আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা –আবনা-: ওলামা-মাশায়েখ, আহলে বাইত (আ.) এর বিপুল সংখ্যক ভক্ত ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কালচারাল কাউন্সেলরের উপস্থিতিতে পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের নাসেরপুর এলাকার ‘তাম্বার পুরাহ’ জামে মসজিদ ‘ইমাম হুসাইন (আ.) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘আল্লামা পীর সৈয়দ সাজ্জাদ বাদশাহ’র উদ্যোগে এবং পেশোয়ারে নিযুক্ত ইরানি কালচারাল কান্সেলর ‘আলী ইউসুফি’র সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ইমাম হুসাইন (আ.) এর ব্যক্তিত্বের উপর আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন ‘সৈয়দ এনায়েত শাহ’, ‘মুফতি নিজামুদ্দীন’, ‘মুহাম্মাদ এহসানুল্লাহ জুনাইদি’ ‘সৈয়দ আশেক হুসাইন’, ‘আল্লামা আবেদ হুসাইন শাকেরি’, ‘সৈয়দ উসমান শাহ’, ‘খাজা রহমত করিম’ ও ‘আলী ইউসুফি’।
বিশিষ্ট সুন্নি আলেম সৈয়দ এনায়েত শাহ তার বক্তব্যে বলেন: আহলে বাইত (আ.) হচ্ছেন মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (স.) এর সবচেয়ে আপন। যতক্ষণ পর্যন্ত হযরত আলী (আ.) কাউকে সত্যায়িত না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত সে পুল সিরাত অতিক্রম করতে পারবে না।
মুফতি নিজামুদ্দীন বলেন: মহানবি (স.) বলেছেন, ‘আমার আহলে বাইত (আ.) হচ্ছে নূহ (আ.) এর কিস্তির মত। যারা এতে আরোহন করবে তারা পরিত্রাণ পাবে’।
তিনি বলেন: মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর ভক্ত ও প্রেমিকদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করতে হবে যে, সৌদি সরকার ইসলামের শত্রুদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করছে এবং মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছে। ওয়াহাবি ও নাজদিদের থেকে ইসলাম ধর্ম বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। এ ধরনের বিচ্ছেদ রোধে ইসলামের প্রকৃত প্রমিকদের উচিত রুখে দাঁড়ানো; যেভাবে ইমাম হুসাইন (আ.) আমাদেরকে ইয়াযিদিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও রুখে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়েছেন।
‘আল্লামা মুহাম্মাদ আশেক হুসাইন কাদেরি’ তার বক্তব্যে বলেন: দুঃখজনকভাবে কেউ কেউ এ ধরনের সম্মেলন আয়োজনকে বিদআত বলে জ্ঞান করেন। কিন্তু জেনে রাখুন এ ধরনের সম্মেলন আপনাদের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ এবং এতে অংশগ্রহণকারীরা পরকালীন সওয়াব লাভ করে থাকেন।
কেউ কেউ আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, এরা তথা প্রকৃত আহলুস সুন্নাহ, আলী (আ.) কে মুশকিল কুশা (গোশা) তথা মুশকিল আসানকারী হিসেবে জ্ঞান করে, অথচ সমস্যার সমাধানকারী তো একমাত্র আল্লাহ্।
আমরা হযরত আবু বকরকে ‘সিদ্দীকে আকবার’ বলে থাকি, আবার ‘আল্লাহু আকবার’ও বলি। দ্বিতীয় খলিফাকে ‘ফারুকে আযাম’ আযাম বলি, অথচ মহান আল্লাহ্ হচ্ছেন ‘আযাম’ এবং হযরত উসমানকে ‘গানী’ বলি, অথচ পবিত্র কুরআনে এসেছে ‘আল্লাহু গানিইয়্যুন’। যদি ‘সিদ্দিকে আকবার’, ‘ফারুকে আযাম’ ও ‘উসমান গানী’ বলে মুশরিক ও বিদআতিদের দলভূক্ত না হই, তাহলে কোন দলীলের ভিত্তিতে ‘আলী মুশকিল কুশা’ বলার কারণে আমাদেরকে মুশরিক জ্ঞান করেন?
জামিয়া জুনাইদিয়া গাফুরিয়া মাদ্রাসার কর্মকর্তা ‘আল্লামা এহসানুল্লাহ’ এ সম্মেলনে বলেন: ইমাম হুসাইন (আ.) হচ্ছে ((و فدیناه بذبحٍ عظیم)) –ওয়া ফাদাইনাহু বিযিবহিন আযিম’-আয়াতের তাফসির। এ মহান আত্মত্যাগকে সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটা যেন বৃথা না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। যখন মহানবি (স.) আমাদেরকে তাঁর আহলে বাইত (আ.) এর কিস্তিতে সওয়ার হওয়ার জন্য বলছেন, ‘এর অর্থ হচ্ছে আমার আহলে বাইতের অনুসরণ করো’।
তিনি বলেন: ইমাম হুসাইন (আ) এর অনুসরণের অর্থ হচ্ছে তাঁর ও তাঁর সাথীদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান করা। তিনি নিজের পরিবার ও বন্ধুদেরকে উৎসর্গ করে ইসলামকে রক্ষা করেছেন। এটাতে যেন কেউ কোন আঁচড় দিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
হুজ্জাতুল ইসলাম আবেদ হুসাইন শাকেরি তার বক্তব্যে বলেন: আল্লাহ্, কুরআন, কাবাসহ শিয়া ও সুন্নিদের সকল ইসলামি নিদর্শনই অভিন্ন। উসুলে দ্বীনের ক্ষেত্রে এ দুইয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। বরং ফুরুয়ে দ্বীনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে পরস্পরের সাথে পার্থক্য রাখে। সুন্নি ও শিয়া আলেমরা পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ চান না, বরং যারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পার্থক্যকে বড় করার চেষ্টা করেন তারা ইসলাম ধর্মের কোন উপকারই করেন না। প্রকৃত অর্থে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না; বরং তারা ইসলামের শত্রুদের খপ্পরে পড়ে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রত।
সম্মেলনের সর্বশেষ বক্তা পেশোয়ারে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কাউন্সেলর ‘আলী ইউসুফি’ এ সম্মেলন আয়োজনকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইমাম হুসাইন (আ.) এর সম্পর্কে আল্লামা ইকবাল রচিত কবিতা আবৃত্তি করেন।
প্রসঙ্গত, ‘সৈয়দ সাজ্জাদ বাদশাহ’ কর্তৃক মুসলিম উম্মাহ’র কল্যাণ ও পরকালীন সওয়াবের কামনা করে দোয়ার মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।#
source : abna24