বাঙ্গালী
Friday 27th of December 2024
0
نفر 0

দাসত্ব-উবুদিয়্যাহ

আচরণের মূলে চারটি ভাগ রয়েছেঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে আচরণ, নিজের সাথে আচরণ, সৃষ্টির সাথে (যেমন, জনগণ) আচরণ এবং এই পৃথিবীর সাথে আচরণ। এর প্রত্যেকটি আবার সাতটি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, ঠিক যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে আচরণের সাতটি নীতি রয়েছেঃ তাঁকে তাঁর প্রাপ্য দেয়া, তাঁর (আদেশ নিষেধের) সীমানা রক্ষা করা, তাঁর নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা, তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা, তাঁর পরীক্ষায় ধৈর্যশীল হওয়া, তাঁর পবিত্রতার তাসবীহ করা এবং তাঁকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা।
নিজের সাথে আচরণের সাaতটি নীতি হচ্ছেঃ ভয়, সংগ্রাম, ক্ষতি সহ্য করা, আধ্যাত্মিক শৃংখলা, সত্যবাদীতা ও ইখলাস (আন্তরিকত্য) সন্ধান করা, নফস যা ভালোবাসে তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা এবং একে দারিদ্রের (ফাকর) সাথে বেঁধে ফেলা।
সৃষ্টির সাথে আচরণেআচরণের মূলে চারটি ভাগ রয়েছেঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে আচরণ, নিজের সাথে আচরণ, সৃষ্টির সাথে (যেমন, জনগণ) আচরণ এবং এই পৃথিবীর সাথে আচরণ। এর প্রত্যেকটি আবার সাতটি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, ঠিক যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে আচরণের সাতটি নীতি রয়েছেঃ তাঁকে তাঁর প্রাপ্য দেয়া, তাঁর (আদেশ নিষেধের) সীমানা রক্ষা করা, তাঁর নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা, তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা, তাঁর পরীক্ষায় ধৈর্যশীল হওয়া, তাঁর পবিত্রতার তাসবীহ করা এবং তাঁকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা।
নিজের সাথে আচরণের সাতটি নীতি হচ্ছেঃ ভয়, সংগ্রাম, ক্ষতি সহ্য করা, আধ্যাত্মিক শৃংখলা, সত্যবাদীতা ও ইখলাস (আন্তরিকত্য) সন্ধান করা, নফস যা ভালোবাসে তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা এবং একে দারিদ্রের (ফাকর) সাথে বেঁধে ফেলা।
সৃষ্টির সাথে আচরণের সাতটি নীতি হলোঃ ক্ষমাশীলতা, বিনয়, উদারতা, দয়ামায়া, সৎ উপদেশ, ন্যায়বিচার ও সাম্যতা।
এ পৃথিবীর সাথে আচরণের সাতটি নীতি হচ্ছেঃ হাতে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা, যা নেই তার চাইতে যা আছে তাকে অগ্রাধিকার দেয়া, যা ধরা দেয় না তা পাওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করা, অতিরিক্ত প্রাচুর্য ঘৃণা করা, অল্পতে তুষ্টি বেছে নেয়া, এ পৃথিবীর খারাপকে জানা এবং তা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে পরিত্যাগ করা এবং এর আধিপত্যকে অগ্রাহ্য করা।
যখন এই সবগুলো গুণাবলী কোন ব্যক্তির মাঝে পাওয়া যায় তাহলে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উচ্চস্থানীয় ও তাঁর ঘনিষ্ট দাস এবং বন্ধুদের (আউলিয়া) একজন।
দাসত্বের বিষয়ে আরো কিছু কথা
দাসত্ব হলো সারবস্ত্ত, যার অর্ন্তনিহিত প্রকৃতি হচ্ছে প্রভুত্ব (রুবুবিয়াহ)। দাসত্বে যা অনুপস্থিত তা প্রভুত্বে পাওয়া যায় এবং যা প্রভুত্ব থেকে পর্দার আড়ালে থাকে তা দাসত্বে পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ ۗ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ ٥٣
