেই’ শিরোনামে তার একটি বই এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এনেছে কাকলী প্রকাশনী।

বার্তা সংস্থা আবনা : ২৮৭টি পৃষ্ঠার বইটিতে ধর্মীয় রীতি নিয়ে কটাক্ষ করা ছাড়াও নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক কথা লিখেছেন তিনি। সেই সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সমালোচনা করা হয়েছে এ বইয়ে।

বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে তার মাকে। মার প্রতি লেখা এক চিঠি দিয়ে বইটি শেষ করা হয়েছে। তার দেশে ফেরা নিয়ে বইয়ের ২৮ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘আমাকে দেশে ঢুকতে দিলে সে যে সরকারই হোক, ধর্মবাদীদের ভোট পাবে না বলে ভয়ে আমাকে ঢুকতে দেয় না। বর্তমান প্রধামন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী সম্পর্কে ১৫৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘বই লেখার অপরাধে আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলাই অনেক মৌলবাদী করেছে। কিন্তু হুলিয়া জারি হয়নি খালেদা সরকারের করা মামলা ছাড়া। অন্যদিকে সরকার ছাড়া অন্য কারো রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা রুজুর এখতিয়ার না থাকলেও বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে মৌলবাদীরা আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করে। শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়ে ওই মামলা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ দেশে আমাকে বাস করতে দেবে না। বুঝি না, ক্ষমতায় এলেই এরা দেশটাকে নিজের সম্পত্তি বলে মনে করেন। দেখো মা, মানুষ খালেদা জিয়ার শাসনে এবং শোষণে অতিষ্ঠ হয়ে শেখ হাসিনাকে চাইছিল। কী পার্থক্য হাসিনা আর খালেদার। তাদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে, একজন আরেকজনের দুই চোখের বিষ হতে পারেন, নিরবধি চুলোচুলি করতে পারেন, একজনের পান থেকে চুন খসলে আরেকজন লাফিয়ে উঠে আরেকজনের গলা টিপে ধরতে পারেন, কিন্তু আমার ব্যাপারে তারা একশভাগ একমত। ৯৪ পৃষ্ঠায় আরো লেখা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ড. কামাল হোসেন আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন, সুতরাং দেশের আশা আমার না করাই উচিত।’ সৈয়দ শামসুল হক সম্পর্কে ২৭৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘দ্বিখ-ন্ডিত লেখার জন্য সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশে আমার বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন। তার রাগ, তার শালীর সঙ্গে তার গোপন সম্পর্ক ফাঁস হয়ে গেছে।’ বইয়ের ২৭৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘...মূর্খরা ধর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে পণ করেছে। মূর্খ যতদিন থাকবে পৃথিবীতে, ততদিন ধর্ম থাকবে।’ বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘..কিন্তু আমি তো ভেতরে ভেতরে জানি, কোনো বেহেস্তে বা দোযখে তুমি বা আমি কেউ যাবো না।’ তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ৩২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘আমার আর সুয়েনসনের শোওয়ার ঘর একই। আমরা এক বিছানায় শুই। তোমাকে এত যে রক্ষণশীল বলে ধমক দিই, তুমি কিন্তু একবারও প্রশ্ন করোনি ওর সঙ্গে আমি শুই কেন। যে সম্পর্ক হলে শুতে হয়, সম্ভবত সম্পর্কটা সেই সম্পর্ক, তুমি ভেবে নাও’। তার মায়ের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে ২৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ছোটদাই বললো তুমি উমরাহ করে এসেছো। উমরাহ। ছি ছি। এ নিয়ে চললো আমার ছিছিকার। কেন উমরাহ করতে গেলে? এ কোনো কাজের কাজ।’ ৪১ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘তোমার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে সারাক্ষণ কটাক্ষ করতাম। মা তুমি কেন নামাজ পড়ো, কেন আল্লাহ বিশ্বাস করো? আল্লাহ বলে কোথাও কিছু নেই। ধরো, এত যে নামাজ রোজা করলে, গিয়ে যদি দেখ হাশরের ময়দান নেই, আখেরাত নেই, কোনো পুলসেরাত নেই?’ ৪২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘তোমার ধর্ম বিশ্বাসকে, তোমার বোরখা পরাকে, তোমার ওই কোরান-হাদিস পড়াকে, তসবিহ জপাকে সেই ছোটবেলা থেকেই ঘৃণা করতাম।’ ধার্মিক ও মৌলবাদ নিয়ে ৪৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘আমি তো ধার্মিক আর মৌলবাদীতে পার্থক্য করিনা, তুমি করো।’ কোরআন পাঠ নিয়ে ৯৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘..তোমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে সেই ছোটবেলায় পড়া সুরাগুলো আওড়েছি, ভুলগুলো তুমি শুদ্ধ করে দিতে, হয়তো খুশি হতে দেখে যে, কাজটা আমাকে একসময় তুমি করতে বলতে, করিনি, আর আজ আমি স্বেচ্ছায় তা করেছি। তোমার চুল পাখার হাওয়ায় উড়তো আর তোমাকে কী যে পরিতৃপ্ত মনে হত। পরে আমি লক্ষ্য করে দেখেছি, এমন কী তোমার প্রিয় কোনো সিনেমার গান গাইলেও তুমি একই রকম খুশি হও।’ মায়ের মৃত্যু সম্পর্কে ১৪৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘তোমার মরে যাওয়া, ওদের ছুটোছুটি, মাইকের ঘোষণা, কাফনের কাপড় কেনা, মাটি খোঁড়া, তোমাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া, পুঁতে দেওয়া, অন্ধকারে, গর্তে তোমাকে একা ফেলে আসা- সবকিছুকেই চরম নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।’ ১৩৮ পৃষ্ঠায় পরকাল নিয়ে লেখা হয়েছে, ‘এখন তুমি ওপরে যাচ্ছো, ওপরে তুমি আল্লাহর কাছে তাদের বেহেস্তের জন্য তদবির করবে, তাদের সালাম পৌঁছে দেবে পয়গম্বরকে। স্বনজপ্রীতিটা ভালো চলে পরকালে, তাই তোমার কাছে ধর্না দেওয়া।’ মার চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে ১৫৩ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘...তসলিমার ফাঁসি যারা চেয়েছে, তারা ইসলামের কিছুই জানেনা। তারা মুসলমান নামের কলঙ্ক। একজন সংবেদনশীল সৎ লেখককে আজ বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে। আর দেশের ভেতর ইসলামের নামে যে অসহিষ্ণু মোল্লাতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তারাই ইসলামের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি করছে।’ ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ১৭১ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ওয়াইন খেয়ে অনেক রাতে যখন বন্ধুরা চলে যাচ্ছে, আমার দ্বিগুণ বয়সী একজন বিদায় আলিঙ্গন করার নামে অযথাই আমার স্তন টিপে গেল। কী সুখ পেল কে জানে।’ ভারতে তার আত্মজীবনী নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে ২০২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘..যে কয়েকজন বুদ্ধিজীবী আমার বই নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, তার মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অন্যতম। ভারতের রাজনৈতিক দল বিজিপি নিয়ে ২০৩ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘মুসলমান মৌলবাদীদের অন্যায় আব্দার অন্য দলের মতো বিজিপিও মেনে নেয়।’ উল্লেখ্য, তসলিমা নাসরিন ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হন। তসলিমা নাসরিনের লেখা লজ্জা, আমার মেয়েবেলা, উতল হাওয়া, ‘ক’ এবং সেইসব অন্ধকার এর আগে বাংলাদেশ সরকার নিষিদ্ধ করেছে।#দেশীবার্তা

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

হযরত ইমাম মুসা কাযিম (আ.)'র ...
সমাজ কল্যাণে আল-কুরআনের ভূমিকা
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
প্রকৃতি ও মানুষের সত্তায় পরকালীন ...
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত-পূর্ব ...
১৯ রমজান হযরত আলী (আ.) শত্রু কর্তৃক ...
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন (আ.)'র ...
সূরা আ'রাফ;(২৫তম পর্ব)
দুঃখ-কষ্ট মোকাবেলার উপায়

 
user comment