![রোমে ইমাম মাহদি (আ.) এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা (ছবি রোমে ইমাম মাহদি (আ.) এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা (ছবি](https://erfan.ir/system/assets/imgArticle/2017/05/106329_500x312_1442820302912683.jpg)
আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা –আবনা-: দ্বাদশ ইমাম হযরত মাহদি (আ. ফা.) এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ মাহফিল ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের দূতাবাস ভবনে আয়োজিত এ মাহফিল ইতালিতে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত, দূতাবাসের কর্মকর্তা ও আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
হুজ্জাতুল ইসলাম বাদিয়ী এ অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বলেন: মানবজাতির মুক্তির জন্য প্রতিশ্রুত পরিত্রাণদাতার আবির্ভাবের জন্য প্রতিক্ষার বিষয়টির প্রতি মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখে।
তিনি বলেন: শেষ যামানার প্রতি বিশ্বাস, প্রতিশ্রুত পরিত্রাণদাতার আবির্ভাব এবং সকল জুলুম-অত্যাচার সমূলে উৎপাটিত হওয়ার মত বিষয়াদির প্রতি আকিদা ইসলাম, খ্রিষ্টান, ইহুদি ও জরথুস্ত্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন মাযহাব ও ধর্মের মাঝে পরিলক্ষিত।
বিভিন্ন ধর্মে প্রতিশ্রুত পরিত্রাণদাতার আবির্ভাবের বিষয়টি উল্লেখ হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে এ গবেষক বলেন: সকল ধর্মই এ বিশ্বাস রাখে যে, মানুষ যখন নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে একেবারে পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়াবে এবং পৃথিবী অত্যাচার, অনাচার, অজ্ঞতা ও মূর্খতায় ছেয়ে যাবে, তখন এ মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য প্রতিশ্রুত পরিত্রাণদাতার আবির্ভাব ঘটবে।
তিনি বলেন: পরিত্রাণদাতার আগমনের পদ্ধতিসহ তাঁর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে মুসলিম মাযহাবসমূহের মাঝে নগন্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও সকলেই প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদি (আ.) এর আবির্ভাবের প্রতি বিশ্বাস রাখে।
অন্যান্য ধর্মে ইমাম মাহদি (আ.)-এর আগমনের বিষয়টি কিভাবে উত্থাপিত হয়েছে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ইসলাম ধর্মের পাশাপাশি খ্রিষ্টান, ইহুদি এমনকি জরথ্রুস্তদের মাঝেও পরিত্রাণদাতার আবির্ভাবের বিষয়টি একটি সুনিশ্চিত বিষয়। মুসলমানদের আকিদা অনুযায়ী –যা মহানবি (স.) এর হাদীস থেকে উৎসারিত-, ‘পৃথিবী ধ্বংস হতে যদি একদিনও বাকি থাকে তবে ঐ দিনকে মহান আল্লাহ্ এতটাই দীর্ঘায়িত করবেন যে, আমার (মহানবি স.-এর) সন্তান মাহদির আবির্ভাব ঘটবে’। মুসলমানরা পরিত্রাণদাতার আগমনকে সুনিশ্চিত ঘটবে এমন একটি ঘটনা বলে বিশ্বাস করে। খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে যে, শেষ যামানায় আসমান থেকে হযরত ঈসা (আ.) এর নেমে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত। জরথ্রুস্তদের মতে, নিশ্চিতভাবে তৃতীয় সহস্রাব্দী’র শেষে সাওশিয়ান্ট (Saoshyant) –এর আবির্ভাব ঘটবে।
অন্যান্য ধর্মের মাঝে ইমাম মাহদি (আ.) সংশ্লিষ্ট আকিদার বিষয়ে মিল থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন: অধিকাংশ ধর্মের অনুসারীরা এ বিশ্বাসে বিশ্বাসী যে, সমগ্র বিশ্বের উপর তাঁর শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। এমনভাবে যে, সকল জাতি, গোষ্ঠি ও সংস্কৃতির মানুষ পূর্ণ সন্তুষ্টির সাথে পরস্পরের পাশে বসবাস করবে।
খ্রিষ্টানরা ইমাম মাহদি (আ.) এর আবির্ভাবের সময় ও তাঁর ১ হাজার বছরের শাসনকালের বিষয়ে যে আকিদার অধিকারী, যেমন: নগর উন্নয়ন, রুজিতে বরকত বৃদ্ধি পাওয়া, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা, ঈমানের পূর্ণতা, শয়তান ও অত্যাচারীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়া ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য স্বয়ং ইসলামি রেওয়ায়েতেও পরিত্রাণদাতার আবির্ভাবের যুগের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে।
বিশিষ্ট এ গবেষকের সংযোজন: সৎকর্মশীল ও নিপীড়তরা বিশ্বের শাসনভার প্রাপ্ত হবে –এ বিষয়টি অধিকাংশ ধর্মেই আলোচিত হয়েছে। সকলে ঐ দিনের আশায় বুক বেধেছে যেদিন অত্যাচারীদের সকল বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে নিপীড়ত ও বঞ্চিতরা ক্ষমতায় পৌঁছুবে।
এ বিষয়ে শিয়া মাযহাবের আকিদার সাথে অন্যান্য ধর্মের আকিদার পার্থক্যের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন: শিয়ারা বিশ্বাস করে যে, প্রতিশ্রুত পরিত্রাণদাতা জীবিত এবং তাঁর পিতা-মাতা ও তাঁর জন্মস্থানের বিষয়ে পরিপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ধর্মে পরিত্রাণদাতার বিষয়ে তাঁর আবির্ভাবের পূর্বে কোন তথ্য নেই।
হুজ্জাতুল ইসলাম বাদিয়ী তার বক্তব্যের শেষে বলেন: একজন পরিত্রাণদাতা কর্তৃক মানবজাতির মুক্তির আকিদা –পৃথিবীর শেষ সময়ে যাঁর আবির্ভাব ঘটবে- সকল ধর্মের মাঝেই বিদ্যমান। কিন্তু ঐ প্রতিশ্রুত পরিত্রাণদাতা কে, কখন এবং কোথায় তাঁর আবির্ভাব ঘটবে এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাহফিল শেষে ইরানের শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষকদেরকে পুরস্কৃত করা হয়।#