‘‘আমরা শীঘ্রই তাদেরকে দেখাবো আমাদের নিদর্শনগুলো দিগন্তে এবং তাদের সত্তার ভিতরে । ঐক্ষণ পর্যন্ত যখন তাদের কাছে তা পরিস্কার হয়ে যাবে যে তা সত্য। তোমার রবের বিষয়ে এটি কি যথেষ্ট নয় যে তিনি সব কিছুর উপরে সাক্ষী?'' (৪১: ৫৩)
এর অর্থ তিনি অস্তিত্ববান তোমার অনুপস্থিতিতে এবং তোমার উপস্থিতিতেও। দাসত্ব অর্থ নিজেকে সবকিছু থেকে মুক্ত করে ফেলা এবং তা অর্জনের পথ হচ্ছে নিজের সত্তা যা পেতে চায় তা তাকে দিতে অস্বীকার করা এবং তা যা অপছন্দ করে তা তাকে বহন করতে বাধ্য করা। এর চাবি হচ্ছে বিশ্রাম পরিত্যাগ করা। একাকীত্বকে ভালোবাসা এবং ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে প্রয়োজন'' এই স্বীকৃতির পথকে অনুসরণ করা।
পবিত্র নবী (তাঁর ও তার পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদাত করো যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। এমনকি যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তিনি তোমাকে দেখছেন।''
عبد (আব্দ বা দাস) শব্দটিতে তিনটি অক্ষর আছেঃ ع, ب, ও د । ع হচ্ছে علم (ইলম) বা আল্লাহ সম্পর্কে একজনের জ্ঞান এবং ب হচ্ছে بون যার অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু থেকে কোন ব্যক্তির দূরত্ব এবং د হচ্ছে دنو (দুনু) বা আল্লাহর সাথে ব্যক্তির নৈকট্য, কোন গুণাবলী ও পর্দার বাঁধা ছাড়া।
আচরণের মূলনীতি চারটি, যেভাবে আমরা এ অধ্যায়ের শুরুতে বলেছি।
দৃষ্টি নামিয়ে রাখার বিষয়ে
ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখবে- এর চেয়ে লাভজনক আর কিছু নেই, কারণ দৃষ্টি সে বিষয়ের উপর থেকে নিজেকে নামিয়ে রাখেনা যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হারাম করেছেন, যদি না ইতিমধ্যেই (আল্লাহর) মর্যাদা ও গৌরব ‘প্রত্যক্ষ করা' তার অন্তরে উপস্থিত হয়েছে। বিশ্বাসীদের আমীরকে (ইমাম আলী-আঃ) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলোঃ কী দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখতে সাহায্য করে? তিনি বলেছিলেনঃ ‘‘তাঁর শক্তির কাছে আত্মসমর্পন করা যিনি তোমার গোপন বিষয় জানেন। চোখ হচ্ছে অন্তরের গুপ্তচর এবং বুদ্ধির দূত; তাই তোমার দৃষ্টিকে তা থেকে নামিয়ে রাখো যা তোমার বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যা তোমার অন্তর অপছন্দ করে এবং যা তোমার বুদ্ধির কাছে ঘৃন্য মনে হয়।''
পবিত্র নবী (তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের চোখকে নামিয়ে রাখো- তোমরা বিষ্ময়কর জিনিস দেখবে।''
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ
‘‘বিশ্বাসীদের বলো যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাযত করে।'' (২৪:৩০)
ঈসা (আঃ) তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেনঃ ‘‘নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে তাকানো থেকে সতর্ক হও, কারণ তা আকাঙ্ক্ষার বীজ এবং তা পথভ্রষ্ট আচরণের দিকে নিয়ে যায়।''
ইয়াহইয়া (আঃ) বলেছেনঃ ‘‘আমি অপ্রয়োজনীয় দৃষ্টিপাতের চাইতে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করি।''
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন যে এক অসুস্থ মহিলাকে দেখতে গিয়েছিলোঃ ‘‘অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার চাইতে তোমার চোখ দু'টো হারানো উচিত ছিলো।''
