বাঙ্গালী
Friday 3rd of May 2024
0
نفر 0

রেজা (আ.)'র মাজার জিয়ারতকারীরা বেহেশতবাসী হবেন

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরানের খোরাসানে তাঁর শরীরের একটি অংশকে তথা তাঁর পবিত্র বংশধারার বা আহলে বাইতের একজন সদস্যকে দাফন করা হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন।

 

বলা হয়, যারা এই মহান ইমামের উচ্চ সম্মান সম্পর্কে পরিচিতি বা সমীহ নিয়ে তাঁর পবিত্র মাজার জিয়ারত করবেন তারা বেহেশতের অধিকারী হবেন।

 

প্রায় হাজার বছর আগে লিখিত 'শাওয়াহেদুন্নবুওয়াত' নামক বইয়ে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, যারা ইরানের খোরাসানে অবস্থিত (যার বর্তমান নাম মাশহাদ) ইমাম রেজা (আ.)'র মাজার জিয়ারত করবে তারা বেহেশতবাসী হবে। বিশিষ্ট কবি ও আধ্যাত্মিক সাধক মাওলানা আবদুর রহমান জামির লিখিত এই বইটি বহু বছর আগে বাংলা ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে (মাওলানা মহিউদ্দিনের মাধ্যমে) (পৃ.১৪৩-১৪৪)। [এ বইয়ের ২৭২ পৃষ্ঠায় ইরানের পবিত্র কোম শহরে অবস্থিত হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.)'র পবিত্র মাজার জিয়ারত সম্পর্কেও একই কথা বলা হয়েছে। এই ফাতিমা মাসুমা ছিলেন ইমাম রেজা-আ.'র ছোট বোন। মাসুমা বা নিষ্পাপ ছিল তাঁর উপাধি।]

 

আব্বাসীয় জালিম শাসক হারুনুর রশিদের পর তার দুই পুত্র আমিন ও মামুন ক্ষমতা নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। শেষ পর্যন্ত মামুনের কাছে পরাজিত ও নিহত হয় বড় ভাই আমিন।

 

ধূর্ত খলিফা মামুনুর রশিদ মুসলমানদের মধ্যে বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইতের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত ছিল এবং এর ফলে আব্বাসীয়দের খিলাফত বৈধতা হারাতে পারে বলে তার আশঙ্কা বাড়ছিল। কারণ, নবী(সা.)- বংশের কাছে খিলাফত ফিরিয়ে দেয়ার শ্লোগান তুলে জনপ্রিয় গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে উমাইয়াদেরকে খিলাফতের ক্ষমতা থেকে উতখাত করা হয়েছিল। অথচ আব্বাসীয়রা নবী(সা.)- বংশের কাছে ক্ষমতা না দিয়ে নিজেরাই ক্ষমতা দখল করে। (আব্বাসীয়রা ছিল বিশ্বনবী (সা.)'র চাচা হযরত আব্বাস (রা.)'র বংশধর।) জনগণ আব্বাসীয়দের এই প্রতারণার কথা কখনও ভুলতে পারেনি।


এই প্রেক্ষাপটে খলিফা মামুন মদীনা থেকে হযরত ইমাম রেজা (আ.)-কে তার রাজধানী তথা সুদূর খোরাসানের মার্ভে আসতে বাধ্য করেন। মামুন ২০১ হিজরিতে ইমামের কাছে খেলাফত হস্তান্তর করতে চায় বলেও ঘোষণা করে। কিন্তু ইমামের প্রজ্ঞাপূর্ণ তাতক্ষণিক উত্তর মামুনের চক্রান্ত বানচাল করে দেয়। হযরত ইমাম রেজা (আ.) মামুনকে বললেন: "যদি খিলাফত সত্যিই তোমার অধিকার হয়ে থাকে এবং আল্লাহ তোমাকে তা আমানত হিসেবে দান করে থাকেন তাহলে তা অন্যের কাছে ত্যাগ করা তোমার উচিত হবে না; আর এই খিলাফত যদি তোমার না হয়ে থাকে তাহলে তা তুমি অন্যকে কিভাবে দান করবে যা তোমার নিজের নয়?"


কিন্তু মামুন দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ইমামের ওপর নানা পন্থায় চাপ দেয়া অব্যাহত রাখে এবং এমনকি গোপনে ইমামকে হত্যারও হুমকি দেয়। খিলাফতের পদ গ্রহণ না করলেও ইমাম যেন অন্ততঃ যুবরাজের পদ তথা পরবর্তী খলিফা হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেন সে জন্য চাপ দিতে থাকে মামুন। ফলে মামুন(৩১) ইমামের(৫৩) চেয়ে ২২ বছরের ছোট হওয়া সত্ত্বেও কয়েকটি শর্ত-সাপেক্ষে ওই প্রস্তাব মেনে নেন ইমাম রেজা (আ.)। যেমন, একটি শর্ত ছিল এটা যে, রাজকীয় পদে কারো নিয়োগ বা পদচ্যুতির কাজে ইমামের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। ইমামের এ ধরনের সতর্ক পদক্ষেপের ফলে মামুনের অসত উদ্দেশ্যগুলো বানচাল হয়ে যায় এবং জনগণের মধ্যে ইমামের প্রভাব দিনকে দিন বাড়তেই থাকে। ফলে ইমাম রেজা (আ.)-কে যুবরাজের পদ গ্রহণে বাধ্য করার দুই বছর পর ২০৩ হিজরিতে (আজ থেকে ১২৩২ বছর আগে এই দিনে তথা ৩০ শে সফর) মামুন খাদ্যে বিষ প্রয়োগ করে এই মহান ইমামকে শহীদ করে এবং তার রাজধানী মার্ভ থেকে বাগদাদে ফিরিয়ে আনে।

 

জালিম মামুন ও হারুনদের প্রাসাদ আর কবর ইতিহাসের আস্তাকুড়ে সঞ্চিত নানা জঞ্জালের নিচে অনাদৃত আর পরিত্যাক্ত অবস্থায় হয়ে পড়ে থাকলেও বাগদাদে নাতি ইমাম জাওয়াদ(আ.)'র মাজারসহ ইমাম মুসা কাজিমের (আ.) বিশাল ও সুদৃশ্য মাজার এবং সুদূর প্রবাসে ইরানের উত্তর পূর্বাঞ্চলে পুত্র ইমাম রেজা (আ.)'র ব্যাপক বিস্তৃত মাজারের সুউচ্চ সোনালী গম্বুজ ও মিনারগুলো লক্ষ কোটি মুসলমানের হৃদয়ের প্রধান প্রাসাদ হয়ে আছে ১২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।#

 

রেডিও তেহরান/এএইচ/২

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মসুলের আন-নুরি মসজিদ ধ্বংস করে ...
মাওলানা সাঈদীর আমৃত্যু জেল
শিয়া অধ্যুষিত এলাকায় আত্মঘাতী ...
লাব্বাইক ধ্বনিতে আজ মুখরিত হবে ...
যেকোনো অপতৎপরতার জবাব হবে ভয়াবহ: ...
মাজমা’র অস্ট্রেলীয় সদস্যের ...
পশ্চিমাদের পথে সৌদি: ইয়েমেনে ...
আয়াতুল্লাহ ঈসা কাসিমের ...
২ বছর পর ২১ খ্রিষ্টানের দেহাবশেষ ...
এবার আরব আমিরাতের গোয়েন্দা ড্রোন ...

 
user comment