যখনই চোখ কোন নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে তাকায়, আকাঙ্ক্ষার একটি গিট সে ব্যক্তির অন্তরে বেঁধে যায় এবং সেই গিট খুলবে শুধু দুই শর্তেঃ হয় প্রকৃত তওবায় সে দুঃখে কাঁদবে অথবা যে দিকে সে তাকিয়েছিলো এবং যার আকাঙ্ক্ষা করেছিলো তার দখল নিবে। আর যদি কোন ব্যক্তি তার দখল নেয় অন্যায়ভাবে, তওবা ছাড়া, তাহলে তা তাকে আগুনে (জাহান্নামে) নিয়ে যাবে।
আর যে ব্যক্তি দুঃখ ও অনুতাপের সাথে তওবা করে, তার বাসস্থান হচ্ছে জান্নাতে এবং তার গন্তব্য হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অনুগ্রহ।
হাঁটার বিষয়ে
যদি তুমি বুদ্ধিমান হয়ে থাকো তাহলে যে কোন স্থান থেকে রওনা দেয়ার আগে তোমার উচিত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া এবং সৎ নিয়ত রাখা, কারণ সত্তার প্রকৃতি হচ্ছে সীমালংঘন করা এবং নিষিদ্ধ জিনিসে অবৈধ হাত প্রসারিত করা। যখন তুমি হাঁটো তখন তোমার উচিত গভীরভাবে ভাবা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিস্ময়কর কাজগুলো লক্ষ্য করা- যেখানেই তুমি যাও। টিটকারী করো না অথবা দম্ভভরে হেঁটো না যখন হাঁটো; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ
‘‘ গর্বভরে যমীনে হাঁটাচলা করো না ।'' (৩১: ১৮)
তোমার চোখ নামিয়ে রাখো তা থেকে যা তোমার বিশ্বাসের প্রতি সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে বার বার স্বরণ করো। একটি হাদীস রয়েছে যে, যেসব স্থানে এবং যার সাথে আল্লাহর স্মরণ-এর সম্পর্ক আছে সেগুলো বিচার দিনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে সাক্ষ্য দিবে এবং সেসব মানুষের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেন।
পথ চলার সময় লোকজনের সাথে অতিরিক্ত কথা বলো না, কারণ তা বাজে আচরণ। বেশীরভাগ রাস্তা হচ্ছে শয়তানের ফাঁদ ও বাজার , তাই তার ধোঁকা থেকে নিজেকে নিরাপদ ভেবো না। তোমার আসা ও যাওয়াকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্য বানাও - তাঁর সন্তুষ্টির জন্য সংগ্রাম করে, কারণ তোমার সব চলাফেরা বইতে লিপিবদ্ধ হবে। যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿٢٤﴾
‘‘সেদিন তাদের জিহবা এবং তাদের হাতগুলো ও পাগুলো সাক্ষী দিবে তাদের বিরুদ্ধে- তারা যা করেছিলো সে সম্পর্কে।'' (২৪:২৪)
وَكُلَّ إِنسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ ۖ
‘‘আমরা প্রত্যেক ব্যক্তির কর্মকে তার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দেই।'' (১৭:১৩)

 

সাতটি নীতি হলোঃ ক্ষমাশীলতা, বিনয়, উদারতা, দয়ামায়া, সৎ উপদেশ, ন্যায়বিচার ও সাম্যতা।
এ পৃথিবীর সাথে আচরণের সাতটি নীতি হচ্ছেঃ হাতে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা, যা নেই তার চাইতে যা আছে তাকে অগ্রাধিকার দেয়া, যা ধরা দেয় না তা পাওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করা, অতিরিক্ত প্রাচুর্য ঘৃণা করা, অল্পতে তুষ্টি বেছে নেয়া, এ পৃথিবীর খারাপকে জানা এবং তা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে পরিত্যাগ করা এবং এর আধিপত্যকে অগ্রাহ্য করা।
যখন এই সবগুলো গুণাবলী কোন ব্যক্তির মাঝে পাওয়া যায় তাহলে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উচ্চস্থানীয় ও তাঁর ঘনিষ্ট দাস এবং বন্ধুদের (আউলিয়া) একজন।
দাসত্বের বিষয়ে আরো কিছু কথা
দাসত্ব হলো সারবস্ত্ত, যার অর্ন্তনিহিত প্রকৃতি হচ্ছে প্রভুত্ব (রুবুবিয়াহ)। দাসত্বে যা অনুপস্থিত তা প্রভুত্বে পাওয়া যায় এবং যা প্রভুত্ব থেকে পর্দার আড়ালে থাকে তা দাসত্বে পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ ۗ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ ﴿٥٣﴾
‘‘আমরা শীঘ্রই তাদেরকে দেখাবো আমাদের নিদর্শনগুলো দিগন্তে এবং তাদের সত্তার ভিতরে । ঐক্ষণ পর্যন্ত যখন তাদের কাছে তা পরিস্কার হয়ে যাবে যে তা সত্য। তোমার রবের বিষয়ে এটি কি যথেষ্ট নয় যে তিনি সব কিছুর উপরে সাক্ষী?'' (৪১: ৫৩)
এর অর্থ তিনি অস্তিত্ববান তোমার অনুপস্থিতিতে এবং তোমার উপস্থিতিতেও। দাসত্ব অর্থ নিজেকে সবকিছু থেকে মুক্ত করে ফেলা এবং তা অর্জনের পথ হচ্ছে নিজের সত্তা যা পেতে চায় তা তাকে দিতে অস্বীকার করা এবং তা যা অপছন্দ করে তা তাকে বহন করতে বাধ্য করা। এর চাবি হচ্ছে বিশ্রাম পরিত্যাগ করা। একাকীত্বকে ভালোবাসা এবং ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে প্রয়োজন'' এই স্বীকৃতির পথকে অনুসরণ করা।
পবিত্র নবী (তাঁর ও তার পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদাত করো যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। এমনকি যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তিনি তোমাকে দেখছেন।''
عبد (আব্দ বা দাস) শব্দটিতে তিনটি অক্ষর আছেঃ ع, ب, ও د । ع হচ্ছে علم (ইলম) বা আল্লাহ সম্পর্কে একজনের জ্ঞান এবং ب হচ্ছে بون যার অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু থেকে কোন ব্যক্তির দূরত্ব এবং د হচ্ছে دنو (দুনু) বা আল্লাহর সাথে ব্যক্তির নৈকট্য, কোন গুণাবলী ও পর্দার বাঁধা ছাড়া।
আচরণের মূলনীতি চারটি, যেভাবে আমরা এ অধ্যায়ের শুরুতে বলেছি।
দৃষ্টি নামিয়ে রাখার বিষয়ে
ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখবে- এর চেয়ে লাভজনক আর কিছু নেই, কারণ দৃষ্টি সে বিষয়ের উপর থেকে নিজেকে নামিয়ে রাখেনা যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হারাম করেছেন, যদি না ইতিমধ্যেই (আল্লাহর) মর্যাদা ও গৌরব ‘প্রত্যক্ষ করা' তার অন্তরে উপস্থিত হয়েছে। বিশ্বাসীদের আমীরকে (ইমাম আলী-আঃ) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলোঃ কী দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখতে সাহায্য করে? তিনি বলেছিলেনঃ ‘‘তাঁর শক্তির কাছে আত্মসমর্পন করা যিনি তোমার গোপন বিষয় জানেন। চোখ হচ্ছে অন্তরের গুপ্তচর এবং বুদ্ধির দূত; তাই তোমার দৃষ্টিকে তা থেকে নামিয়ে রাখো যা তোমার বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যা তোমার অন্তর অপছন্দ করে এবং যা তোমার বুদ্ধির কাছে ঘৃন্য মনে হয়।''
পবিত্র নবী (তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের চোখকে নামিয়ে রাখো- তোমরা বিষ্ময়কর জিনিস দেখবে।''
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ
‘‘বিশ্বাসীদের বলো যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাযত করে।'' (২৪:৩০)
ঈসা (আঃ) তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেনঃ ‘‘নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে তাকানো থেকে সতর্ক হও, কারণ তা আকাঙ্ক্ষার বীজ এবং তা পথভ্রষ্ট আচরণের দিকে নিয়ে যায়।''
ইয়াহইয়া (আঃ) বলেছেনঃ ‘‘আমি অপ্রয়োজনীয় দৃষ্টিপাতের চাইতে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করি।''
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন যে এক অসুস্থ মহিলাকে দেখতে গিয়েছিলোঃ ‘‘অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার চাইতে তোমার চোখ দু'টো হারানো উচিত ছিলো।''
যখনই চোখ কোন নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে তাকায়, আকাঙ্ক্ষার একটি গিট সে ব্যক্তির অন্তরে বেঁধে যায় এবং সেই গিট খুলবে শুধু দুই শর্তেঃ হয় প্রকৃত তওবায় সে দুঃখে কাঁদবে অথবা যে দিকে সে তাকিয়েছিলো এবং যার আকাঙ্ক্ষা করেছিলো তার দখল নিবে। আর যদি কোন ব্যক্তি তার দখল নেয় অন্যায়ভাবে, তওবা ছাড়া, তাহলে তা তাকে আগুনে (জাহান্নামে) নিয়ে যাবে।
আর যে ব্যক্তি দুঃখ ও অনুতাপের সাথে তওবা করে, তার বাসস্থান হচ্ছে জান্নাতে এবং তার গন্তব্য হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অনুগ্রহ।
হাঁটার বিষয়ে
যদি তুমি বুদ্ধিমান হয়ে থাকো তাহলে যে কোন স্থান থেকে রওনা দেয়ার আগে তোমার উচিত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া এবং সৎ নিয়ত রাখা, কারণ সত্তার প্রকৃতি হচ্ছে সীমালংঘন করা এবং নিষিদ্ধ জিনিসে অবৈধ হাত প্রসারিত করা। যখন তুমি হাঁটো তখন তোমার উচিত গভীরভাবে ভাবা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিস্ময়কর কাজগুলো লক্ষ্য করা- যেখানেই তুমি যাও। টিটকারী করো না অথবা দম্ভভরে হেঁটো না যখন হাঁটো; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ
‘‘ গর্বভরে যমীনে হাঁটাচলা করো না ।'' (৩১: ১৮)
তোমার চোখ নামিয়ে রাখো তা থেকে যা তোমার বিশ্বাসের প্রতি সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে বার বার স্বরণ করো। একটি হাদীস রয়েছে যে, যেসব স্থানে এবং যার সাথে আল্লাহর স্মরণ-এর সম্পর্ক আছে সেগুলো বিচার দিনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে সাক্ষ্য দিবে এবং সেসব মানুষের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেন।
পথ চলার সময় লোকজনের সাথে অতিরিক্ত কথা বলো না, কারণ তা বাজে আচরণ। বেশীরভাগ রাস্তা হচ্ছে শয়তানের ফাঁদ ও বাজার , তাই তার ধোঁকা থেকে নিজেকে নিরাপদ ভেবো না। তোমার আসা ও যাওয়াকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্য বানাও - তাঁর সন্তুষ্টির জন্য সংগ্রাম করে, কারণ তোমার সব চলাফেরা বইতে লিপিবদ্ধ হবে। যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿٢٤﴾
‘‘সেদিন তাদের জিহবা এবং তাদের হাতগুলো ও পাগুলো সাক্ষী দিবে তাদের বিরুদ্ধে- তারা যা করেছিলো সে সম্পর্কে।'' (২৪:২৪)
وَكُلَّ إِنسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ ۖ
‘‘আমরা প্রত্যেক ব্যক্তির কর্মকে তার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দেই।'' (১৭:১৩)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

সফরে কসর ওয়াজিব
গীবত ও চুগলখোরীর ভয়াবহ পরিণাম
নামাযে সন্দেহসমূহ
মদীনা সনদ
রোজার গুরুত্ব ও উপকারিতা
বায়তুল্লাহ জিয়ারত ও হজ
প্রকৃত রোজা ও সংযমের কিছু ...
হজ্বঃ মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ ...
হজ্ব: বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের সোপ
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক

 
user comment